প্রকাশকরা জানিয়েছেন, বৃষ্টি হলেও অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন বেচাকেনা ভালো হয়েছে।
Published : 22 Feb 2024, 10:32 PM
বিকালে যখন আকাশ কালো করে মেঘ জমে, তখনই প্রকাশকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ ব্যস্ত হন পলিথিন দিয়ে বই ঢাকতে।
স্বল্প সময়ের এক পশলা বৃষ্টি মেলায় বড় কোনো ক্ষতি করতে না পারলেও কিছুটা ছন্দপতন ঘটিয়েছে। বৃষ্টির পর মেলায় লোক সমাগমও খুব বেশি হয়নি। তবে যারা এসেছিলেন, তাদের বেশিরভাগই ছিলেন বইয়ের ক্রেতা।
প্রথমা, আগামী, বাতিঘর, প্রতিভা প্রকাশ, অন্যপ্রকাশসহ অন্তত দশটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টলে কথা বলে জানা যায়, এদিন বই বিক্রি বিগত দিনের তুলনায় ভালো হয়েছে।
প্রতিভা প্রকাশের স্বত্ত্বাধিকারী মঈন মুরসালীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃষ্টি সাময়িক সময়ের জন্য হয়েছে। এই বৃষ্টি বড় আকারে হলে অনেকেই হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হত। কিন্তু সেটি হয়নি।
“বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর মেলায় লোকজনও তেমন আসেননি। তবে যারা এসেছেন, তারা বই কিনতেই এসেছেন। নিজেদের পছন্দের বই কিনে দ্রুতই চলে গেছেন। বলা যায়, আড্ডা তেমন জমেনি।”
বৃহস্পতিবার বৃষ্টির পর মেলা ঘুরে দেখা যায়, অনেক স্টল তেরপল এবং পলিথিন দিয়ে বৃষ্টি থেকে সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কেউ কেউ স্টলে প্রদর্শিত বইও ঢেকে দিয়েছেন পলিথিন দিয়ে। কোনো কোনো স্টলের সামনে পানি জমেছিল তখনও।
শিশুদের প্রকাশনী দোলন এর প্রকাশক কামাল মুস্তাফা বলেন, “বৃষ্টির কারণে লোক সমাগম বেশি হয়নি। কারণ বিকাল ৪টার দিকেই আকাশ কালো ছিল। ৫টার দিকে স্বল্প সময়ের বৃষ্টি হয়েছে। এ সময়টাতেই লোকজন মেলায় আসে। বৃষ্টির কারণে অনেকেই মেলায় আসেননি। তবে যারা এসেছেন, তারা বই কিনেছেন।”
এই বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তিও ছড়িয়েছে বলে মনে করেন কামাল।
তিনি বলেন, “একুশে ফেব্রুয়ারিতে লোকজনের উপচেপড়া ভিড়ে ধুলার বিড়ম্বনা ছিল। বৃষ্টিতে ধুলা কমেছে। বৃষ্টির পর যারা মেলায় এসেছেন, তারা বেশ আরামে ঘুরে পছন্দের বই সংগ্রহ করতে পেরেছেন।”
অনেক বইপ্রেমী অনলাইনে পছন্দের বই সংগ্রহ করছেন বলে জানান অনলাইন বুকশপ ‘জলপড়ে ডটকমের’ স্বত্তাধিকারী মাহবুব সেতু।
তিনি বলেন, “প্রতিদিনই আমাদের কাছে বইয়ের অর্ডার আসছে। বৃষ্টির দিনেও অনেকে বই অর্ডার করেছেন।”
বৃহস্পতিবার ছিল বইমেলার ২২তম দিন।
মেলা পরিচালনা কমিটির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, তথ্যকেন্দ্রে নতুন বই জমা পড়েছে ৭৮টি। সব মিলিয়ে নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪০৪টি।
এদিন ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শিহাব সরকার, শিশুসাহিত্যিক তপংকর চক্রবর্তী, গবেষক হোসনে আরা এবং কথাসাহিত্যিক মিলটন রহমান।
অন্যদিকে ‘বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন’ মঞ্চে বিকালে দ্রাবিড় সৈকত রচিত ‘বাংলার চিত্রকলা ইতিহাসের বিভ্রান্তি এবং মনন-মনীষায় ইউরোপমুখিনতার মর্মভেদ’ এবং ‘ফ্রয়েডিয় লিবিডো-তত্ত্ব এবং তান্ত্রিক দেহাত্মবাদ সমীক্ষণ ও তুলনামূলক বিচার’ শীর্ষক দুটো বই নিয়ে আলোচনা হয়।
মূল মঞ্চ
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: আসাদ চৌধুরী’ এবং ‘স্মরণ: জাহিদুল হক’ শীর্ষক আলোচনা।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে মাহমুদা আকতার এবং কামরুল হাসান।
আলোচনায় অংশ নেন দিলারা হাফিজ, বায়তুল্লাহ কাদেরী এবং মনি হায়দার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. মুহম্মদ সামাদ।
অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি নূহ-উল-আলম লেনিন, হাসান হাফিজ, সৌরভ সিকদার, ওবায়েদ আকাশ, মেঘ অদিতি, রুহুল মাহবুব ও বাবুল আনোয়ার।
আবৃত্তি করেন হাসিব বিল্লাহ, মাসুম আজিজুল বাসার, জি এম মোর্শেদ, নাঈমা হোসেন ও অনন্যা রানী সাহা।
এছাড়া ছিল মিলন কান্তি দে’র রচনা ও নির্দেশনায় ‘দেশ অপেরা’র পরিবেশনায় যাত্রাপালা ‘বঙ্গমাতা’।
শুক্রবার যা থাকবে
শুক্রবার বইমেলার ২৩তম দিন। এদিন মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলবে শিশুপ্রহর।
সকাল সাড়ে ১০টায় মূল মঞ্চে রয়েছে অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ।
এখানে স্বাগত ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রধান অতিথি থাকবেন নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।
বিকাল ৪টায় মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: আখতারুজ্জামান ইলিয়াস’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মামুন হুসাইন।
আলোচনায় অংশ নেবেন ওয়াসি আহমেদ এবং জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।