এএমআর ঠেকাতে বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

এএমআর বা এআরের কারণে অনেক ওষুধ অনেক অনুজীবের বিরুদ্ধে আর কার্যকর থাকে না, ফলে সেগুলোর সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়াও কঠিন হয়ে যায়।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2022, 02:54 PM
Updated : 22 Sept 2022, 02:54 PM

‘অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ ভবিষ্যতে যাতে লাখ লাখ প্রাণহানি ঘটাতে না পারে সেজন্য ধারাবাহিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের লেক্সিংটন হোটেলে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স (এএমআর) বিষয়ক এক সভায় এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বা অণুজীব-বিরোধী প্রতিরোধ্যতা (এএমআর) হচ্ছে শরীরে কোনো অনুজীব (সাধারণত ব্যাকটেরিয়া) নির্মূলে প্রয়োগ করা নির্দিষ্ট ওষুধের বিপক্ষে লড়াই করে ওই অনুজীবের টিকে থাকা বা প্রতিরোধক্ষমতা অর্জন করা, যদিও আগে নির্দিষ্ট ওই ওষুধের মাধ্যমেই সেই অণুজীবটিকে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। প্রচলিত অর্থে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা এআর নামেও এটা পরিচিত।

এএমআর বা এআরের কারণে অনেক ওষুধ অনেক অনুজীবের বিরুদ্ধে আর কার্যকর থাকে না, ফলে সেগুলোর সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়াও কঠিন হয়ে যায়, অনেক সময় বিকল্প চিকিৎসাও থাকে না।

শেখ হাসিনা বলেন, “অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স- এএমআর এমন একটি সমস্যা, যা একটি সংকটে পরিণত হতে পারে। এটি বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ প্রাণহানি ঘটাতে পারে। এই পরিস্থিতি প্রতিরোধে আমাদের ধারাবাহিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

“এই বৈশ্বিক নেতৃত্বদানকারী গোষ্ঠী থেকে, বিষয়টিকে সামনে আনার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এটা স্পষ্ট যে আরও বেশি কিছু করা দরকার। (এ বিষয়ে) কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলো ভালভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। (এখন) আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়। ‘এক স্বাস্থ্য’ নীতিতে এগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।”

প্রায় ১৫০টি দেশ এএমআর নিয়ে এরইমধ্যে তাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য অর্থপূর্ণ সহায়তা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতায় এএমআর-কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। (এক্ষেত্রে) ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মাল্টি-পার্টনার ট্রাস্ট ফান্ড একটি গ্রহণযোগ্য উপকরণ হতে পারে।”

আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে এএমআর-এর জন্য একটি শক্তিশালী বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করা দরকার বলেও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।

এএমআর-এর বোঝা কতোখানি তা বুঝতে এবং এর ধাক্কা সামলাতে ‘নজরদারি’ই মূল চাবিকাঠি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ থেকে আমরা ২০১৯ সাল থেকে জিএলএএসএস প্ল্যাটফর্মে রিপোর্ট করছি। (এ বিষয়ে) সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। A patient-centered approach remains critical রোগীকেন্দ্রিক একটি পদ্ধতির গুরুত্ব এখনও অপরিহার্য পর্যায়ে রয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করা যেতে পারে।”

এএমআর প্রতিরোধে নতুন টিকা এবং এর চিকিত্সা নিয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনের অভাব এ বিষয়ে উদ্বেগের একটি প্রধান কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এজন্য বেসরকারি খাতে যথাযথ প্রণোদনা প্রয়োজন। কিছু জটিল প্যাথোজেনের কারণে এএমআর বিকাশের ঝুঁকি রয়ে গেছে। এ বিষয়ে সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণ চোখে পড়ার মতো।”

তিনি বলেন, “এএমআর সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। নভেম্বর মাসে বার্ষিক বিশ্ব সচেতনতা সপ্তাহ এ জন্য একটি উপযুক্ত উপলক্ষ। (এরইমধ্যে) এসডিজির জন্য এএমআর সূচক তৈরি করা হয়েছে।

“এই সূচকগুলোর ওপর নজর দেওয়া হলে তা মানুষের স্বাস্থ্য, পশু স্বাস্থ্য, খাদ্য ব্যবস্থা এবং পরিবেশের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী এএমআর নীতিমালা প্রণয়নে সহায়ক হতে পারে।”

এ বিষয়ে ডব্লিউএইচও, এফএও, ওআইই এবং ইউএনইপি-কে তাদের সম্মিলিত কাজের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এএমআর প্রতিরোধে আরও রাজনৈতিক সদিচ্ছা তৈরি করতেই আজ সকালের এই বৈঠক। আমরা আপনাদের চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গী জানতে এবং উপকৃত হতে চাই।”