উৎসবের আবহে লাল-সবুজের দেশ; চোখ সমৃদ্ধ আগামীর পথে।
Published : 15 Dec 2022, 11:05 PM
রক্ত সাগর পেরিয়ে মুক্ত স্বাধীন দেশে লাল-সবুজের পতাকা সগৌরবে উড়িয়ে বিজয় উদযাপনের মাহেন্দ্রক্ষণ এসেছে আবার।
দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল যে বাংলাদেশ, তার ৫১তম বার্ষিকী উপযাপন হচ্ছে শুক্রবার।
৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন দেশের বহু অর্জনের মধ্যে রয়েছে আরও সমৃদ্ধ আগামী পথে যাওয়ার প্রত্যাশা।
শহীদদের স্মরণ আর বিজয়ের আনন্দ উদযাপনে বিস্তৃত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে জাতীয়ভাবে। উৎসবের আবহে লাল-সবুজের বর্ণিল সাজে সেজেছে দেশ।
দেশবাসীকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
“তাই আসুন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরো বেশি অবদান রাখি, দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরো এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ - মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।”
শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ' প্রতিষ্ঠা হল বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এই অর্জনকে অর্থবহ করতে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সবাইকে জানতে ও জানাতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা পৌঁছে দিবো- বিজয় দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।”
১৯৪৭ সালের অগাস্টে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগের পর বাঙালির নতুন সংগ্রামের সূচনা হয় পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যে স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে তা পূর্ণতা পায়। পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।
বিজয়ের পর ৫১ বছরে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের দিকে যাত্রা করছে বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত করে যারা অপমান করেছিল, সেই তাদের কণ্ঠেই এখন বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা। দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে।
বিদেশিদের ‘ষড়যন্ত্র’ মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি পদ্মা সেতুর চালু করেছে বাংলাদেশ। এই বিজয় দিবসের ১২ দিন পর উদ্বোধনের হচ্ছে মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্প। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাবে আর কিছু দিনের মধ্যে।
সেই অগ্রযাত্রার কথাই বিজয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, “দেশে আজ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজকে পরিপূর্ণতা দানের লক্ষ্যে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১’ সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ঘোষণা করা হয়েছে ‘রূপকল্প ২০৪১’। সরকারের গৃহীত জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির ফলে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রয়েছে।”
করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেইন সংকটের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির ধাক্কা বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
তিনি বলেন, “এ সংকট মোকাবিলায় সরকার সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ, বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদানসহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা এ সংকটও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো ইনশাল্লাহ।”
স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশকে ‘স্বল্পোন্নত’ দেশে উন্নীত করেন, আর আমরা মাতৃভূমিকে ‘উন্নয়নশীল' দেশের কাতারে নিয়ে গেছি। স্বাধীনতার পর বিগত ৫১ বছরে আমাদের যা কিছু অর্জন, তা জাতির পিতা এবং আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হয়েছে।
“আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে, ইনশাল্লাহ।”
বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুত সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ
বিজয় দিবসে রাজধানীজুড়ে যত আয়োজন
বিজয় দিবসে টিভি পর্দায় দেখা যাবে যা যা
স্মরণে-উদযাপনে
জাতীয় পর্যায়ে শুক্রবার ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিতিতে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফুল দেন শহীদ বেদীতে।
বাংলাদেশে অবস্থনরত বিদেশি কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে থাকেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
সূর্যোদয়ের ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। সাড়ে ৭টায় ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে তারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সকাল ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল।
শনিবার বেলা আড়াইটায় বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রা হবে। রোববার বেলা ১১টায় হবে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা। সেখানে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভোরে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। এরপর সকাল ৯টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সকাল ১০টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন দলটির নেতারা।
এরপর বেলা আড়াইটায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয়ের শোভাযাত্রা করবেন নেতা-কর্মীরা।