র্যাব বলছে, গত দুই বছরে ৫২১ জনের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে ওই চক্র, কিন্তু কাউকে বিদেশে পাঠায়নি।
Published : 07 Oct 2022, 04:17 PM
ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক মানবপাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
তাদের কাছ থেকে পাঁচ শতাধিক ভুয়া পাসপোর্ট এবং বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা, চাকরির চুক্তিপত্র, পুলিশের ছাড়পত্র, মেডিকেলের কাগজ, টিকাসনদ উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন সিরাজগঞ্জের কামারগঞ্জের মাহবুব উল হাসান (৫০) ও রাজশাহীর রাজাপাড়ার মাহমুদ করিম (৩৬)। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তার মাহবুব উল হাসান ওই দলের হোতা।
“হাসান ও করিম দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দালালের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে আগ্রহীদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করত। গত দুই বছরে তারা ৫২১টি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে। কিন্তু কাউকেই বিদেশে পাঠায়নি।”
র্যাব কর্মকর্তা আরিফ বলেন, যারা মধ্যেপ্রাচ্যে যেতে চান, তাদের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা এবং ইউরোপ যেতে আগ্রহীদের কাছ থেকে ছয়-সাত লাখ টাকা করে নেওয়া হত। এভাবে বহু দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে তারা ‘কোটি কোটি টাকা’ হাতিয়ে নিয়েছে।
“টাকা যারা দিত, তাদের চাকরির নিয়োগপত্র, মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন কাগজপত্র দেখিয়ে বিদেশ যাত্রার নিশ্চয়তা দিত চক্রটি। কিন্তু সব কাগপপত্রই ছিল ভুয়া।”
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালানোর পরিকল্পনা ছিল হাসানের।
এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করা মাহবুব ১৯৯৩ থেকে ৯৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় বসবাস করে দেশে ফিরে প্রথমে কৃষিকাজ করতেন।
পরে ২০০০ সালেরারাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মধ্যেপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানো শুরু করেন মাহবুব।
২০১৪ সালে ওই এজেন্সির সঙ্গে কাজ বাদ দিয়ে শান্তিনগরেই একটি রিক্রুটিং এজেন্সি খুলে নিজে ব্যবসা শুরু করেন। ওই এজেন্সির কোনো লাইসেন্স নেই বলে র্যাবের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
র্যাব কর্মকর্তা আরিফ বলেন, “এর আগে হাসান ও করিমের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়া অনেকেই কাজ না পেয়ে দেশে ফিরে এসেছে। সেইসব ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দেশে ফিরে আসার জন্য হাসান উল্টো তাদেরই দোষারোপ করে; বলেছে আর কিছুদিন থাকলেই ভালো কাজ জুটত”
অভিযান এ মানবপাচার চক্রটির কাছ থেকে ৫২১টি পাসপোর্ট, বিদেশে চাকরির জন্য ৬৫টি ভুয়া কোর্সের সনদ, ৩০০টি ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট এবং ২২৫টি ভুয়া কোভিড ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেট উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া সৌদি, ইরাক, কুয়েত, দুবাই, রোমানিয়া, কানাডা এবং কম্বোডিয়ায় চাকরির ভুয়া চুক্তিপত্র; ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট, টাকা নেওয়ার তিনটি রেজিস্ট্রার বই; ১৫টি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, রোমানিয়ার জাল ভিসা, জালিয়াতিতে ব্যবহৃত মনিটর, সিপিইউ, কী বোর্ড, মাউস, স্ক্যানার এবং প্রিন্টারও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয় র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে।