আদালত আরও একদিন যুক্তিতর্ক শুনতে চাওয়ায় রোববার রায় ঘোষণা হচ্ছে না বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান।
Published : 25 Jun 2023, 10:05 AM
যুবলীগের কথিত নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমসহ আট জনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার মামলার রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে।
রোববার ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ছিল। কিন্তু এই আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আরও একদিন যুক্তিতর্ক শুনতে চাওয়ায় রায় ঘোষণা হচ্ছে না বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান জানান।
আজাদ রোববার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ রায় হচ্ছে না। অধিকতর যুক্তিতর্ক ও রায়ের দিন ঠিক ছিল আজ। কিন্তু বিচারক আরও একবার যুক্তিতর্ক শুনবেন, যদি আসামিপক্ষ শুনানিতে প্রস্তুত থাকেন। যুক্তিতর্ক শেষে তিনি রায়ের তারিখ দেবেন।“
রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৫ জুন বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম রায় ঘোষণার জন্য ২৫ জুন দিন রেখেছিলেন।
যুক্তিতর্কে আসামিদের ১২ বছরের কারাদণ্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ। আর আসামিপক্ষ বলে, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ ‘প্রমাণ করতে পারেনি’, তাই আসামিদের খালাসের প্রত্যাশা করছেন তারা।
মামলার অন্য আসামিরা সবাই শামীমের দেহরক্ষী। তারা হলেন– দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, সামসাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি আত্মপক্ষ শুনানিতে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ‘ন্যায়বিচার’প্রার্থনা করেন। নয় দিন পর ২৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে, যা শেষ হয় ৬ মার্চ। এরপর ১৫ মার্চ আসামিদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এর আগে অভিযোগপত্রে থাকা ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত।
মামলা বৃত্তান্ত
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে জি কে শামীমের উত্থান হয়। তিনি নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করলেও আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনটি তা অস্বীকার করে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলার সময় ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিকেতনের বাসা থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ভবন থেকে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই, আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানানো হয় অভিযান শেষে।
গ্রেপ্তারের সময় র্যাব সদরদপ্তর, সচিবালয়ে ও কয়েকটি হাসপাতালের নতুন ভবনসহ অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সের হাতে ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। পরে সেগুলোর কার্যাদেশ বাতিল হয়। জব্দ করা হয় তার ১৯৪টি ব্যাংক হিসাব।
২১ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করেন র্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার মিজানুর রহমান।
মামলায় বলা হয়, শামীম তার দেহরক্ষীদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসাসহ স্থানীয় টার্মিনাল, গরুর হাট-বাজারে চাঁদাবাজি করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশেও পাচার করেন তিনি।
তদন্ত শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ২০২০ সালের ৪ অগাস্ট আদালতে জিকে শামীম ও তার সাত দেহ রক্ষীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। সেটি গ্রহণ করে ১০ নভেম্বর বিচার শুরুর আদেশ আসে।
শামীমের বিরুদ্ধে মোট মামলার সংখ্যা তিনটি। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর অস্ত্র আইনে সাত দেহরক্ষী ও তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। মাদক মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি।
আরও পড়ুন
জি কে শামীমের অর্থ পাচার মামলার রায় ২৫ জুন
অস্ত্র মামলায় জি কে শামীম ও দেহরক্ষীদের যাবজ্জীবন
জি কে শামীম ও তার দেহরক্ষীরা অস্ত্র মামলায় অভিযুক্ত