২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।
Published : 14 Oct 2023, 07:55 PM
দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আসার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে শুরু হল শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
শনিবার ভোরে মণ্ডপে-মণ্ডপে চণ্ডীপাঠ, মঙ্গলঘট স্থাপন, ঢাক-কাঁসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে আহ্বান জানান ভক্তরা।
প্রথমে চণ্ডীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। এ সময় মঙ্গলঘট স্থাপন করে তাতে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে করা হয় পূজা।
দেবীপক্ষের শুরু হয় যে অমাবস্যায়, সেদিন হয় মহালয়া। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যা’ রূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসেন ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। এ সময় তার সহধর্মিনীও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, "আজ ভোর ৬টায় প্রতিমার চক্ষুদানের মাঝ দিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণ করেছি। আজ মা পিতৃপক্ষ থেকে মাতৃপক্ষে এলেন।”
মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয় দেবী পক্ষের। এর আগের পক্ষ হল পিতৃপক্ষ। এই পক্ষে ভক্তরা তাদের পূর্বপূরুষের আত্মার প্রীতির জন্য অন্ন-জল নিবেদন করে থাকেন। শাস্ত্রে একে বলা হয় তর্পণ।
সনাতন বিশ্বাস অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোক বা যমলোকে বাস করেন। আর এই পিতৃলোকের অবস্থান স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে।
পিতৃলোকের শাসক মৃত্যু দেবতা যম। তিনি সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। এরপর পরের প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে আগের প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন। একই সঙ্গে পরমাত্মায় বা ঈশ্বরে বিলীন হন।
এ কারণে মহালয়ায় হিন্দুরা তাদের পূর্বে মারা যাওয়া তিন প্রজন্মের ব্যক্তিদের স্মরণ বা তর্পণ করে থাকেন। এ দিন শ্রদ্ধানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি দেন।
সনাতন আচার অনুযায়ী- মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব।
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আশ্বিন মাসের এই শুক্ল পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ।
পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন, দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। পরদিন শনিবার সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার। অষ্টমী ও নবমী শেষে ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।
শাস্ত্র বলছে, এ বছর দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসবেন ঘোড়ায় চড়ে, কৈলাসে ফিরবেনও ঘোড়ায় চড়ে। তার মানে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা ঘটবে। রাজনৈতিক উত্থান-পতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, গৃহযুদ্ধ, দুর্ঘটনা ও অপমৃত্যু বাড়বে।
চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
শনিবার দুপুরে খামারবাড়ীর পূজামণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সাজ সাজ রব, পূজার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।
রং তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তুলছিলেন মানিকগঞ্জের প্রসেনজিৎ রাজবংশী। আগের ৭ বছরের প্রতিমার রঙ করার অভিজ্ঞতা থেকে এবার তিনি ৮টি প্রতিমার দায়িত্ব নিয়েছেন।
এটা ৫ নম্বর প্রতিমা জানিয়ে প্রসেনজিৎ বলেন, “আজ শেষ হবে রং করা। আমরাই মানিকগঞ্জ থেকে এই প্রতিমা নিয়ে আসছি। রঙের দায়িত্বটা আমার এবং এটা আমি আনন্দ নিয়ে করি। প্রতিবছর এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করি।"
মণ্ডপ সজ্জার কাজ শেষ না হলেও ভক্তদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। দেবী দুর্গাকে প্রণাম করছিলেন নিশিতা মজুমদার ও সুমন প্রামাণিক।
তারা জানালেন, পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলে পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটাতে তাদেরকে নিজ জেলা ফরিদপুরে যেতে হবে। ষষ্ঠীর আগের পাঁচ দিন তারা ঘুরে ঘুরে ঢাকার মন্দির ও মণ্ডপগুলো দেখবেন বলে ঠিক করেছেন।
সুমন বলেন, “আমাদের মূল পূজা শুরু হবে ষষ্ঠী থেকে, দশমী পর্যন্ত চলবে। কিন্তু তখন তো ফরিদপুরে চলে যাব। এখানকার মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা হবে না। সেজন্য আজ ছুটির দিন পেয়ে মণ্ডপ দেখতে বের হলাম।”
রমনা কালীমন্দিরেও চলছে মণ্ডপ সাজিয়ে তোলার তোড়জোড়। এ মন্দিরের সভাপতি উৎপল দত্ত বলেন, "ওভারঅল প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। ডেকোরেশনের কাজ চলছে, শেষ হয়ে যাবে আজ-কালের মাঝে। প্রতিমা রঙ করার কাজটা বাকি কেবল।"
নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, “সামনে নির্বাচন, সেজন্য সিকিউরিটির কথাটা আমরা বারবার বলেছি এবং সরকার আমাদেরকে যেভাবে নিরাপত্তা দিয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট।
“গতকাল রাতে শাহবাগ থানা থেকে আমাদেরকে অনেক ফোর্স দিয়েছে। থানা থেকে তারা সবসময় খোঁজখবর নিচ্ছে। আমাদের ১৬টা সিসি ক্যামেরা আছে, সেগুলো সবসময় সচল রাখার কথা বলেছে তারা। মোট কথা, গতবারের চেয়ে এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কয়েকগুণ কড়া।"
সারাদেশের সব মণ্ডপের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে উল্লেখ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান, এবার দেশে ৩৩ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে, যার মধ্যে ঢাকায় আছে ২৪৪টি।”
“সরকারের দিক থেকে যথেষ্ট সাপোর্ট থাকলেও আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। কারণ, কোথাও কোথাও দুর্বৃত্তরা প্রতিমার আঙ্গুল এবং হাত ভেঙে দিয়েছে অলরেডি", বলেন তিনি।