মধুমতি ও তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ঢাকার সঙ্গে নড়াইল যশোর এবং দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের যোগাযোগ সহজ করবে এ দুই সেতু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2022, 07:33 AM
Updated : 10 Oct 2022, 07:33 AM

গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের সীমান্তে দেশের প্রথম ছয় লেইনের মধুমতি সেতু এবং শীতলক্ষ্যা নদীর উপরে বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

সোমবার বেলা ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ, নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং নারায়ণঞ্জ সেতু প্রান্তে যুক্ত হয়ে সেতু দুটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা।

দুটি সেতুই সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের। মধুমতি সেতু খুলে দেওয়া হলে নড়াইল যশোরসহ এই অঞ্চলের মানুষদের সড়কপথে সরাসরি ঢাকা যাতায়াত করতে পারবে। আর তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের ২০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে আনবে বলে আশা করছে সরকার। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আজ সত্যিই খুব আনন্দিত যে আমরা এ সেতু দুটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। এজন্য আমাদের দুটি বন্ধুপ্রতীম দেশ সৌদি আরব এবং জাপান তাদের সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই… তাদের সহযোগিতায় আজকে আমরা বাংলাদেশের উন্নতি করতে পারছি।”

বাংলাদেশে আরো উন্নয়ন প্রকল্প চলছে এবং বন্ধুপ্রতীমগুলো সেসব ক্ষেত্রেও এগিয়ে আসছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আজকে সৌদি আরব থেকে এখানে আরো যাতে বিনিয়োগ আসে, আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইনভেস্টমেন্ট আনার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। জাপান আমাদের অনেকগুলো কাজ করে দিয়েছে।”

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এই দুটি সেতু, যাতে আমাদের দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নতুনভাবে ত্বরান্বিত হবে।

“এবং সেই জন্যই আমি মনে করি যে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সেই সাথে সাথে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, বিশেষ করে আজকে আমরা সাউথ এশিয়ার এমন একটা জায়গায় আছি, আমাদের সঙ্গে অন্যান্য দেশগুলো যেমন নেপাল, ভুটান, ভারত তাদের যে একটা সংযোগ হবে, ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে।”

তিনি বলেন, "আমরা মনে করি এই যোগাযোগের ফলে আমাদের এইসব অবহেলিত অঞ্চলগুলো আরো বেশি উন্নতি লাভ করবে। "

অনুষ্ঠানে সেতুগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন।

অন্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুহাইলান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

মধুমতি সেতু 

নড়াইলের লোহাগড়ার উপজেলা এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত মধুমতি সেতুটি দেশের প্রথম ছয় লেইনের সেতু। যা ৬৯০ মিটার দীর্ঘ এবং প্রস্থ ২৬ দশমিক ১ মিটার। সেতুর উভয় পাশে ৬ লেইনের সংযোগ সড়ক রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য দাড়িয়েছে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার। 

সেতু উদ্বোধন হওয়ায় নড়াইল যশোরসহ এ অঞ্চলের মানুষ সড়কপথে সরাসরি ঢাকা যাতায়াত করতে পারবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও এ সেতু ভূমিকা রাখবে বলে সরকার আশা করছে।

 নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ২০০৮ সালে নড়াইলের সুলতান মঞ্চে নির্বাচনী জনসভায় কালনা ঘাটে এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনি ‘কালনা সেতু’ নামে এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

Also Read: খুলছে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু: দক্ষিণের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব কমছে ২০ কিমি

Also Read: উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত মধুমতি সেতু, কালনা ঘাটে সাজ সাজ রব

পরে কালনা সেতুর নাম পরিবর্তন করে সরকার প্রধান নিজে নদীর নামে ‘মধুমতি সেতু’ নামকরণ করেন বলে জানান তারা সহকারি প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস। 

এ কে এম নাসিম ওসমান সেতু 

নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে চালু হওয়া তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুটি নাম পেয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান সেতু। 

সোয়া কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর দুই পাশে প্রায় দেড় কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক থাকছে। সেতুটা ছয় লেন বিশিষ্ট। চার লেন দিয়ে চলবে দ্রুতগতির যানবাহন, বাকি দুই লেনে চলবে ধীর গতির যানবাহন। 

সেতুটি চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের দূরত্ব অন্তত ২০ কিলোমিটার কমবে বলে আশা করছে সরকার।

সড়ক ও জনপথ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, “এখন থেকে ওই দুই পথের (চট্টগ্রাম ও সিলেট) যাত্রীদের ঢাকা হয়ে চলাচল করতে হবে না। সেই কারণে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে যাত্রীদের। দক্ষিণের যাত্রীরা পদ্মা সেতু দিয়ে মুন্সীগঞ্জ হয়ে শীতলক্ষ্যা সেতু দিয়ে মদনপুর হয়ে চট্টগ্রাম কিংবা সিলেট যেতে পারবেন।”

রোববার দুপুরে সেতুটি পরিদর্শনকালে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজও বলেন, “এই সেতু চালুর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর সাথে সংযোগ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের।

“যারা খুলনা, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া এলাকার মানুষ তারা পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা শহরে প্রবেশ না করেই সরাসরি কিন্তু চট্টগ্রাম যেতে পারবে। সেক্ষেত্রে একটা বড় দূরত্ব কমে যাবে।”

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যয় কমে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই ছোট জেলায় ৮০ লাখের বেশি মানুষ বাস করে এবং অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ এই অংশে বসবাস করেন। তারা এক মিনিটে ওই পাড়ে যেতে পারবেন। নৌকার জন্য তাদের অপেক্ষা যে করতে হতো বা খরচ হতো, সেটা আর করতে হবে না।”

সড়ক ও জনপদ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও সেতুর প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ  আশা করছেনশীতলক্ষ্যা সেতু চালু হলে পঞ্চবটি বিসিক শিল্প এলাকা, পঞ্চবটি মোড়, চাষাঢ়া মোড়, সাইনবোর্ড, নারায়ণগঞ্জের চট্টগ্রাম সড়ক বা ঢাকার পোস্তগোলা ও শনির আখড়া রুটে যানবাহনকে তীব্র যানজটের সম্মুখীন হতে হবে না।