এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি কী থেকে বিস্ফোরণে প্রাণ হারালেন ২০ জন।
Published : 09 Mar 2023, 12:50 AM
পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে ক্যাফে কুইন নামে পরিচিত ভবনটিতে বিস্ফোরণের কারণ কী ছিল, তা একদিন বাদেও জানা যায়নি।
বিস্ফোরণের পরদিন বুধবার সকাল থেকেই সেখানে এলাকার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের উপস্থিতি ছিল আগের দিনের চেয়ে বেশি।
কিছু সময় পরপর পুলিশ তাড়িয়ে দিলেও ফের জড়ো হচ্ছিলেন পুলিশের নিরাপত্তা সংকেত (ক্রাইম সিন) দিয়ে ঘিরে রাখা এলাকার চতুর্দিকে। কখনও কখনও নিরাপত্তা বেষ্টনির ভেতরে চলে আসছিলেন কেউ কেউ। পুলিশের তাড়া খেয়ে চলেও যাচ্ছিলেন।
এভাবে ভিড় করা মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করতেই পুলিশের একটি দলকে সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। এই মানুষের অধিকাংশের কৌতূহল ছিল কীভাবে এই প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ ঘটল, তা জানার।
সিদ্দিক বাজারের ভবনটির এখন কী হবে?
সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণ: আহত একজনের মৃত্যুতে মৃত্যু বেড়ে ২০
এই ভিড়ে বিকালে যুক্ত হয়েছিলেন মঞ্জুর হোসেন। ক্যাফে কুইনের দক্ষিণ পাশের ভবনে জুতা রাখার একটি গুদাম দেখভাল করেন তিনি। মঙ্গলবারে বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস আসার আগে ২০ জনের মতো আহত ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে যুক্ত ছিলেন তিনি।
মঞ্জুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“আমিসহ কয়েকজন মিইল্লা ২০ জনকে উদ্ধার করেছি। কয়েকজনের পুরো শরীরে রক্ত মাইখা ছিল। শরীরে কাপড় ছিইড়া গেছে কারও, আবার কারও পুইড়া গেছে।
“চোখের সামনেই এত বড় ঘটনা ঘটল। বাসায় থাকতেও মন চায় না। তাই আজ দ্যাখতে আইলাম কী হয় শেষ পর্যন্ত। ক্যান এত বড় ঘটনা হইল?”
বংশাল থেকে পঞ্চাশোর্ধ আলমগীর হোসেনও এসেছিলেন কী কারণে এত বড় বিস্ফোরণ হয়েছে, তা জানতে। এলাকার মানুষের কাছে তিনি শুনেছেন, এসি কিংবা বিস্ফোরক থেকে এই ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষ বলাবলি করতাছে এসির গ্যাস থাইক্যা আগুন ধরছে। বাসার এসির দিকে তাকাইতেও ভয় লাগে এহন। তাই দেখতে আসছি। যদি জানতে পারি কী কারণে এত মানুষ মারা গেল।”
পুরুষদের পাশাপাশি এসেছিলেন কোহিনূর বেগম। সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের পেছনের এলাকায় থাকেন চল্লিশোর্ধ্ব এই নারী।
সড়ক বিভাজকে দাঁড়িয়ে ভবনটির দিকে তাকিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক শব্দ হইছে কাইল তা শুনছি। পরে হুনলাম বাসার কাছেই এত বড় ঘটনা হইছে, খুবই খারাপ লাগতাছে। তাই একটু দেখতে আইছি। দেশ (মুন্সিগঞ্জ) থাইক্যা কতজন জানতে চায়-তাই আসছি। বাসার কাছেই হইল, আর যদি না আসি কেমন দেখায় কন?”
শবে-বরাত উপলক্ষে বুধবার ছিল সরকারি ছুটি। এ কারণে ঢাকার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চলা গুলিস্তান, নবাবপুর, বংশাল এলাকায়ও সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তবে অনেক দোকান মালিক ও কর্মচারীরাও এসেছিলেন ক্যাফে কুইনের সামনে ভিড়ে। সড়কের দুই পাশেই তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
দোকান বন্ধ থাকলেও গুলিস্তানে আসার কারণ জানতে চাইলে সিদ্দিক বাজারের ব্যবসায়ী হারুন সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকালও দিনের বেলায় সবকিছু ঠিকই আছিল, এখন কবরস্থান হইল। যারা নাই তারা সবাই তো ব্যবসায়ী আছিল। আমিও তো মরতে পারতাম। ব্যবসায়ীর টানে আসছি। জানি আসা না আসা সমান, কিন্তু মন তো মানে না।”
ব্যবসায়ী হারুনের মতোই ব্যবসায়ী হিসেবে সহমর্মিতা জানাতে আসেন ইয়াকুব শিকদার। কাছেই আলু বাজারে তার পিভিসি পাইপের দোকান।
ইয়াকুব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কী ঘটল? কেন হইল আজও জানতে পারলাম না। এমন ঘটনা যেন আর না হয়, আর যেন কোনো মায়ের পুত না মরে।’’
তাঁতি বাজার থেকে এসে অনবরত ছবি তোলা সেন্টু ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গুলিস্তানের কথা শুনে বিদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনও বাসায় খোঁজ-খবর নিতাছে। তাই বাসায় থাকা মহিলারা জোর করে পাঠালো দেখতে। ছবি তুলতাছি বাসায় নিয়ে দেখাব তাদের।”
গুলিস্তান থেকে সদরঘাট, কেরানীগঞ্জ ও বাবু বাজার হয়ে পদ্মা সেতু যাওয়ার প্রধান এ পথটি সব সময়ই ব্যস্ত থাকে রিকশা, বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, মালামাল পরিবহনের ভ্যান, ট্রাক ও ঘোড়ার গাড়িতে।
গন্তব্যে যাওয়া পথচারীরাও হাঁটা থামিয়ে উদ্ধার তৎপরতা দেখতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছিলেনন। কেউ ছবি তুলে নেন, আবার কেউবা ভিডিও করেন। তাদেরই একজন জহির উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমনিই ছবি তুলে রখলাম- বাসায় গিয়ে দেখাবো। এখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।”
ভবনে বিস্ফোরণ: ‘খালি ভিডিও করে, ধরার লোক নাই’
বিস্ফোরণের সঠিক কারণ এখনও জানতে পারেনি তিতাস গ্যাস, ঢাকা ওয়াসা, বোমা ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন।
সম্ভাব্য অর্ধ ডজন কারণের কথা উঠে এলেও নাশকতার কথা নাকচ করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই। ধারণা করা হচ্ছে, জমে থাকা গ্যাস থেকে এই বিস্ফোরণ। তবে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, সেখানে লাইনে কোনো ত্রুটি ছিল না।
বুধবার ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দীন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটা নিছক দুর্ঘটনা। তারপরেও তদন্ত চলছে। তদন্তের পর পরিপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকও এদিন দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ফিরে যাওয়ার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের তেমন কিছু না বললেও পুলিশ কমিশনার বলেন, “বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে। এখনও বিস্ফোরকের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।”