Published : 01 Jan 2024, 09:10 AM
গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার কর্মকর্তা বাংলাদেশের শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন কি না, তা জানা যাবে দুপুরে।
গ্রামীণ টেলিকমের ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করা, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়ার অভিযোগে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত দেবেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা।
ইউনূসের আইনজীবী ব্যরিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন সোমবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিচারক আমাদের বলে দিয়েছেন, দুপুর ২টার দিকে রায় হবে। আমরা দুপুর ১টার দিকে আদালতে যাব।”
গত ২৪ ডিসেম্বর দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করে দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হয়াদার আলী যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ডিফেন্সে ব্যাড কনডাক্ট হয়েছে। তারা সাফাই সাক্ষ্য দিয়ে বলতে পারতেন যুক্তিতর্কে যা বলেছেন সেগুলো। তাহলে তাদের কথাগুলো দলিল প্রদশর্নী হিসাবে রায়ে মূল্যায়িত হত। কিন্তু তা তারা করেননি।
“এমনকি তারা আত্মপক্ষ সমর্থন এ ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার জবানবন্দিতেও এই সব বিষয়ে মৌখিকভাবে তুলে ধরেননি। আসামিপক্ষ শুধু আমাদের রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্যের বিরোধিতা করে যুক্তি দিয়েছেন যুক্তিতর্কের শুনানির সময়। আমরা আশা করছি, আমাদের পক্ষেই রায় আসবে। অভিযুক্তরা সাজা পাবেন।”
যুক্তিতর্কের শুনানিতে ইউনূসসহ চার আসামির সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা চান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তার মক্কেলরা এ মামলা থেকে খালাস পাবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে সেদিন আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ইউনূস নিজেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমি বা আমরা কোনো অন্যায় করিনি, তাই আশা করি; সত্যই প্রমাণিত হবে। শিগগিরই এই মামলা থেকে খালাস চাই; কারণ আমাদের নির্দোষ প্রমাণ করার কিছু নেই। আমাদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আনা হয়েছে- সব মিথ্যা।”
শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান এ মামলার আসামি।
মামলা বৃত্তান্ত
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।
শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
এ মামলা বাতিলের আবেদন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতেও গিয়েছিলেন ইউনূস। কিন্তু গত মে মাসে তার আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে গেলে মামলা চালানোর বাধা দূর হয়।
এরপর চলতি বছরের ৬ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা।
গত ২২ অগাস্ট থেকে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বাদীসহ চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৮ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন আসামিরা।
৩৪২ ধারার আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্যে ইউনূস বলেছিলেন, শ্রম আইনের ২৩৪ ধারার বিধান লঙ্ঘিত হলে ২৩৬ ধারায় অনেকগুলো প্রতিকারের বিধান রেখেছে। শ্রম আইনের ২৩৬ ধারার উপরোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ না করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বিবাদী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ আইনের লঙ্ঘন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।আমি নিজের স্বার্থে কোনো কিছু করিনি। আমি অপরাধ করিনি।”
সেদিন শুনানি শেষে ইউনূস সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমি তো নিজে এ প্রতিষ্ঠানের মালিক নই। আমার আদর্শ কর্মসূচিতে কোনো ত্রুটি ছিল না। এত বড় কাজ করতে গেলে কিছু ভুল হতে পারে। আমরা তো ফেরেশতা নই। কিন্তু ভুল হলে তা ইচ্ছাকৃত নয়।”
যুক্তিতর্ক শুনানিতে যা হয়
২৪ ডিসেম্বর চলে দুইপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্কের আইনি বাহাস। ইতি টানা হয় ১১ কার্যদিবসের শুনানির, যা শুরু হয়েছিল ২১ নভেম্বর।
আদালতে ইউনূসের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও সৈয়দ হায়দার আলী।
ইউনূসের আইনজীবীর দাবি, ‘হয়রানির জন্যই’ জালজালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ তৈরি করে মামলা করা হয়েছে। তিনি চার আসামির সবার খালাস চান।
অন্যদিকে ইউনূসসহ আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা চেয়ে যুক্তিতর্ক শেষ করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী।
ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন পরে সাংবাদিকদের বলেন, “এ মামলায় যে অপরাধের কথা বলা হচ্ছে, তাতে ইউনূসসহ অন্য আসামিদের সংশ্লিষ্টতার কথা সাক্ষীদের বর্ণনায় আসেনি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো নথিও নেই। মামলার আর্জিতে কোথাও আসামিরা অপরাধী এমন কোনো অভিযোগ উল্লেখ নেই।”
তিনি বলেন, “কোম্পানি আইন অনুযায়ী অপরাধ কোম্পানির হবে। কিন্তু এখানে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ কারণে এ মামলা চলতে পারে না।”
পুরনো খবর: