‘গঙ্গা বিলাস’ বাংলাদেশে ঘুরবে ৬ দিন

এ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে নৌপথে সবচেয়ে দীর্ঘ যাত্রার রেকর্ড হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2023, 05:14 PM
Updated : 15 Jan 2023, 05:14 PM

ভারতের প্রমোদতরী ‘গঙ্গা বিলাস’ সুন্দরবন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি; এরপর ছয় দিন পাড়ি দেবে এ দেশের জলপথ।

রোববার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গঙ্গা বিলাসের পর্যটকদের খুলনার কয়রা উপজেলার আংটিহারায় অনবোর্ড ইমিগ্রেশন করা হবে। তাদের স্বাগত জানাতে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসি থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসাম পর্যন্ত ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দেবে নদী পথে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘযাত্রার প্রমোদতরী ‘গঙ্গা বিলাস’। দীর্ঘ এ যাত্রাপথে নৌযান সময় নেবে ৫১ দিন।

শুক্রবার বারানসিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ‘গঙ্গা বিলাস’র যাত্রা উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

যাত্রাপথে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ-নদী ঘুরে আসামের ডিব্রুগড়ে পৌঁছবে এ প্রমোদতরী।

রোববার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে গঙ্গা বিলাসের বাংলাদেশ যাত্রার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল।

বৈঠকে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ, ট্যুর অপারেটর কোম্পানি ‘জার্নিপ্লাস’ এবং জাহাজ অপারেটিং কোম্পানি ‘গালফ ওরিয়েন্ট সীওয়েজের’ প্রতিনিধিরা সরাসরি এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা ভার্চুয়ালি অংশ নেন।

যে পথে বাংলাদেশ পাড়ি দেবে গঙ্গা বিলাস

বাংলাদেশে যাত্রার বিষয়ে জার্নিপ্লাসের প্রধান নির্বাহী তৌফিক রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা একটা বিশেষ ভ্রমণ, যার সবচেয়ে দীর্ঘযাত্রার রেকর্ড হবে।

“বারানসি থেকে যেসব যাত্রী গঙ্গা বিলাসে আরোহণ করেছেন, তারাই সম্পূর্ণ পথ ভ্রমণ করবেন। এ কারণে অন্যদের এখানে ভ্রমণের সুযোগ থাকছে না।”

গঙ্গা বিলাসের ২৮টি বিলাসবহুল কামরায় ২৭ জন সুইস এবং একজন জার্মান নাগরিক ভ্রমণ করছেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় গঙ্গা বিলাসে ভ্রমণকারীরা পরিদর্শনে যাবেন, তার ধারণা দিয়ে তৌফিক রহমান জানান, খুলনার কয়রা-মোংলা দিয়ে প্রবেশ করার পর ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবন এলাকা ঘুরবেন যাত্রীরা। এরপর বরিশাল ঘুরে চলে আসবেন মেঘনা ঘাটে। মেঘনা ঘাটে নোঙর করার পর দুদিন সোনারগাঁও ও ঢাকায় ঘুরে দেখবেন তারা।

ঢাকা ঘোরার পর টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ হয়ে যাত্রীরা কুড়িগ্রামের চিলমারী যাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, রংপুরের দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের সুযোগও থাকছে যাত্রীদের জন্য। এরপর চিলমারী থেকে ভারতে প্রবেশ করবে গঙ্গা বিলাস।

ফিরতি যাত্রায় আসামের ডিব্রুগড় থেকে ১৩ মার্চ রওনা করবে বলেও জানান তৌফিক রহমান। একইপথে তা ফিরলেও যাত্রী কারা হবেন- তা নির্ধারিত হয়নি বলে জানান তিনি।

রোববারের বৈঠকে সচিব কামাল বলেন, “এটা শুধু ট্যুর নয়; এটা প্রটোকলের অংশ। এ ট্যুর আমাদের পর্যটনকে আরও বেশি ফেসিলিটেড করবে। আমাদের আন্তরিকতার কমতি থাকবে না। ব্যবসা, বাণিজ্য ও পারস্পারিক সম্পর্ক আরও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

গঙ্গা বিলাসের বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বাংলাদেশের জলসীমায় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে। প্রটোকল রুটের নাব্য রক্ষা, বার্দিং সুবিধা নিশ্চিতকরণ ও নৌপথ ব্যবহারের জন্য ভয়েজ পারমিশন প্রদান এবং ভয়েজ পারমিশনের সার্বিক মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবে বিআইডব্লিউটিএ।

আংটিহারা ও চিলমারীতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনবোর্ড কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ও এনবিআর।

বাংলাদেশের নৌপথ অতিক্রমকালে জাহাজটিকে যথাযথ নিরাপত্তা বিধান করার পদক্ষেপ নিবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এন্ট্রি পয়েন্ট আংটিহারাতে সব যাত্রী এবং নাবিকদের কোভিড-১৯ সার্টিফিকেট পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

নৌযানটির ভয়েজ পরিচালনাকালে সার্বক্ষণিক মনিটর করবে জাহাজ অপারেটিং কোম্পানি ‘মেসার্স গালফ ওরিয়েন্ট সীওয়েজ’; দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করবে ট্যুর অপারেটর কোম্পানি ‘জার্নিপ্লাস’।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৯৭২ সালে প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেডের (পিআইডব্লিউটিটি) অধীনে বাংলাদেশ-ভারত নৌপথে বাণিজ্য শুরু হয়েছিল; যা এখনও কার্যকর আছে।

প্রটোকলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাত্রী ও পর্যটকবাহী নৌযান চলাচলের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে বাংলাশে-ভারতের মধ্যে কোস্টাল এবং প্রটোকল রুটে যাত্রী ও ক্রুজ সার্ভিস চালুর লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

ওই সমঝোতা স্মারকের আলোকে স্বাক্ষরিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরের (এসওপি) আওতায় ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী ও ক্রুজ সার্ভিস চালুর পর থেকে এই রুটে তিনটি ভারতীয় এবং একটি বাংলাদেশি নৌযান চলাচল করেছে। 

পুরোনো খবর:

Also Read: ৫১ দিনে বারানসি থেকে আসাম, মাঝে বাংলাদেশ; প্রস্তুত ‘গঙ্গা বিলাস’