মানুষ ভোট দিতে চাইছে: সিইসি

আস্থা ধরে রাখতে পারলে আগামী সাধারণ নির্বাচনেও মানুষ ভোট কেন্দ্রে আগ্রহ নিয়ে উপস্থিত হবেন, আশা হাবিবুল আউয়ালের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2022, 02:56 PM
Updated : 27 Dec 2022, 02:56 PM

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ দেখে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেছেন, “ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে, আগ্রহ রয়েছে; তারা ভোট দিতে চাইছে। তা না হলে সন্ধ্যা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছে সুশৃঙ্খলভাবে!”

বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটার খরার মধ্যে মঙ্গলবার রংপুরে ভোটগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানান সিইসি।

তিনি বলেন, “যেটা লক্ষ্যণীয়, আমরা লাইনের মধ্যে কোনোরকম হ্যাসল দেখিনি। সবাই সংযত ও সংযমের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, এটা ইতিবাচক দিক; মানুষ যে আগ্রহ করে ভোট দিতে চান- তার ইঙ্গিত বহন করে।”

ভোট নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতির এই ধারাবাহিকতা জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ধরে রাখতে চান তিনি।

“মানুষের যাতে আস্থা চলে আসে, শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ ভোট দিতে পারবে- এ ধারাটা অব্যাহত রাখতে পারলে আগামী সাধারণ নির্বাচনেও মানুষ ভোট কেন্দ্রে আগ্রহ নিয়ে উপস্থিত হবেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সে ব্যাপারে আমরা একটু আস্থাশীল হই।”

সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত রংপুর নির্বাচনের ২২৯টি কেন্দ্রর ১৩৪৯টি ভোটকক্ষে ইভিএমে একটানা ভোট চলে। ১৮০৭টি সিসি ক্যামেরায় কমিশন ঢাকায় বসে এ নির্বাচন দেখেছে।

Also Read: ভোটের হারে ‘অশনি সংকেত’ দেখছেন মাহবুব তালুকদার

রংপুরে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন ভোটারের এ সিটি নির্বাচনে প্রায় ৬০% ভোট পড়তে পারে বলে ধারণা করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন, “যেটা কাস্ট হয়েছে- ৪টা পর্যন্ত কোথাও ৬৭%ও পাচ্ছি, আবার কোথাও ৩৯%ও পাচ্ছি। এভারেজ অনুমান করছি এটা ৫০-৫৫% এবং পরিশেষ ৬০% এর উপরে বা কমও হতে পারে। এটা অনুমান করে বলছি। চূড়ান্ত গণনার পর দেখা যাবে- কত হল।”

ইভিএমে ভোট নিয়ে ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে বিকাল ৫টায় সিইসি বলেছেন, “রংপুরে অস্বাভাবিক বিলম্ব হয়েছে কি না- তা মূল্যায়ন করে দেখা হবে। তবে উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। অনেক কেন্দ্রের চৌহদ্দীতে থাকা ভোটারদের ভোট শেষ করতে কয়েকটা ঘণ্টা লেগে যেতে পারে।”

সিসি ক্যামেরায় নিজেদের পর্যবেক্ষণের কথা তুলে ধরে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “প্রায় অনেক কেন্দ্রে প্রচুর সংখ্যক ভোটার এখনও দাঁড়িয়ে আছে। একটা কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে যেখানে প্রবেশ পথ একটা, বুথ পাঁচটা। সেখানে ভিড় লেগেই আছে। নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি-স্লোলি ঢুকছে, স্লোলি বের হচ্ছে।”

আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় নাকি অন্য কারণে ধীর গতি, এ প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, “অভিযোগটা আসছে- স্লো, এটা অসত্য নয়। শুধু আঙ্গুলের ছাপের বিষয় নয়…আঙ্গুলের ছাপ না মেলার অন্যতম কারণ- যে জন্য দেরি হয়ে যায়, একজনের জন্য আরেকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এ সময়; আমরা বলেছি এ সময় একজনকে সরিয়ে দিয়ে পরের জনকে এগিয়ে দিতে।”

ভোটারের উপস্থিতি কম হলে ধীর গতি হতো না বলে মনে করেন হাবিবুল আউয়াল।

“আমাদের মনে হয়েছে- এখানে ভোটার উপস্থিতি বেশি হয়েছে। এটা ইতিবাচক, সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছে ভোট দিতে। এটা আমরা পরে মূল্যায়ন করে দেখব- এখানে অস্বাভাবিকভাবে বিলম্ব হয়েছে কি না। বিলম্ব হয়ে থাকলে কী কারণে হয়েছে, তাৎক্ষণিক মন্তব্য করব না।”

শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য সবার দায়িত্বশীল ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন সিইসি।

“কোথাও অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু ঘটেনি। সুন্দরভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী, প্রশাসন, পুলিশ, নির্বাচন কর্মকর্তারা-সবাই দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন।”

ইসিতে যোগ দেওয়ার ১০ মাসের মাথায় কুমিল্লা সিটি ও রংপুর সিটির ভোট শেষ করেছে। স্থানীয় সরকারের কয়েকশ নির্বাচন হয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে রয়েছে সংসদীয় আসনের ছয়টি উপ-নির্বাচন।

২০২৩ সালে আরও কয়েকটি সিটি নির্বাচন শেষে ২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করবে বর্তমান ইসি।

বছর শেষে রংপুরের ভোট থেকে বেশ উৎসাহ পাচ্ছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।

বিগত সময়ের তুলনায় নিজেদের মেয়াদের নির্বাচনগুলোতে তেমন সহিংসতা না হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন সিইসি।

তিনি বলেন, “আমাদের আসার পর যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, আমি মনে করি- আগের তুলনায় সহিংসতা অনেক কম হয়েছে। সহিংসতা হয়ইনি। মায়ের কোলে একজন শিশু মারা গিয়েছে- সেটা নির্বাচনের পরে; তাও দুর্ঘটনায়। সহিংসতা হয়নি- এটা একটা ভালো দিক।”

‘অর্থবহ’ হলে রাখা হবে সিসি ক্যামেরা

সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও সংসদীয় আসনের উপ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার হলেও আগামীতে সব কিছু যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান সিইসি।

“সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব অনুসারে করা হয়। সাধারণত সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের চেষ্টা করা হবে। যদি এর সপক্ষে কারণ না থাকে, অর্থের অপচয় হবে কি না- মাথায় রাখবো।

“এটাকে আমরা ফ্যাশন করতে চাচ্ছি না। এটা যেন অর্থবহন করে, উপযোগিতা নিশ্চিত করে সিদ্ধান্ত নেব।”