ক্যাফে কুইন ভবনের ‘কাগজ খুঁজে পাচ্ছে না’ রাজউক

“এখন প্রথম কাজ হচ্ছে ভবনটি স্টেবল করা। এর পর পরবর্তী ধাপ নিয়ে ভাবা যাবে”, বলেন রাজউকের কারিগরি কমিটির সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2023, 09:48 AM
Updated : 9 March 2023, 09:48 AM

পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারে যে ভবনটিতে বিস্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে, সেটি বৈধ কি অবৈধ, তা দুর্ঘটনার তৃতীয় দিনেও নিশ্চিত করতে পারেনি রাজধানীত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউক।

নগরে ইমারত নির্মাণ দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘ক্যাফে কুইন ভবন’ এর কোনো কাগজপত্রই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

গত মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে নাজুক ভবনটি পরিদর্শন করে বৃহস্পতিবার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউকের গঠিত কারিগরি কমিটি জানিয়েছে, ধসে পড়া ঠেকানো নিশ্চিত করাই তাদের প্রথম লক্ষ্য। এরপর বাকি কাজ।

রাজউকের কারিগরি কমিটির সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী জানান, বুধবার রাতে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তাদের সদস্যরা, সে কাজ চলছে এখনও।

ভবনটি বৈধ কি অবৈধ, সেই প্রশ্ন ওঠে বিস্ফোরণের পর পর। তবে এখন পর্যন্ত কিছুই জানাতে পারছে না রাজউক।

পুলিশ জানিয়েছে, ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ভবনটির বেইজমেন্ট ও এক তলা কমপ্লিট ছিল। ২০০৪ সালে ভবনটির সাত তলা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

তবে বুধবার ওই ভবন নিয়ে কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারেননি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে রাজউক পরিচালক পরিচালক হামিদুর রহমান। সেদিন ছিল শবেবরাতের ছুটি।

সাততলা ভবনটি আইন কানুন মেনে গড়ে তোলা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, “আজ অফিস বন্ধ। তাই ভবনটি বৈধ না অবৈধ, বা কখন অনুমতি নিয়েছে, তা জানা সম্ভব নয়।”

ভবনটি বৈধ না অবৈধ- এমন প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, “কাগজপত্র দেখে বলা যাবে।”

বৃহস্পতিবার অফিস খুললেও সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী জানাতে পারলেন না কিছু। তিনি বলেন, “কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। খোঁজা হচ্ছে।”

‘আগে নিরাপত্তা, পরে অন্য কাজ’

ক্যাফে কুইন নামের ওই ভবনটি নিয়ে রাজউক কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে– এ প্রশ্নে সংস্থাটির কারিগরি কমিটির সদস্য বললেন, “এখন প্রথম কাজ হচ্ছে ভবনটি স্টেবল (স্থিতিশীল) করা। এই স্টেবল করার পর পরবর্তী ধাপ নিয়ে ভাবা যাবে।”

বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতি কেমন হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ২৪টি কলামের মধ্যে ৯টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক কলামের নিচে রডের কোনো সংযোগ নেই। তবে উপরের কলাম ঠিক আছে।

ভবনটি ‘স্থিতিশীল’ করতে কত দিন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আজ থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি।”

এই কাজ রাজউক করতে পারবে নাকি তৃতীয় পক্ষ লাগবে, জানতে চাইলে সামসুদ্দীন বলেন, “ওইভাগে এগুতে সময় লাগবে। এই সড়ক দিয়ে অনেক গাড়ি যাতায়াত করে এবং কম্পনের সৃষ্টি হবে আর ঝুঁকি থেকেই যাবে। তাই রাজউক নিজেরাই ভবন স্টেবল করার উদ্যোগ নিয়েছে।”

মেরামত করতে খরচ কেমন হবে, আর পুরো ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করলে কত লাগবে- জানতে চাইলে জবাব আসে, “সব হিসাব-নিকাশ পরে।”

অনিরাপদ ভবন আর ‘ব্যবহার উপযোগী নয়’

ভবনটি কী অবস্থায় আছে, সেটি আর ব্যবহার উপযোগী কি না, তা জানতে বুধবার একটি কমিটি করা হয়। রাজউকের সামসুদ্দীন ছাড়া এই কারিগরি কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েটের পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমদ আনসারী ও অধ্যাপক রাকিব আহসান, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান, রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের প্রধান আবদুল লতিফ হেলালী। কমিটির সদস্য সচিব রাজউক কর্মকর্তা রংগন মণ্ডল।

ভবনটির ব্যবহার উপযোগিতা বিষয়ে সুপারিশ দিতে কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তবে বুধবার রাতে বুয়েটের অধ্যাপক রাকিব আহসান বলেন, “এটা মাথায় রাখতে হবে, ভবনটি খুব বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনটি এখন সামনের রাস্তার জন্য ঝুঁকি, আশপাশের ভবনের জন্যও ঝুঁকি।”

ভবনটি আপাতত ব্যবহার করা যাবে না বলে কারিগরি কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন।

মৃত্যু বেড়ে ২১

মঙ্গলবার বিকালে বিকট বিস্ফোরণের ধাক্কায় ভবন থেকে ইট-কনক্রিট থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামগ্রী, এমনকি মানুষও ছুটে এসে পড়ে সড়কে। ভবনটির নিচ তলা ও দ্বিতীয় তলার ফ্লোর ধসে পড়ে।

বিস্ফোরণের পরেই উদ্ধার করা হয় ১৭ জনের মরদেহ। দ্বিতীয় দিন ধ্বংসস্তূপের নিচে মেলে আরও দুটি লাশ। একজন মারা যান হাসপাতালে। তৃতীয় দিনে আরও একজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২১।

তবে বিস্ফোরণের কারণ এখনও জানা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, নাশকতার কোনো আলামত মেলেনি। ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।

নর্থ সাউথ রোডে বিআরটিসির ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল থেকে শ খানেক গজ দক্ষিণে সাত তলা ‘ক্যাফে কুইন’ ভবন। ভবনের বেইজমেন্টে, একতলা ও দোতলায় স্যানিটারির দোকান, তৃতীয় তলায় ‘সুজুতি এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ভবন মালিকের দুই ছেলে ও পরিবার থাকত। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় থাকত ভাড়াটিয়ারা।