মিরপুরে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও: ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাবের ‘নতুন তথ্য’

পুলিশ জানিয়েছিল, মাদক কেনাবেচা নিয়ে বিরোধে এই হত্যা। তবে র‌্যাব বলছে, হত্যার নেপথ্যে এক তরুণীকে উত্ত্যক্ত করা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2024, 02:18 PM
Updated : 23 March 2024, 02:18 PM

রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে প্রকাশ্যে যুবককে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও প্রকাশের ঘটনায় এবার পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

বাহিনীটি বলছে, ঘটনাটি ‘গলাকাটা রাব্বী’ ও ‘পেপারসানি’ নামে দুটি দলের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গলাকাটা রাব্বী’ গ্রুপের রাব্বী এবং আকাশই প্রতিপক্ষ ‘পেপারসানি’ গ্রুপের ফয়সালকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন।

তিনি বলছেন, “গলাকাটা রাব্বী’ গ্রুপের গ্রুপের এক সদস্যের বোনকে উত্ত্যক্তের জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে, যদিও পুলিশের ভাষ্য ছিল, মাদক কেনাবেচার টাকা নিয়ে বিবাদে ঘটেছে সেটি।

গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় রিকশায় করে যাওয়ার সময় ফয়সাল ওরফে রাসেল নামের ৩০ বছর বয়সী এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রাশেদ ওরফে রানা নামে আরেক তরুণ আহত হন। স্থানীয় একটি ভবনের সিসি ক্যামেরায় হত্যার ঘটনা ধরা পড়ে।

ঘটনার তদন্তে নেমে ঢাকা, পটুয়াখালী ও নেত্রকোণা থেকে এক তরুণীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। 

ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ শুক্রবার বলেন, “ফয়সালও একটি গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন। মাদকের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নিজের গ্যাংয়ের সদস্যদের সঙ্গে মারামারির জের ধরে তিনি হত্যার শিকার হন।”

পর দিন র‌্যাব আরো ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, মাদক কেনা বেচার এলাকা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের মধ্যে গত ১৫ মার্চ ‘গলাকাটা রাব্বী গ্রুপের’ এক সদস্যের বোনকে ‘পেপারসানি গ্রুপের’ সদস্যরা উত্ত্যক্ত করার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তখনই ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ‘গলাকাটা রাব্বী গ্রুপ’। 

তারা জানতে পারে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কয়েকজন একটি ইফতার পার্টিতে যাবে। গত ১৬ মার্চ স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে ইফতার শেষে রিকশায় করে যাচ্ছিলেন ‘পেপারসানি ‘ গ্রুপের ফয়সাল ও তার বন্ধু রানা। সেখানে গলাকাটা রাব্বী, মো. আকাশসহ কয়েকজন তাদের ওপর হামলা চালায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, ফয়সাল এবং রানাকে কুপিয়ে নিজেদের গ্রুপের এক সদস্যদের বাসার ছাদে গিয়ে উল্লাস করে হামলাকারীরা। তারা আতশবাজি ফুটিয়ে ও কেক কেটে আনন্দ করে।

ফয়সালের মৃত্যুর খবর পৌঁছলে প্রথমে তারা নেত্রকোণায় গিয়ে আত্মগোপন করে। সেখানে দুইদিন থাকার পর মুন্সীগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় চলে আসে। সেখানে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তার ৫ জনের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ছিনতাইসহ একাধিক মামলা আছে জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন জানান, “এরা মাদক কেনা বেচার একটি বড় সিন্ডিকেট।”

র‌্যাব যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা হলেন, ‘গলাকাটা রাব্বী’ গ্রুপের প্রধান ফজলে রাব্বি ওরফে ‘হিটার রাব্বি’, মো. আকাশ ওরফে ‘টান আকাশ’, মো. ইমরান, মো. রাসেল কাজী এবং নয়ন।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন জানান, রাব্বী এবং আকাশ ছুরি এবং চাপাতি দিয়ে ফয়সাল এবং তার বন্ধু রানার উপর হামলা চালিয়েছিলেন। সেগুলো ঘটনাস্থলের পাশে একটি বাগান থেকে উদ্ধার করা হয়।

ফয়সাল আগে ‘পেপারসানি’ গ্রুপের সদস্য ছিলেন জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “এই গ্রুপের সদস্য ফয়সাল রাব্বী ‘হিটম্যান’ হিসাবে সবার কাছে গুরুত্ব পেত।

“প্রায় পাঁচ মাস আগে মাদক কেন-বেচা সংক্রান্ত ভাগাভাগি, সিনিয়র- জুনিয়র, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও অন্তঃকোন্দলের কারণে ‘পেপারসানি’ গ্রুপ থেকে ফজলে রাব্বী বের হয়ে নিজের গ্রুপ তৈরি করে। এরপর থেকেই দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হত।”

মাস খোনেক আগে রাব্বীকে ‘পেপারসানি গ্রুপের’ সদস্যরা ধরে নিয়ে পায়ের রগ কাটার চেষ্টা করেছিল বলেও জানানো হয় র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে। সে সময় তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন। এরপর থেকে দুই পক্ষে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।

আরো পড়ুন:

Also Read: মাদক বেচার টাকার দ্বন্দ্বে বন্ধুদের হাতে খুন হন ফয়সাল: পুলিশ