যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞায় নিজেদের কর্মকাণ্ডে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই বলে জানিয়েছেন র্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন।
তিনি বলেছেন, “তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আমাদের কিছু কিছু কর্মকর্তার উপর। কিছু কিছু প্রশ্ন তারা তুলেছে, আমরা সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছি উইদ ডকুমেন্টস। সেই ক্ষেত্রে আমাদের কাজের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।”
বৃহস্পতিবার সকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। খুরশীদ হোসেন সম্প্রতি গ্রেড-১ কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ায় জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যান।
খুরশীদ হোসেন বলেন, “তারা যে সমস্ত বিষয় আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে. তার মধ্যে অনেক বিষয় ফেইক ছিল, তাদের মিসগাইড করা হয়েছে। স্বাক্ষী, প্রমাণ, দলিল- যা যা দেওয়ার দরকার, দিয়েছি।
“যা দিয়েছি তাতে তারা স্যাটিসফাইড যে ঘটনাগুলো আসলে ওরকম না। সম্প্রতি আমেরিকা থেকে এসে ঘুরে গেছেন (যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ডনাল্ড লু, তিনিও র্যাবের ভূয়সী প্রশংসা করে গেছেন।”
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বর র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা উঠানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’।
ডনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠকের পরদিন গত ১৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা অচিরেই উঠে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল।
তবে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র জেফ রাইডেনাওয়ার পরদিন জানান, বিচারবহির্ভূত হত্যা কমে আসায় র্যাবের প্রশংসা করলেও এই বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কোনো সময়সীমার ইঙ্গিত দেননি যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে র্যাবের পরিকল্পনা জানতে চাইলে সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, “আমরা আশা করি সকল দল অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচনে অংশ নেবে। এ সময় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি পাবে।
“যখন নির্বাচন হবে তখন নির্বাচন কমিশন সার্বিক দায়িত্বে থাকে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও নিরাপদভাবে হতে পারে, সেজন্য আমরা সকলের সঙ্গে মিলে দায়িত্ব পালন করা।”
খুরশীদ হোসেন বলেন, “র্যাবকে এলিট ফোর্স বলা হয়। সব বাহিনী থেকে চৌকস কর্মকর্তাদের এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়। র্যাবের কোনো সদস্য যদি বিন্দুমাত্র ভুল করে থাকে, আপনারা নিশ্চিত থাকেন এমন কোনো নজির নেই যে- সে সেখান থেকে রেহাই পেয়েছে।
“র্যাব সবসময় মানবাধিকারকে সমুন্নত রেখে কাজ করে যাবে-এটা হচ্ছে আমাদের নতুন পরিকল্পনা।”
‘মাদক ও জঙ্গিবাদ নির্মূল এখন বড় চ্যালেঞ্জ’
পরে দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধের পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন র্যাব মহাপরিচালক।
সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ হোসেন বলেন, “দেশের যে অবস্থা হয়েছিলো জঙ্গিবাদে- এই র্যাবই জঙ্গিবাদকে নির্মূল করেছে। সর্বশেষ পার্বত্য অঞ্চলে যে অবস্থা হয়েছিল, যেটা কোনো অবস্থাতেই র্যাব ছাড়া অন্য কেউ পারতো কি না- আমার সন্দেহ আছে। বাট সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা সেখানেও তা নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি।”
র্যাবের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, “এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মাদক ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা। ২০১৬ সালে যখন জঙ্গিবাদের মাথাচাড়া দিলে… এটি শুরু হয়েছিল মূলত ২০০৫ সালে জোট সরকারের আমলে। সেই বাগমারা-রাজশাহী-আত্রাই-নওগাঁ থেকে বাংলা ভাই সিদ্দিকুর রহমান। আপনারা সব ইতিহাস জানেন।
“জঙ্গিবাদকে নির্মূল করেছে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই না। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই জঙ্গিবাদকে নির্মূল করা হয়েছে, যেখানে সাংবাদিকদের একটা বড় ভূমিকা ছিল।”
মাদক নির্মূল প্রসঙ্গে র্যাব ডিজি খুরশীদ বলেন, “সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মাদক। এই মাদক নির্মূল করতে হলে শুধু আইনশৃংখলা বাহিনী দিয়ে সম্ভব না। শুধু মাত্র মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পারবে না। আবার সেই সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেই এটা বন্ধ করতে হবে।
… এখন যদি জাতিকে মাদক দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়, তাহলে পরবর্তীতে দেশ কারা পরিচালনা করবে। সে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে হতে পারে। এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমরা সবাই মিলে সমাজকে সচেতন করি, যাতে আমরা এই সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে পারি।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন র্যাব সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল মো. কামরুল হাসান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ইমতিয়াজ আহমেদ, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) খায়রুল ইসলাম, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ, পৌর আওয়ামী সভাপতি শেখ সাইফুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক শেখ ওয়ালিদুর রহমান হীরা।