র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কোনো কোনো বিদেশি কূটনীতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ মোমেনের।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2023, 07:31 PM
Updated : 26 Jan 2023, 07:31 PM

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে গেলেও র‌্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।

মোমেন বলেন, “র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। যেহেতু র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ একটি রাজনৈতিক বিষয়, তাই এর সমাধানের জন্য শুরু থেকেই জোরালোভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

“নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ভবিষ্যতে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়েছে।”

র‌্যাব, আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের দূতাবাসের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিত সমন্বয় সাধন করছে বলেও জানান তিনি।

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। তখন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কাজ করবে, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়।

“পরবর্তীতে তারই আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফর করে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করি। বৈঠকে র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরি। ওই সফরে সিনেটর, কংগ্রেসম্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তাদেরকে সমর্থন দেওয়ার অনুরোধ জানাই। কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাস গঠনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করি।”

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু সঙ্গে বৈঠকে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচিত হয় জানিয়ে মোমেন বলেন, “ডনাল্ড লু র‌্যাবের বর্তমান কার্যক্রমের বিশেষ প্রশংসা করেন।”

মোমেন বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে।”

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা তোলার প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’।

কূটনীতিকদের দায়িত্বশীল আচরণের প্রত্যাশা

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মমতা হেনা লাভলীর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বা বিতর্ক সৃষ্টি করে এমন বিষয় বা অনুষ্ঠান থেকে কূটনীতিকরা বিরত থাকবেন বলে আশা রাখেন তিনি।

“তবে আমাদের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে বিরোধীদল ও কিছু গণমাধ্যম আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের বক্তব্য দিতে সময় সময় উৎসাহিত করে, যা অন্যান্য দেশে প্রচলিত নয়।”

ভিয়েনা কনভেনশনের বিধান উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “সরকার বিদেশি কোনো কূটনীতিককে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে বাধা দেবে না।

“আশা করি, এসব অনুষ্ঠানে কূটনীতিকরা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখবেন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবেন।”

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের প্রায় একই ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে কর্মরত কতিপয় বিদেশি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য রাখেন। তাদেরকে এই ধরনের শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য দেওয়া হতে বিরত রাখবার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

“গণমাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা কুটনীতিকদের কাছে তাদের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদেরকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।”