প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য নেই, খালাস সেফুদা

বিদেশে থেকে নানান বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় থাকা এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননা ও প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তির অভিযোগে মামলা হয়েছিল।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2023, 01:28 PM
Updated : 7 Nov 2023, 01:28 PM

সাড়ে চার বছর আগে ঢাকার আদালতে মামলা হয়েছিল অস্ট্রিয়া প্রবাসী সেফাতউল্লাহর বিরুদ্ধে যিনি ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সেফুদা নামে পরিচিত।

নানান বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় থাকা এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে সেসময় ধর্ম অবমাননা ও প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছিল।

মঙ্গলবার সেই মামলায় প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যের অভাবে সেফাতউল্লাহ ওরফে সেফুদাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। বিদেশে অবস্থানের কারণে তার অনুপস্থিতিতেই এ মামলার বিচার চলেছে।

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত তাকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫ (জ) ধারায় তাকে খালাস দেওয়ার কথা রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক।

এ ধারায় বলা হয়েছে, “বাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ, আসামির জবানবন্দি গ্রহণ এবং বাদীপক্ষ ও আসামিপক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করিবার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামি অপরাধ করিয়াছে এইরুপ কোনো সাক্ষ্য নাই, তাহা হইলে আদালত আসামিকে খালাস দিবার আদেশ লিপিবদ্ধ করিবেন।”

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম সাংবাদিকদের জানান, এ মামলায় ইউরোপে অবস্থানরত সেফাতউল্লাহকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে কোনো পরোয়ানা পাঠানো হয়নি। পরোয়ানা পাঠানো হয়েছিল তার বাংলাদেশের ঠিকানা চাঁদপুরে।

সেফুদার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা দায়ের করেন ঢাকা বারের আইনজীবী আলীম আল রাজী।

মামলায় বলা হয়, ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা প্রবাসী সেফুদা ফেইসবুক লাইভে বিভিন্ন ‘আজেবাজে কথা বলে কোরআন অবমাননা’ করেন।

একইভাবে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় লাইভে এসে ‘কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল, আক্রমণাত্মক ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ’ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও ‘কটূক্তি’ করেন।

অস্ট্রিয়া প্রবাসী সেফুদা চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানার চেরিয়ারা গ্রামের মৃত আলী আকবর মজুমদারের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ভিয়েনায় অবস্থান করে ফেইসবুকে বাংলাদেশের রাজনীতি, ধর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন। তার এসব বক্তব্যকে ‘কুরুচিপূর্ণ’ বলে সমালোচনাও করছেন অনেকে।

মামলায় সেফাতউল্লাহর ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধসহ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন বাদী। পরে আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

এরপর গত ৬ জুন সেফুদার বিরুদ্ধে মামলার বাদী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলায় মোট সাক্ষী ছিলেন পাঁচজন।

এরপর মামলার অভিযোগ তদন্ত শেষে একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপ-পরিদর্শক পার্থ প্রতিম ব্রহ্মচারী সেফাত উল্লাহর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫২৯৩১ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিবেদন দাখিল করেন। ট্রাইব্যুনাল তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সেফুদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।