“আমাদের স্টল থেকে কেউ একটি বই কিনলে গ্রামের জীর্ণ পাঠাগারগুলো পাবে একটি বই,” বলেন বিদ্যানন্দের মাহবুবুর।
Published : 11 Feb 2023, 09:02 PM
বইয়ের তাকগুলো ঘুণে ধরেছে, ভেঙে যাচ্ছে একেক করে। সব বইতেই ধুলোর রাজত্ব, পৃষ্ঠাগুলো খেয়ে ফেলছে পোকায়। পড়ে আছে ভাঙা চেয়ার আর টেবিল। ঘরের এক কোণায় টেবিল ফ্যানের উপর বাসা বেঁধেছে মাকড়সা। প্রবেশপথের নামফলকেও ধরেছে মরিচা।
অমর একুশে বইমেলার বাংলা একাডেমি চত্বরের ৮০৯ নম্বর স্টলে গিয়ে ধন্দে পড়তে হল- এটি কি বইয়ের স্টল না কি জীর্ণ কোনো ঘর?
আসলে বিষয়টা সেরকম নয়। স্টলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পুরনো পাঠাগারের এমন ভঙ্গুর দশা ফুটিয়ে তুলেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। জীর্ণ পাঠাগারকে পুনরুজ্জীবিত করতে বইমেলায় বই সংগ্রহ করছে সংগঠনটি।
এ স্টল থেকে একটি বই কিনলে আরেকটি বই বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে; তবে সেই বই অনুদান হিসেবে রাখা হয় প্রত্যন্ত এলাকার জীর্ণ কোনো এক পাঠাগারের জন্য। সেই বইয়ে ক্রেতা লিখে দিতে পারছেন শুভেচ্ছাবার্তাও।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশন এক্সিকিউটিভ মাহবুবুর রহমান রাহি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বইমেলায় বিদ্যানন্দ এসেছে পাঠাগার রক্ষার দাবি নিয়ে। শত বছরের অনেক পুরাতন পাঠাগার এখন আর নেই। আমরা নতুন বই দিয়ে সে পাঠাগারগুলোকে বাঁচাতে চাই। সেই আবেদন তুলে ধরতে চাই মেলায় আসা সাহিত্য প্রেমীদের কাছে।
“আমাদের স্টল থেকে কেউ একটি বই কিনলে গ্রামের জীর্ণ পাঠাগারগুলো পাবে একটি বই। আর আমরা এই বই বিক্রির টাকাও সারাদেশে অসহায় মানুষের জন্য জনকল্যাণমুখী ও মেধাভিত্তিক কার্যক্রমে ব্যয় করে থাকি।”
স্টল সামলাচ্ছেন দৃষ্টিহীন দুজন
বিদ্যানন্দের ব্যতিক্রমী স্টলে শনিবার বই বিক্রি করতে দেখা গেল দৃষ্টিহীন দুই শিক্ষার্থীকে। তাদের একজন মুহসিন, যিনি এ বছর ঢাকার সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছেন। আরেকজনের নাম হৃদয়, সিরাজগঞ্জের অ্যাসিস্টেন্স ফর ব্লাইন্ড চিলড্রেন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন।
মুহসিন বললেন, “সমাজে সচারাচর কোনো প্রতিবন্ধী মানুষকে কাজে সম্পৃক্ত করতে চায় না কেউ। সচেতনতা তৈরি করার জন্য বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নিয়েছে, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষদের সেলসম্যান হিসেবে স্টলে ব্যবহার করার জন্য।
“এই উদ্যোগের মাধ্যমে জানাতে চাই, আমরাও পারি জ্ঞানের আলো সমাজে ছড়াতে। আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।”
দৃষ্টিহীন হওয়ার কারণে সমাজে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার কথা জানালেন হৃদয়। তার কথায়, “বাসে আমাদের নিতে চায় না। অন্য সব মানুষকে নিচ্ছে। আমরা দাঁড়িয়ে যেতে পারব বললেও আমাদের নেয় না। তাদের মানসিকতা এ রকম যে, আমরা মনে হয় টাকা দেব না।
“অনেক পরিবহনে প্রতিবন্ধীদের জন্য সিট সংরক্ষিত আছে, কিন্তু ওটা প্রতিবন্ধী মানুষ ব্যবহার করতে পারছে না। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য আরও সচেতনতা প্রয়োজন।”
নানা অনুষ্ঠান
শনিবার মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এর মধ্যে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর।
বিকাল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: আশরাফ সিদ্দিকী এবং স্মরণ: সাঈদ আহমদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইয়াসমিন আরা সাথী এবং মাহফুজা হিলালী। আলোচনায় অংশ নেন উদয়শংকর বিশ্বাস, শামস্ আল দীন, রীপা রায় ও আব্দুল হালিম প্রামাণিক।
সভাপতির বক্তব্যে খুরশীদা বেগম বলেন, “বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের বরেণ্য দুজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. আশরাফ সিদ্দিকী এবং সাঈদ আহমদ। তাদের জীবন, কর্ম ও আদর্শ আমাদের তরুণ সমাজকে পথ দেখাবে। এই গুণী ব্যক্তিদেরকে স্মরণ করা আমাদের জন্য একান্ত জরুরি।”
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মুর্শিদা বিনতে রহমান, রমজান মাহমুদ, ইশরাত তানিয়া ও কবির কল্লোল।
রোববার যা থাকছে
বইমেলার ১২তম দিন রোববার মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: হাসান হাফিজুর রহমান এবং স্মরণ: হাবীবুল্লাহ সিরাজী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মিনার মনসুর ও শেখ মো. কাবেদুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেবেন শোয়াইব জিবরান, শাহাদাৎ হোসেন নিপু, রুবেল আনছার ও ওবায়েদ আকাশ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন এ এইচ এম লোকমান।