বাতাসে মিশে থাকা অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা ও ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতে বাইরে গেলে মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
Published : 14 Dec 2023, 09:16 PM
শীত মৌসুমের শুরুতেই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকার বাতাস।
আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের হিসাবে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ঢাকার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতির স্কোর ছিল ৩১৫, যা বায়ুমান সূচক অনুযায়ী ‘ঝুঁকিপূর্ণ’।
বেলা ১২টায় সেটি কিছু কমে ২৪২ হলেও বায়ুমান সূচক অনুযায়ী তা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’।
শীতের শুরু থেকেই শ্বাসকষ্টজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে অস্বাস্থ্যকর বাতাসের কারণে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের বাইরে বের না হওয়া কিংবা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলেও মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
বাতাসের মান নির্ভর করে এতে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণের (পিএম ২.৫) ওপর। কোথায় প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ভাসমান পিএম ২.৫ এর পরিমাণ কত মাইক্রোগ্রাম, তার ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন শহরের স্কোর তৈরি করে থাকে বায়ুমান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে ‘মাঝারি’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১ থেকে তার ওপরে উঠলে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বায়ু ধরা হয়।
আইকিউএয়ারের হিসাবে বায়ুতে পিএম ২.৫ উপস্থিতির ক্ষেত্রে বিশ্বের শহরের তালিকায় ঢাকা নিয়মিতই ওপরের দিকে থাকছে। গত তিন দিনের তথ্যে ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর, ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ এবং ‘বিপজ্জনক’ মাত্রায় ছিল।
মঙ্গলবার বেলা ৩টায় বায়ুমান সূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ২১০। বাতাসের এই মান খুবই অস্বাস্থ্যকর। রাত ১১টায় হয় বায়ু ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হয়ে ওঠে, স্কোর হয় ৩৪২।
এরপর মঙ্গলবার রাত ৩টায় ঢাকার বায়ু মান ছিল ৩৬৮, বুধবার বিকালে তা কমে আসলেও ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়েই থাকে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় রাজধানীতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এলাকায় বায়ুমান স্কোর ছিল ২৯২, মহাখালী এলাকায় ২৭৪, আগাখান একাডেমি এলাকায় ২৬৭, সাভারের হেমায়েতপুরে ২৪৮, গুলশান লেক পার্কে ২৪২, আমেরিকান দূতাবাস এলাকায় ২৪০ এবং মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় ছিল ২৩৩। এর সবগুলোই খুবই অস্বাস্থ্যকর শ্রেণির।
দূষণের মাত্রা বুঝতে পিএম ২.৫ ও পিএম ১০ ছাড়াও সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও গ্রাউন্ড লেভেল ওজোনে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বিবেচনা করে নির্ণয় করা হয় বায়ুমান।
আইকিউএয়ারের হিসাবে দেখা গেছে, ১ ডিসেম্বর ঢাকার বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর, স্কোর ছিল ১৬৯। এরপর ৭ ও ৮ ডিসেম্বর ছাড়া বাতাসের মান অস্বাস্থ্যকর মাত্রার নিচে ছিল না কখনোই। ওই দুদিন ঢাকায় সামান্য বৃষ্টি হয়েছিল। এরপর থেকে ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রায় থাকছে।
ঢাকার এই ঝুকিপূর্ণ বাতাসের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশেনর যুগ্ম মহাসচিব ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেননূর।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট্কমকে বলেন, “শীত মৌসুমে ঢাকায় বাতাসের যে অবস্থা তাতে দুই ধরনের মানুষের জন্য ভয় আছে। যারা এরই মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত আছেন এবং যাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
“বাইরে গেলেও অবশ্যই মাস্ক পরবে। বিশেষ করে হাঁপানি, দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসকষ্টজনিত রোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখতে হবে।”
কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, “যারা চিকিৎসাধীন আছেন কোনো অবস্থাতেই যেন তাদের চিকিৎসায় ঘাটতি না হয় এবং নিয়ন্ত্রণ না হারায়। যদি মনে হয় শরীর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে, তাহলে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ওষুধগুলো অ্যাডজাস্ট করে নিতে হবে। এ ধরনের রোগীদের আমরা শীতের আগেই ফ্লুর টিকা নিয়ে নিতে বলি।”
শীতের সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। এসময় ধুলোবালি থেকে নিরাপদ থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
“যখন এ ধরনের বাতাস নাকে ঢুকবে তখন ক্ষতি করবে। সাধারণ সর্দিকাশি, নাকের প্রদাহ যাতে তাদের কাবু না করে, এজন্য গরম কাপড় পরা, সরাসরি ঠাণ্ডা বাতাস, কুয়াশার মধ্যে না যাওয়া ভালো।
“একান্ত প্রয়োজন হলে বাইরে যেতে মাস্ক ব্যবহার করবে। নাক-মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে। এছাড়া লবণ-গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা, গরম পানি, আদা চা খাওয়া এসব সাধারণ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস, কিডনিসহ দীর্ঘমেয়াদী রোগ তাদেরও সাবধান থাকতে হবে।”