আইনে যদি পথ খোলা থাকে, তবে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিনের বিষয়টা বিবেচনা করার অনুরোধ রমনার সেন্ট মেরিজ ক্যাথেড্রালের ফাদার আলবার্ট রোজারিওর।
Published : 06 Dec 2024, 12:49 AM
‘স্পর্শকাতর’ সময়ে ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সংলাপ শেষে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা এসেছে; কোনো অপপ্রচারে যেন কেউ কান না দেন, সে বিষয়ে আহ্বান জানানো হয়েছে।
আইনে সম্ভব হলে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে জামিন দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন একজন ধর্মীয় নেতা।
‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর দিন বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠক করলেন বিভিন্ন ধর্মের সংগঠন ও জোটের নেতাদের সঙ্গে।
বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে সেই বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিভিন্ন ধর্মের নেতারা।
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আহমাদউল্লাহ বলেন, “আমাদের মধ্যে চমৎকার ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। সেটাকে কীভাবে আরও ভালোভাবে ধরে রাখা যায়- সে বিষয়ে আমরা সবাই আজ কথা বলেছি।
“প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং বলেছেন একটি সুন্দর সম্প্রীতির বাংলাদেশের কথা, যে বাংলাদেশে কোনো ভয় থাকবে না, সেটা গড়বার জন্য তার সরকার কাছ করছে।”
ধর্মীয় নেতৃত্ব ‘অত্যন্ত দায়িত্বশীল’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই দায়িত্বশীলতার কারণেই আইনজীবী হত্যার পরেও মুসলমানরা ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় সম্প্রীতির ‘উজ্জ্বল উদাহরণ’ তৈরি করেছে দাবি করে আহমাদউল্লাহ বলেন, “কোনো প্রপাগান্ডায় আমরা যেন পা না দেই, সবাই যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি। এজন্য সবাই কথা বলেছেন।”
বৈঠকে অংশ নেওয়া খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু রমনার সেন্ট মেরিজ ক্যাথেড্রালের ফাদার আলবার্ট রোজারিও বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা একটা স্পর্শকাতর সময় পার করছি, এই সময়ে আমাদের প্রধান কথা ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, “মানুষের মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে সেই ক্ষত দূর করতে হবে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যারা কষ্টে আছেন, যাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে তাদের অনেকেই আজ আসে নাই। তাদেরকে নিয়ে যেন প্রধান উপদেষ্টা বসেন আমি এই কথা বলে এসেছি। পাশাপাশি বলেছি আমরা যেন এমন একটা আয়োজন করি যাতে সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে যে বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে আছে, তারা মিলেমিশে থাকে, তারা একসাথে পথ চলে।
“আমরা আরেকটা বিষয় জোর দিয়ে বলেছি যে, আমাদের ইসকনের যে ভাই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন, আইনে যদি পথ খোলা থাকে তার জামিনের বিষয়টা বিবেচনা করা হয়।”
বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় বলেন, “আমরা বলেছি দেশে যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে। আমরা যেন মিলেমিশে থাকতে পারি। এটা আমাদের ঐতিহ্য সেই মিলেমিশে থাকার ঐতিহ্য যেন বজায় থাকে।”
হিন্দু ধর্মগুরু রমনা হরিচাঁদ মন্দিরের সহ-সম্পাদক অবিনাশ মিত্র বলেন, “আমরা যারা বাংলাদেশে আছি, আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। যারা বিভেদ তৈরি করছে তারা বিদেশে বসে ‘প্রপাগান্ডা’ ছড়াচ্ছেন। তারা ‘খারাপ স্বার্থ’ হাসিল করবে এটা আমরা চাই না। এটা বাংলাদেশ। এখানে আমরা সবাই সমানভাবে মিলেমিশে আছি।”
গারো পুরোহিত জনসন ম্যুরি কামাল বলেন, “আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি যে, মিডিয়ায় ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে, তাদেরকে আমরা প্রতিরোধ করব। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। এই সরকারকে আমরা সহযোগিতা করব।”