“আপিল বিভাগের রায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে গিয়েছে বলে আমি মনে করি। যার কারণে এখন এ ধরনের আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে আমরা মনে করছি।”
Published : 11 Jul 2024, 02:33 PM
সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত দশ দিনের আন্দোলনে কোথাও বাধা দেওয়া না হলেও এবার প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার বার্তা দিল পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খ মহিদ উদ্দিন বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা জারির পরও আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমে জনদুর্ভোগ ঘটালে তারা ‘প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে’ বাধ্য হবেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার। তার মতে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছে, তারপর আর এ আন্দোলনের কোনো ‘যৌক্তিকতা নেই’।
মহিদ উদ্দিন বলেন, কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্রকে বলবৎ রেখে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ। এখন ২০১৮ সালের সেই পরিপত্র বলবৎ আছে। যার কারণে এই চার সপ্তাহ কোটা নিয়ে আন্দোলন করার কোনো অবকাশ বা প্রয়োজন আছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ মনে করে না।
“শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও সহমর্মিতা আছে। কিন্তু সেই সাথে মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় আদালত, তার প্রতি আমরা সকলে শ্রদ্ধাশীল থাকতে বাধ্য। আমাদের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সবাই শিক্ষিত, তাই আমি তাদের অনুরোধ করব, এ বিষয়ে তারা যেন আর জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো কর্মসূচি না দেয়।”
এক প্রশ্নের জবাবে মহিদ উদ্দিন বলেন, “রাস্তায় নেমে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। এক রিট আবেদনের রায়ে গত ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট।
এরপর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। প্রথম কয়েক দিন মিছিল, মানববন্ধনের মত কর্মসূচি থাকলেও এ সপ্তাহের শুরু থেকে শুরু হয় তাদের অবরোধ কর্মসূচি, যার নাম তারা দিয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা শুরুতে চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করলেও এখন তারা মাঠে রয়েছে এক দফা নিয়ে।
তাদের দাবি হল- সকল গ্রেডে সকল প্রকার ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷
ওই ‘ন্যূনতম পর্যায়’ বলতে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ অনগ্রসর লোকদের জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত কোটা ‘গ্রহণযোগ্য’ মনে করছে তারা।
আন্দোলনকারীরা গত রবি ও সোমবার বিকালে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর বুধবার সকাল-সন্ধ্যা সারা দেশে তাদের একই কর্মসূচি চলে।
তাদের এই কর্মসূচিতে যানজট এবং পরিবহন না পেয়ে মানুষ নিদারুণ দুর্ভোগে পড়লেও পুলিশকে কোথাও কঠোর ভূমিকায় দেখা যায়নি। আন্দোলনকারীদের সরাতে বল প্রয়োগের পথে না গিয়ে পুলিশ বরং বিকল্প পথে যান চলাচল অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে গেছে।
এই আন্দোলনের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বুধবার কোটা নিয়ে স্থিতাবস্থা জারির আদেশ দেয়।
কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, কোটা নিয়ে এখন কোনো কথা বলা যাবে না। হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল বিভাগ আবার বিষয়টি শুনবে।
আন্দোলন করে যে আদালতের রায় বদলানো যায় না, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এর প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক আাসিফ মাহমুদ বুধবার সন্ধ্যার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমাদের দাবি স্পষ্ট, সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে ঘোষণা আসতে হবে যে একটি কমিশন গঠন করে কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার করা হবে। যতদিন না আমাদের এ দাবি মেনে নেওয়া না হচ্ছে, ততদিন শিক্ষার্থীরা রাজপথে থাকবে।”
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় আবার রাস্তায় নামার এবং সারা দেশে সড়ক অবরোধের কর্মসূচি দেওয়া হয় ওই ব্রিফিংয়ে।
অন্যদিকে সরকারের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও আদালতের আদেশ মেনে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, তাদের সরকারই কোটা বাতিল করেছিল। এখন আন্দোলনকারীরা যেমন কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চাইছে, সরকারও সংস্কার চায়। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু আদালতে আছে, সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে। এ অবস্থায় আন্দোলনের কোনো ‘যৌক্তিকতা নেই’।
বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের ব্রিফিংয়ে সরকারের কথারই প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খ মহিদ উদ্দিন বলেন, “বুধবার আমাদের জানামতে অন্তত ২১টি পয়েন্টে তারা অবস্থান নিয়েছিল। আমরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে তাদের মোকাবেলা করেছি, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বাইরে নগরবাসীর নিরাপত্তা ও চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আমরা বাধ্য।
“আপিল বিভাগের রায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে গিয়েছে বলে আমি মনে করি। যার কারণে এখন এ ধরনের আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে আমরা মনে করছি। তাই আমরা আশা করছি, সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো কর্মসূচি দেবে না।”