জরুরি বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত জানায় সরকার পতনে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
Published : 31 Dec 2024, 12:58 AM
সরকার ঘোষণাপত্রের পক্ষে যে অবস্থান নিয়েছে তাতে সমর্থন জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মঙ্গলবার শহীদ মিনারে সমবেত হওয়ার কর্মসূচি বহাল রেখেছে। তবে ঘোষণাপত্র সরকারই দেবে।
মঙ্গলবার শহীদ মিনারের ওই কর্মসূচি থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রটি কেমন হবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলে তুলে ধরেন সংগঠনটির মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।
সোমবার রাতে বাংলা মোটরে জরুরি বৈঠক শেষে তিনি মঙ্গলবারের কর্মসূচি ও ঘোষণাপত্রের বিষয়ে কথা বলেন।
এদিন সন্ধ্যায় সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘ঘোষণাপত্র’ তৈরির ঘোষণা আসার পর রাতেই জরুরি বৈঠকে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।
বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে মধ্যরাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন হান্নান মাসউদ।
তিনি বলেন, "আমরা এদেশের মানুষের উদ্দেশ্যে বলব এই প্রক্লেমেশন যেন আমরা করতে না পারি সে ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। ষড়যন্ত্রে পেরেক মেরে দিয়েছে আমাদের অন্তর্বর্তীকালী সরকার। সরকার বলেছে সকলের পক্ষ থেকে তারা ঘোষণাপত্র দিবে। কিন্তু আমরা আগামীকাল প্রক্লেমেশনের পক্ষে সারা দেশের মানুষকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাই।"
”সরকার আমাদের প্রক্লেমেশনের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে, আমাদের বিজয় হয়েছে। আমরা অবশ্যই শহীদ মিনারে একত্রিত হব। যে কর্মসূচি আমরা দিয়েছি, আমরা একত্রিত হব।”
সরকারের ঘোষণাপত্রের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে সমর্থন জানানোর কথা তুলে ধরেন তিনি বলেন, “প্রক্লেমেশন কীভাবে হবে কালকে আমরা সেখানে বলে দেব।”
মাসউদ বলেন, "আমরা এই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ঘোষণাপত্র দিতে চেয়েছি। আমরা রাষ্ট্রকে বলেছি, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেন আমাদের সহায়তা দেওয়া হয়। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও গিয়েছি।
“আমরা বলেছি যেন প্রত্যেকে এটা গ্রহণ করেন। কারণ ঘোষণাপত্রটি হবে একটি ঐতিহাসিক দলিল। কিন্তু এই ঐতিহাসিক দলিল যেন আমরা প্রস্তাব করতে না পারি সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।
"তবে আমরা প্রাথমিকভাবে বিজয় লাভ করেছি। সরকার আমাদের এই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে।”
মঙ্গলবার শহীদ মিনারে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ করার কর্মসূচি দিয়েছিল সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
রোববার বাংলামোটরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আহ্ববায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ‘নাৎসি বাহিনীর’ মত ‘অপ্রাসঙ্গিক’ এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ‘কবর রচনা’ করা হবে।
‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর); কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে দেড় থেকে আড়াই লাখ মানুষ জমায়েত হওয়ার প্রত্যাশার কথাও জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
রোববার এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক কোনো সম্পর্ক নেই।
কিন্তু এক দিনের ব্যবধানে সোমবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে একই ধরনের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এক বিফ্রিংয়ে তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে।
''আমরা আশা করছি, সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যেই সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হবে এবং জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।''
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে সরকার: প্রেস সচিব
'জুলাই ঘোষণাপত্র' দিয়ে আওয়ামী লীগকে 'অপ্রাসঙ্গিক' করা হবে: হাসনাত
'জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্রের' সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক নেই: প্রেস সচিব
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র: আড়াই লাখ মানুষ জমায়েতের পরিকল্পনা