“দেড় যুগের বেশি সময় ধরে ভারত বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে; আমাদের অস্বস্তি সেই জায়গায়,” বলেন তিনি।
Published : 04 Dec 2024, 01:31 AM
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে জনগণের আর রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের ‘হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
ভারতকে ‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর’ আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, “দেড় যুগের বেশি সময় ধরে ভারত বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণে ‘আওয়ামী লীগকে অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করেছে। আমাদের অস্বস্তি সেই জায়গায়। ভারত সবসময় আওয়ামী লীগের চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখেছে।
“তারা ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগকে নির্ভর করে যে অন্যায্য সম্পর্ক তৈরি করেছে…, আপনারা যদি মনে করেন আবারও এ ধরনের অন্যায্য সম্পর্ক তৈরি করতে পারবেন, তাহলে ভ্রান্তির মাধ্যমে এসেছেন। বর্তমান সরকার জনগণের রায়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এসেছে। কোনো কারণে সম্পর্ক খারাপ হলে অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এক হাত, এক চুল পরিমাণ ছাড় দেব না।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বৈষম্যবিরোধী বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। দেড় ঘণ্টার মত বৈঠক শেষে সেখান থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সংস্কার কমিশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সেইসঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে করা ‘অসম চুক্তি’ প্রকাশ, ফেলানীসহ সীমান্ত হত্যার বিচার ও পানির ন্যায্য হিস্যা বাস্তবায়নের দাবি জানানোর কথাও বলেছেন হাসনাত।
আওয়ামী লীগ সরকার ‘সংখ্যালঘুর ট্রাম্পকার্ড’ ব্যবহার করে একটি ‘ন্যারেটিভ’ বাস্তবায়ন করেছে দাবি করে তিনি বলেন, “তাদের (ভারত) মতে আওয়ামী লীগ যত দিন রয়েছে, তত দিন হিন্দুধর্মের স্বার্থ রক্ষা হবে। আমরা ভারতকে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করেছে, নিপীড়ন করেছে, সম্পদ লুণ্ঠন করেছে…তার ইতিহাস দ্বিতীয়টি নেই।
“আপনারা যদি মনে করেন আওয়ামী লীগই সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করবে তা ভুল ধারণা। কিছু সংখ্যক সংখ্যালঘুদের কেউ কেউ শারীরিকভাবে বাংলাদেশি হলেও মানসিকভাবে ভারতীয় ধ্যান-ধারণা পোষণ করেন, যারা এখানে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান এবং মুসলমান আমরা একসঙ্গে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতার প্রশ্নে একসঙ্গে লড়াই করব।”
বাংলাদেশে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার, সহিংসতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলার প্রেক্ষাপটে সব জায়গায় সাম্প্রতিক কিছু উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে বলেও তুলে ধরেন সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত।
বিশ্ব মিডিয়ায় ‘সাম্প্রদায়িক ট্রাম্প কার্ড’ ছড়ানো হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বলা হচ্ছে গণঅভ্যুত্থান হচ্ছে ইসলামি উগ্রবাদের সৃষ্টি। বিষয়টি যে এরকম না, বরং সকল শ্রেণিপেশার, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। সংখ্যালঘু রয়েছে, যদিও শব্দটি ব্যবহার করতে সংকোচবোধ করি।
“বাংলাদেশের প্রত্যেকে সাম্য ও মর্যাদার মাধ্যমে জীবন ধারণ করছে। আমাদের সম্প্রীতি রয়েছে, তা কীভাবে বিশ্বের দরবারে আরও বেশি প্রচার করা যায় এবং প্রপাগান্ডাবিরোধী সেল তৈরি করা যায় এ বিষয়ে (প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে) কথা হয়েছে।”
ভারতের সঙ্গে জনগণ ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানান হাসনাত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখপাত্র আবদুল হান্নান মাসুদ ও সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন-