ঘুষ লেনদেনে দণ্ডিত ডিআইজি মিজানের চাকরি গেল

মিজানুর রহমানকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্তের এই আদেশ ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর ধরা হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2022, 04:11 PM
Updated : 3 Nov 2022, 04:11 PM

ঘুষ লেনদেনের মামলায় দণ্ডিত ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে বৃহস্পতিবার জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মিজানুর রহমানকে বরখাস্তের এই আদেশ ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর ধরা হবে।

ওইদিনই ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন।

রায়ে ডিআইজি মিজানকে ৩ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর যাকে তিনি ঘুষ দিয়েছিলেন, দুদকের সেই পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৩ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি মুদ্রা পাচার আইনে ৫ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, ৮০ লাখ জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সাজা দেন বিচারক। 

মিজান একটি মামলা থেকে বাঁচতে এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন বলে এ মামলায় প্রমাণিত হয়। তাদের দুজনকে আগেই সাময়িক বরখাস্ত করেছিল পুলিশ বিভাগ ও দুদক।  

তাদের দুজনই ইতোমধ্যে হাই কোর্টে আপিল করেছেন। এনামুল বাছির জামিন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিনও পেয়েছেন। তবে মিজানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের আরও একটি মামলা রয়েছে দুদকের।    

ঘুষের মামলায় মিজানের কম সাজা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে দুদকও হাই কোর্টে গেছে।

তিন বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত মিজানুর রহমানের সাজা কেন বাড়ানো হবে না, তা জানতে চেয়েছে গত ১৮ এপ্রিল একটি রুলও জারি করেছে হাই কোর্ট। বিষয়টি এখনও ‍শুনানিতে আসেনি।  

মামলা পরিক্রমা

এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় ২০১৯ সালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মিজানকে।

এর চার মাস পর তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক; এক হাত ঘুরে সেই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান কমিশনের তৎকালীন পরিচালক এনামুল বাছির।

সেই অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা বাছির।

এর পক্ষে তাদের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ একটি টেলিভিশনকে দেন তিনি। ওই অডিও প্রচার হওয়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।

অভিযোগটি অস্বীকার করে বাছির দাবি তখন করেন, তার কণ্ঠ নকল করে ডিআইজি মিজান কিছু ‘বানোয়াট’ রেকর্ড একটি টেলিভিশনকে সরবরাহ করেছেন।

অন্যদিকে ডিআইজি মিজান বলেন, সব জেনেশুনেই তিনি কাজটি করেছেন ‘বাধ্য হয়ে’।

এরপর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থার পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে তিনি অভিযোগপত্র দেন।

এরপর ২০২০ বছরের ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। আরেক মামলায় গ্রেপ্তার ডিআইজি মিজানকেও পরে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গত বছর ১৮ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে রায় দেয় জজ আদালত।

রায়ে তিন বছরের দণ্ড হলেও মিজান ছিলেন উৎফুল্ল। সাংবাদিকদের সামনে দুই আঙুলে বিজয়ের চিহ্ন দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন, দুদকে ‘এরকম আরও বাছির’ আছে।

পুরনো খবর

Also Read: ঘুষ লেনদেন: ডিআইজি মিজানের ৩ বছর সাজা, দুদকের বাছিরের ৮ বছর

Also Read: ডিআইজি মিজানের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ

Also Read: দণ্ডিত এনামুল বাছির জামিন পেলেন হাই কোর্টে

Also Read: ডিআইজি মিজানের সাজা বাড়ানো নিয়ে হাই কোর্টের রুল