বিএসএমএমইউতে তুলকালাম, বিদায়ী ভিসির সমর্থকদের ‘মারধর’

উপাচার্য শরফুদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী ডাক্তার রাসেল আহমেদকে শনিবার চড়-থাপ্পড় দিয়ে উপাচার্যের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2024, 07:59 AM
Updated : 23 March 2024, 07:59 AM

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদের মেয়াদ শেষের মুহূর্তে তার ব্যক্তিগত সহকারীসহ কয়েকজনকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

শরফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে তার কার্যালয়ের সামনে শনিবার বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগপন্থি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সংগঠনের শিক্ষকরা; বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মকর্তা-কার্মচারী ও নার্সরাও এতে অংশ নেন।

একপর্যায়ে শরফুদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী ডাক্তার রাসেল আহমেদকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে উপাচার্যে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড শাখা থেকেও একজনকে মারধর করে বের করে দেওয়ার খবর পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা কয়েকজনকে মারধর করেছে, আমি বিষয়টা শুনেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলব।”

উপাচার্য শরফুদ্দিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৮ মার্চ। এরই মধ্যে গত ১১ মার্চ বিএসএমএমইউর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক দীন মো. নূরুল হক।

মেয়াদ শেষের আগে উপাচার্য শরফুদ্দিনের বিরুদ্ধে ‘শতাধিক’ শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। এসব নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার বিদায়ের মুহূর্তে বিক্ষোভ করছেন স্বাচিপের বিএসএমএমইউ ইউনিটের নেতারা।

সংগঠনটির চিকিৎসকদের অভিযোগ, আগের নিয়োগগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। বিদায়ের মুহূর্তে আরো শতাধিক শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী অ্যাডহকের মাধ্যমে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগ বাণিজ্যের এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার থেকে স্বাচিপের নেতারা বিক্ষোভ করছেন।

আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা স্বাচিপের বিএসএমএমইউ শাখার সদস্য সচিব অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার টিটো বলেন, “বেশ কিছুদিন আগে ভিসি হিসেবে নতুন ভিসি দীন স্যারের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে ভিসি আসার কারণে একটি অংশ বিরোধীতা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা যারা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি, কেন্দ্রীয় ও বিএসএমএমইউয়ের স্বাচিপের নেতৃত্ব দিচ্ছি, এ সকল স্বাচিপ কর্মীদের সবার কথা একটাই- নেত্রী যাকে নিয়োগ দিয়েছেন তাকেই আমরা ভিসি হিসেবে মন থেকে মেনে নিয়েছি, স্বাগত জানিয়েছি।

“সাধারণত ভিসি নিয়োগ পাওয়ার পর আগের ভিসি শুধুমাত্র দৈনন্দিন রুটিন কাজ করেন, যা ইতোপূর্বেও হয়েছে। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য শতাধিক ডাক্তার, কর্মচারী ও প্রায় ৩০ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। সবাই মনে করছে এই নিয়োগের পেছনে অর্থের লেনদেন আছে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে টিটো বলেন, “যদি সিন্ডিকেট মিটিং করে তাদের নিয়োগ না দিতে পারে, তবে সেই অর্থ ফেরত দিতে হবে। অপরদিকে স্বাচিপের চিকিৎসক, শিক্ষক, বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই ধরনের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিতে বাধা দিয়ে আসছে। এখানকার ইট-পাথরও জানে, টাকা-পয়সা ছাড়া এখানে চাকরি হয় না, তিনি বিএসএমএমইউকে একটা ব্যবসা কেন্দ্র বানিয়েছেন।

“বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি গত তিন বছর ধরে ব্যাপক অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছেন, যা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। আমরা ভিসি শরফুদ্দিনের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগের স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি এবং উনার তিন বছরে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।”

নিয়োগ ঠেকানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা কোনোক্রমেই সিন্ডিকেট বসতে দিব না, যার কারণে সমবেত হয়ে প্রতিবাদ করছি। বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠানে কোনো দুর্নীতি করতে দেওয়া হবে না। আগামী ভিসি স্যার সুন্দরভাবে দুর্নীতি মুক্ত পরিবেশ তৈরি করে ক্যম্পাস পরিচালনা করবেন বলে আমরা আশা করছি। উনার প্রতি আস্থা আছে।”

নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিয়োগের বিষয়টি আগেই ফয়সালা হয়েছে, এখন সিন্ডিকেট বসার সিদ্ধান্তটাও আগেই নেওয়া হয়েছে। এখন যারা বিরোধীতা করছে তারা কেউ আমার কাছে আসে নাই।”

‘সবকিছু স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই হয়েছে’ বলে দাবি করেন তিনি।