“আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে আরেক দফা সময় বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আশা করি সময়টা বাড়বে,” বলেছেন একজন হাব নেতা।
Published : 16 Dec 2024, 12:07 AM
হজের প্রায় সাড়ে ছয় মাস বাকি থাকতেই প্রাথমিক নিবন্ধনের সময়সীমা আপাতত আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সময় আর না বাড়ালে ২০২৫ সালে হজ পালন করতে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ করা কোটার অর্ধেকের বেশি খালি থেকে যাবে।
মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের উপসচিব রফিকুল ইসলাম রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তথ্য দিয়ে বলেছেন, “হজের ডেট এখন আপাতত বাড়বে না। পরবর্তীতেও সময় বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
কোটা ফাঁকা থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কেউ যদি না যেতে চায়, আমরা কীভাবে আনব? আমরা তো যথেষ্ট… প্রায় সাড়ে তিন মাস সময় দিয়েছি।”
একইরকম তথ্য দিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দীক।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হজের জন্য প্রাথমিক নিবন্ধনের সময়সীমা আর বাড়ছে না। নতুন করে সময় বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
“ইতোমধ্যেই যারা নিবন্ধন করেছেন, তাদের অর্থ আমরা সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেব। না হয়, পরে তাঁবু বরাদ্দ পেতে অসুবিধে হয়, হোটেল থাকে দূরে। সেজন্য আমরা আগেভাগেই সৌদি আরবের অংশের খরচের অর্থ পাঠিয়ে দেব।”
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন হজের আনুষ্ঠানিকতা হবে। ‘প্রাথমিক নিবন্ধনের’ শেষদিন রোববার।
হাইকোর্টের রায়ে বহাল থাকা হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সবশেষ কমিটির সভাপতি ফারুক আহমেদ সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রণালয় থেকে হজের মূল প্যাকেজের খরচ কমানোর পরও কোটা পূরণ না হলে সেটা তাদের জন্যও অস্বস্তিকর।
“সৌদি অংশে বড়ো ধরনের কোনো অসুবিধা না হলে আমি আস্থা রেখে বলছি, আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে আরেক দফা সময় বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আশা করি সময়টা বাড়বে।”
অর্ধেকের বেশি কোটা পূরণ হয়নি
বাংলাদেশের জন্য ২০২৫ সালের হজে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সৌদি আরব সরকার।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, রোববার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত হজে যেতে প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন ৬৩ হাজার ১৩৮ জন।
এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমে ‘প্রাথমিক নিবন্ধন’ করেছেন ৪ হাজার ৭৬১ জন আর বেসরকারি মাধ্যমে করেছেন ৫৮ হাজার ৩৭৭ জন। এ হিসাবে প্রায় অর্ধেকের বেশি হজের কোটাই পূরণ হয়নি।
সময় ছিল সাড়ে তিন মাসের মত
হজের জন্য প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় ছিল প্রায় সাড়ে তিন মাসের মত।
গত ২৫ অগাস্ট ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ১ সেপ্টেম্বর থেকে হজের নিবন্ধনের সময় শুরু হবে। আর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ‘প্রাথমিক নিবন্ধন’ করতে হবে।
এরপর ৩০ অক্টোবর হজের প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “এতদিন হজ প্যাকেজ না থাকায় অনেকে নিয়ত করলেও নিবন্ধন করেননি। এবার দ্রুত করে ফেলুন। ৩০ নভেম্বরের পর নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না।”
পরে ওই সময়সীমা কমিয়ে ২৩ অক্টোবর করা হয়। তবে ২৪ অক্টোবর মন্ত্রণালয় জানায়, সময়সীমা ৩০ নভেম্বরই বহাল রাখা হয়েছে।
এরপর ২৮ নভেম্বর হজের ‘প্রাথমিক নিবন্ধনের’ সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেঁধে দেয় সরকার।
হজের ‘প্রাক নিবন্ধন’ ও ‘প্রাথমিক নিবন্ধনের’ জন্য ব্যাংকে অর্থ জমা দেওয়ার শেষদিন রোববার। সেটি উল্লেখ করে রাতে মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক এবং চূড়ান্ত নিবন্ধনের অর্থ জমা দেওয়ার জন্য যারা ভাউচার তৈরি করেছেন এবং যেসব ভাউচার ব্যাংকে জমা করার জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তারা মঙ্গলবার পর্যন্ত নিবন্ধনের অর্থ জমা করতে পারবেন।
এরপর আর নতুন কোনো হজযাত্রীর অর্থ জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
হজের ‘প্রাক নিবন্ধন’ যে কোনো সময় করা যায়। তবে ‘প্রাথমিক নিবন্ধন’ করা হয় আগের বছর।
সময় বাড়ানোর অনুরোধ এজেন্সিগুলোর
গেল কয়েকবছর ধরেই নিবন্ধনের সময় শুরুর পর দফায়-দফায় বাড়িয়েও হজের কোটা পূরণ হচ্ছে না। এজেন্সি মালিকরা বলে এসেছেন হজের প্যাকেজের মূল্য বেশি। এ বছর হজের মূল প্যাকেজের দাম কমলেও সব খরচ মিলিয়ে উল্টো প্যাকেজের মূল্য বেড়েছে বলে দাবি করেছেন এজেন্সি মালিকরা।
‘আফতাব ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’-এর স্বত্ত্বাধিকারী আফতাব উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোটা পূরণ না হওয়াটা আসলে সরকার এবং মন্ত্রণালয় এবং এজেন্সি মালিকদেরও ব্যর্থতা।
“কেন মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে? কারণটা হল- সৌদি আরবের পার্টটা, এটা এখনও প্রায় ৫ হাজার রিয়াল বাংলাদেশের মুদ্রায় যা প্রায় দেড় লাখ টাকা। এটা এখনও অনেক বেশি।”
হাব এর সাবেক এই নেতা বলেন, “২০১৬ সাল পর্যন্ত এটা ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৯ সাল থেকে এটা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হল। তখন মন্ত্রণালয় থেকে হাব নেতারা কেউ এটা নিয়ে টুঁ শব্দ করে নাই। ন্যূনতম যে কথা বলা এটা কেনো বাড়ানো হচ্ছে, সেটা জানতে চায়নি।
“সুবিধা কিন্তু আমার জানা মতে এক ইঞ্চিও বাড়েনি। হজের সুবিধার কোনো উন্নতি হয়নি সৌদি অংশে। আর তখন থেকেই আমাদের কোটা পূরণ হচ্ছে না।”
হজের প্যাকেজের মূল্যের জন্যই মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যেখানে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় উমরাহ করা যায়, সেখানে হজে যেতে ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা কীভাবে দেবে মানুষ?
“বর্তমান উপদেষ্টা আন্তরিক, তিনি টিকিটের দাম ২৭ হাজার টাকা কমিয়েছেন, এটুকু সার্থকতা। কিন্তু সব মিলিয়ে হাজী প্রতি যে খরচ হবে তাতে আগের তুলনায় বরং বেড়েছে ৪৫ হাজার টাকার মত।”
সময় আরো বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে আফতাব উদ্দিন বলেন, “মন্ত্রণালয় যদি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করতে পারে তাহলে ৭৬ থেকে ৮০ হাজার হজযাত্রী হবে। এবং এটা আমার কাছে অত্যন্ত যৌক্তিক মনে হয়।
“দেশের কয়েক জেলায় এ বছর বন্যায় মানুষের অনেক ক্ষতি হয়েছে। নাহয় নোয়াখালী থেকেই আরো অন্তত ১০ হাজার হাজী বেশি হত। আমার মনে হয় এই সময়টা মন্ত্রণালয় চাইলেই আরও বাড়াতে পারে।”
ছিল দুই প্যাকেজ
সরকারিভাবে হজে যাওয়ার জন্য গত ৩০ অক্টোবর দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে সাধারণ’ প্যাকেজ-১ এর সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। যারা সাধারণ প্যাকেজ-২ নেবেন, তাদের সর্বনিম্ন খরচ দিতে হবে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা।
এবার খাবারের খরচ হজ প্যাকেজে ধরা হয়নি। সেই হিসেবে আরও ৪০ হাজার টাকা খাবারের জন্য সঙ্গে নিতে হবে। কোরবানি বাবদ ৭৫০ সৌদি রিয়ালও আবশ্যিকভাবে সঙ্গে নিতে হবে।
প্যাকেজ-১ এ খরচ কমানো হলেও মক্কা ও মদিনা থেকে অনেকটাই দূরে আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে।
অন্যদিকে, গত ৬ নভেম্বর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে ইচ্ছুকদের জন্য ‘সাধারণ’ ও ‘বিশেষ’- দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল হজ এজেন্সির মালিকরা।
খাবার খরচ যুক্ত করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ঘোষিত সাধারণ হজ প্যাকেজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং বিশেষ হজ প্যাকেজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
বেসরকারি হজ প্যাকেজে শুধু কোরবানি বাবদ ৭৫০ রিয়ালের সমপরিমাণ অর্থ সঙ্গে নিতে হবে।