বিজিবি সদস্য তাকে প্রশ্ন করেন, “আপনে ইনডিয়া পালাইতাছেন কেন, বলেন।”উত্তরে মানিক বলেন, “ভয়ে পালাইতেছি।”
Published : 24 Aug 2024, 02:10 AM
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ‘অবৈধভাবে’ ভারতে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিজিবি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইলাম বলেছেন, শুক্রবার রাতে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা ও নোয়াখালীতে দুটি মামলা হয়েছে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে। দুই মামলাতেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য করার’ অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
১৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদুন নবী সাংবাদিকদের বলেন, "অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় দনা সীমান্ত থেকে আমরা আটক করেছি। উনাকে আইনি প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। শিগগিরই সংবাদমাধ্যমকে প্রেসনোট পাঠিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।”
তবে সাবেক এই বিচারপতির আটক হওয়ার সময়ের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ছড়িয়েছে। তাকে বিজিবির জিজ্ঞাসাবাদের সময়ের একটি ভিডিও সংবাদমাধ্যমেও এসেছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, প্যান্ট ও হাফ শার্ট পরিহিত শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক শুয়ে আছেন জঙলা এলাকায় কলাপাতার ওপর। তার কোলের কাছে একটি টুপি। মুখে কয়েক দিনের না কাটা দাড়ি। পাশে রয়েছে ছোট কয়েকটি পোটলা।
ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, “আমি তোমাদের পয়স দিয়ে দেব।”
একজনকে তখন বলতে শোনা যায় (তাকে ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছিল না): “আচ্ছা ঠিক আছে।”
বিচারপতি মানিক বলেন, “এই পয়সা আমি দেব, আমার ভাইবোন দেবে না, আমি দেব।”
ক্যামেরার পেছনে থাকা ওই ব্যক্তিকে তখন বলতে শোনা যায়, “আমাদের পয়সার কোনো প্রয়োজন নাই, ঠিক আছে? আপনি যদি সেইফটি, মানে…।”
মানিক তখন বলেন, “ওই ফালতু লোক দুইটারে আইনো না। আমি এই দেশে এত কষ্ট কইরা আইছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য?”
এই ভিডিও থেকে ধারণা পাওয়া যায়, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকতে পেরেছিলেন। সেখানে তিনি লুটপাটের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিজিবির হাতে আটক হওয়ার পর। তবে কীভাবে বা কেন তিনি ওপার থেকে আবার দেশে ফিরলেন, ভিডিওতে তা স্পষ্ট হয়নি।
বিজিবি সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিওতে দেখা যায়, মানিকের গলায় একটি গামছা, যেটা ধরে রেখেছেন একজন বিজিবি সদস্য।
তখন জানতে চাওয়া হয়, বাড়ি কোথায়? তিনি উত্তর দেন: বাড়ি মুন্সীগঞ্জ। নাম জিজ্ঞাসা করলে বলেন: “আমার নাম বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।”
তাকে প্রশ্ন করা হয়, কয়েকদিন আগে টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপককে ‘ই’ করা সেই মানিক তিনি কি না। উত্তরে তিনি ‘হ্যাঁ’ বলেন। বাবার নাম জানতে চাইলে বলেন, মরহুম আবদুল হাকিম চৌধুরী।
বিজিবি সদস্য তাকে প্রশ্ন করেন, “আপনে ইনডিয়া পালাইতাছেন কেন, বলেন।”
উত্তরে মানিক বলেন, “ভয়ে পালাইতেছি।”
“কার ভয়ে”, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রশাসনের ভয়ে।”
আওয়ামী লীগের সরকার পতনের কয়েক দিন আগে চ্যানেল আইয়ের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সঞ্চালককে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সমালোচিত হন সাবেক বিচারপতি মানিক।
সেই প্রসঙ্গ ধরে বিজিবি সদস্য প্রশ্ন করেন, “ওই একটা মেয়েরে যে বলছিলেন ইয়ের বাচ্চা…।”
মানিক তখন বলেন, “ওইটা আমি ক্ষমাও চাইছি।… এইযে দেখেন আমি বলি, আমি ইয়ের রোগী।”
বলতে বলতে নিচের শার্ট উপরে তুলে দেখাতে চান তিনি। পাশে থাকা বিজিবি সদস্য তখন বলেন, “মিডিয়াতে তো খুব সুন্দর সুন্দর…।“
এরপর শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আটক করার সময় তার সঙ্গে কী কী ছিল।
উত্তরে তিনি বলেন, তার সাথে ছিল ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলা পাসপোর্ট, টাকা আর কয়েকটি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড।
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, শুক্রবার আটক হওয়ার সময় ৪০ হাজার টাকা ছিল তার সঙ্গে।
বিজিবি সদস্য তখন প্রশ্ন করেন, “কালকে যে দুজন টাকা নিছে, ওদের কাছে কত টাকা ছিল?”
উত্তরে মানিক বলেন, “ওরা নিছে ধরেন, ষাট, সত্তরের মত নিছে।”
বিজিবি সদস্য প্রশ্ন করেন, “ষাট সত্তর লাখ?” উত্তরে মানিক বলেন, “হ্যাঁ।”
তখন প্রশ্ন করা হয়, “নৌকাওলা আর ওই দুজন নিছে?” উত্তর আসে, “না ওই দুই ছোকরা নিছে।”
বিজিবি সদস্য জানতে চান, “উনাদের ফোন নম্বর আছে আপনার কাছে?” মানিক উত্তর দেন, “না কিচ্ছু নাই, আমার ফোন নম্বর টোন নম্বর, সব নিয়ে গেছে।”
বিজিবি সদস্য প্রশ্ন করেন, “আপনি কত টাকা চুক্তিতে আসছেন?”
উত্তরে সাবেক বিচারপতি বলেন, “আমি ১৫ হাজার টাকা ওদের বলছিলাম। ওইটা আমি দিছি। কিন্তু পরে এই দুই ছেলে আমারে মাইরা ধইরা সব টাকা নিয়ে গেছে।”
পাশে থাকা আরেকজন সিলেটি উচ্চারণে প্রশ্ন করেন, “মাইরটা কুনজাগাত মারছে ভাইয়া? বর্ডারে আনিয়া মারছে?”
মানিক বলেন, “না ভিতরে… ইনডিয়ার ভিতরে।”
বিজিবি সদস্য প্রশ্ন করেন, “আপনি তো বাংলাদেশে অনেকের বিরুদ্ধে অন্যায় করছেন, জুলুম করছেন, এইটা সঠিক?”
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, “আমি জুলুম করি নাই, আমি বিচারপতি হিসেবে যেগুলো রায় দেওয়ার আমি দিছি।”
পুরনো খবর: