'ধর্ষণ': স্বীকারোক্তির পর ডিএনএ টেস্টে ভিন্ন ফল, আসামির জামিন

মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক ওই যুবক জামিনে থাকবেন বলে আদেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2022, 05:05 PM
Updated : 9 August 2022, 05:05 PM

কুমিল্লার একটি ধর্ষণের ঘটনায় প্রথমে স্বীকারোক্তি এবং সন্তান ভূমিষ্ঠের পর ডিএনএ পরীক্ষার ফল ভিন্ন হওয়ায় আসামিকে জামিন দিয়েছে হাই কোর্ট।

একইসঙ্গে আদেশে বলা হয়েছে, বিচারিক আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামি জামিনে থাকবেন।

কুমিল্লার দেবিদ্বারের বিনাইপাড় গ্রামে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের এক ধর্ষণ ঘটনায় মামলার অভিযুক্ত আসামির জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে সোমবার বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কায়েশের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।

আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. একরামুল হক বাকি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুদ্দিন খালেদ।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট ভিন্ন এসেছে, যে কারণে আদালত অভিযুক্তকে জামিন দিয়েছে।”

মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ জামিন বহাল থাকবে বলে আদালতের আদেশে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

২০২১ সালের অক্টোবরে মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তার যুবক ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। পরে কারাগারে থাকা অবস্থায় এক পর্যায়ে বিয়ের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন। তবে দুই পরিবারের মধ্যে এ নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় তা আর হয়নি।

জামিন আবেদনকারীর আইনজীবী বাকি জানান, ওই ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবককে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রুল দিয়েছিল হাই কোর্ট। সেই রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে আদালত।

তিনি বলেন, “এ রায়ের ফলে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪ এ ধর্ষণের অভিযোগে বিচারাধীন মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই যুবক জামিনে থাকবেন। এর অর্থ আসামির স্থায়ী জামিন পেলেন। আমরা আশা করছি বিচারিক আদালতেও আসামি ন্যায়বিচার পাবেন।”

আসামি বর্তমানে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

ধর্ষণ মামলা থেকে জামিন চেয়ে আসামি ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর হাই কোর্টে আবেদন করেন। ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর আসামিকে জামিন প্রশ্নে রুল দেয় আদালত।

পাশাপাশি আসামি ওই কিশোরীকে (১৬) বিয়ে করতে ইচ্ছা পোষণ করায় আদালত ওই আদেশে কুমিল্লা জেল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও দিয়েছিল।

পরে দুই পক্ষের সমঝোতা না হওয়ায় সেই বিয়ে আর হয়নি। এর আগেই কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আসামি আবেদন জানিয়েছিলেন। পরে আদালত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) ডিএনএ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়।

এরপর গত ১৩ জুন কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান।

আদালতে জমা দেওয়া সিআইডির ডিএনএ পরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, “ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যুবক (আসামি) কিশোরীর নবজাতক পুত্র সন্তানের জৈবিক পিতা নয়।”

এরপর ২৬ জুলাই ওই ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে হাই কোর্টে যুবকের পক্ষে সম্পূরক আবেদন করা হয়। এরপর গত ২৮ জুলাই আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার জামিনের এ রায় দিল আদালত।

মামলার তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর দেবিদ্বার থানায় ধর্ষণের অভিযোগে ওই যুবককে একমাত্র আসামি করে কিশোরীটির মা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ওই যুবককে ওই দিন রাতেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলায় ওই যুবকের বিরুদ্ধে ‘কৌশলে বিয়ের প্রলোভনে কিশোরীকে ধর্ষণের’ অভিযোগ আনা হয়।

এজাহারে বলা হয়, প্রতিবেশী ওই কিশোরীকে প্রথমবার ধর্ষণের পরও ভয় দেখিয়ে পরে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ওই যুবক। একপর্যায়ে কিশোরীটি অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। মামলা দায়েরের সময় কিশোরী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।