মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, “এক জায়গায় গিয়ে আপনি আটকা পড়ে যাচ্ছেন, সেখান থেকে বের হয়ে আসাতো এত সহজ না।”
Published : 09 Feb 2025, 07:51 PM
দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বাংলাদেশিরা মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করলে তাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করার কথা বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
একইসঙ্গে, রাশিয়ায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারির জন্য অনুরোধ জানানোর কথাও বলেছেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম।
রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আপনারা হয়ত জেনে থাকবেন, ইতঃপূর্বে সোলায়মান কবির নামক একজন বাংলাদেশি দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়ায় গিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসে অবস্থান নিলে, দূতাবাস তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
“অনুরূপভাবে বাংলাদেশ দূতাবাসে কেউ যদি যোগাযোগ করে এবং তাদের সমস্যার বিষয়টি জানায়, তাহলে দূতাবাস তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।”
বিমানবন্দরে সতর্কতা জারির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “চলমান রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের এই সময়ে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় ভ্রমণেচ্ছু বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য, অথবা যাদের পাসপোর্টে রাশিয়া ভ্রমণে বৈধ ভিসা আছে, তাদের জন্য দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।”
ভাগ্যবদলের আশায় দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে রাশিয়ায় গিয়ে ‘প্রশিক্ষণ শেষে’ যুদ্ধক্ষেত্রে নাটোরের সিংড়ার এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে খবর এসেছে পরিবারের কাছে। একই পরিবারের আরেকজন যুদ্ধ থেকে বাঁচাতে পরিবার ও দালালদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন।
নিহত যুবকের নাম মো. হুমায়ুন কবির (৩৩)। তিনি সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের মৃত মহসিন প্রামাণিকের ছেলে। তার ভগ্নিপতি মো. রহমত আলী এখন রাশিয়ায় আটকা।
একইভাবে রাশিয়ায় গিয়ে বিপদে পড়েছেন যশোরের জাফর হোসেনও। সদর উপজেলার চাঁচড়ার সরদারপাড়ার খায়রুল সরদারের ছেলে জাফর হোসেনকেও রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।
সারাদেশে এরকম আরও কয়েকজনের কথা জানা যাচ্ছে, যারা এখন রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছেন।
এদিকে রাশিয়ায় মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানী থেকে এক নারীকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির দাবি, তামান্না ‘ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড’ নামের একটি কোম্পানির অংশীদার। তিনি একটি মানব পাচার চক্রেরও সদস্য। চক্রটি রাশিয়ায় মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে কাজের প্রলোভনে ১০ জনকে পাচার করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, একটি বাংলাদেশি এজেন্সি রাশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকজন বাংলাদেশিকে রাশিয়ায় প্রেরণ করে। এক পর্যায়ে তাদেরকে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে জড়াতে বাধ্যও করা হয়।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়ার কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “একইসঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এবং এ ধরনের কাজে জড়িত রিক্রুটিং ও ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে।
“আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি, রাশিয়ায় মানবপাচারের সাথে জড়িত চক্রের একজনকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর দুই মাসের মাথায় ২০২২ সালের এপ্রিলে এক ফেইসবুক পোস্টে ঢাকায় রুশ দূতাবাস দাবি করেছিল, ইউক্রেইনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে লড়ার আগ্রহী অনেক বাংলাদেশির চিঠি পাচ্ছে তারা।
বাংলাদেশিদের এই আগ্রহকে ‘সাধুবাদ’ জানানোর কথা তুলে ধরে দূতাবাস বলেছিল, “আমরা বাংলাদেশি জনগণের এমন মহানুভব আহ্বানকে সাধুবাদ জানাই। অবশ্য, বিশেষ সামরিক অভিযান পরিকল্পনা অনুযায়ীই চলছে। উদ্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফলতার সাথেই অর্জন করছে রুশ সামরিক বাহিনী।
“ফলে ওই সামরিক অভিযানে বাংলাদেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবী যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।”
দূতাবাসের এমন বক্তব্যের পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্নে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ২০২২ সালের ওই ফেইসবুক স্ট্যাটাস তিনি দেখেননি। সে কারণে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই।
বাংলাদেশিদের যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়টি ঢাকার রুশ দূতাবাসকে জানানো হয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা এক ধরনের মানবপাচার। এই মানবপাচারে সরকারি কোনো ইন্ধন আছে বলে আমরা মনে করি না।
“সুতরাং আমাদের এখান থেকে যাতে মানুষ প্রতারণা শিকার হয়ে বের হয়ে যেতে না পারে সেজন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি সংস্থাকে অ্যালার্ট করেছি এবং অনুরোধ করেছি।”
ওই বাংলাদেশিদের যুদ্ধে বাধ্য করার বিষয়ে এক প্রশ্নে রফিকুল আলম বলেন, “এক জায়গায় গিয়ে আপনি আটকা পড়ে যাচ্ছেন, সেখান থেকে বের হয়ে আসাতো এত সহজ না।”
দালালের খপ্পড়ে পড়ে রাশিয়ায়, রণাঙ্গনে ‘বিক্রি’: এক বাংলাদেশির মৃত্যু, বাঁচার আকুতি দুইজনের