ঢাকার নিউ মার্কেট থানার এক হত্যা মামলায় বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম এই মালিককে মঙ্গলবার সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার করার তথ্য দেয় পুলিশ।
Published : 14 Aug 2024, 09:59 PM
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ১২টি দেশের মুদ্রা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে তার রিমান্ড আবেদনে বলেছে পুলিশ।
ঢাকার সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তারের পর সেখানে তাকে তল্লাশি করে এই বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা পাওয়া যায় বলে বুধবার রিমান্ড আবেদনের বর্ণনায় লিখেছেন তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. সজীব মিয়া।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হকার শাহজাহানকে (২৪) হত্যার অভিযোগে করা ঢাকার নিউ মার্কেট থানার এক হত্যা মামলায় বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম এই মালিককে মঙ্গলবার সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রিমান্ড আবেদনের বর্ণনায় বলা হয়েছে, সালমান এফ রহমানের কাছে থেকে ১২ হাজার ৬২৪ মার্কিন ডলার, ৬২০ সুইস ফ্রাঙ্ক, সাড়ে ৮ হাজার দিরহাম, উজবেকিস্তানের ১৩ লাখ সোম, ১১ হাজার ৬৫০ রিয়াল, ৭৭৯ সিঙ্গাপুরী ডলার, দেড়শ’ পাউন্ড, ১ হাজার ৩২১ ইউরো, ৫০ হাজার টাকা, ভুটানের ৬ হাজার ২৩০ গুলট্রাম, ১ হাজার রুপি, থাইল্যান্ডের ৩ হাজার ৩২০ বাথ জব্দ করা রয়েছে।
গ্রেপ্তারের সময় সালমান এফ রহমানের কাছ থেকে পাঁচটি সবুজ রঙের পাসপোর্ট ও একটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট পাওয়ার তথ্য রিমান্ড আবেদন যুক্ত করা হয়েছে।
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে ১৭ হাজার ৫১২ ইউএস ডলার, ৭২৬ সিঙ্গাপুরী ডলার ও তিনটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট পাওয়া গেছে বলে রিমান্ড আবেদন বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।
শাহজাহান আলী হত্যায় ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ এই দুই নেতাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মামুনুর রশিদের আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিকে আদালত সূত্রে জানা গেছে, সালমান ও আনিসুলের পক্ষে কয়েকজন আইনজীবী ওকালতনামা জমা দিতে গেলে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের তোপের মুখে তারা আদালত ছেড়ে চলে যান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে বুধবার হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরিয়ে ঢাকার আদালতে আনা হয়।
পূর্বাপর
গত ১৬ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার পাপোশ বিক্রেতা শাহজাহান হত্যার অভিযোগে তার মা আয়শা বেগম অজ্ঞাতদের আসামি করে এ মামলা করেন।
গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা এফ রহমান ও আনিসুল হককে রিমান্ডের শুনানিতে হাজির করতে বুধবার বিকালে আদালতে নেওয়া হয়।
কড়া নিরাপত্তায় বিকাল ৫টা ৫৬ মিনিটে তাদের আদালতে নিতে ঢাকার মিন্টো রোডের মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় বের করা হয়।
বিকাল সাড়ে ৬টার দিকে তাদেরকে ঢাকার মুখ মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়।
এর আগে সালমান-আনিসুলকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানটি আদালত প্রাঙ্গনে পৌঁছলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে তাদের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
এসময় আইনজীবী, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে।
রিমান্ড শুনানির জন্য এদিন আদালত প্রাঙ্গনে পুলিশের পাশাপাশি সেনা ও বিজিবি সদস্যদেরকে মোতায়েন করা হয়।
সালমান এফ রহমান ও আনিসুলকে মঙ্গলবার রাতে তাদেরকে গ্রেপ্তারের পরই হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল ডিবি।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার মাইনুল হাসান বলেছেন, নৌ-পথে ‘পালানোর সময়’ তাদের গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে হতাহতের ঘটনায় নিউ মার্কেট থানার এক মামলায় ‘ইন্ধনদাতা’ হিসেবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকমকে জানিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার ওই আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ পাওয়ার পর সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ৫ অগাস্ট আন্দোলনকারীদের ঢাকামুখী লং মার্চের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এরপর সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ আগেই দেশে ছেড়েছেন বলেও খবর আসে।
এফ রহমান ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে একই বিমানে দেশ ছাড়েন বলে এর আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তথ্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন ঢাকার পুলিশ তাকে সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তারের কথা বলছে।
আরও পড়ুন
হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে সালমান ও আনিসুল