দেশে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
Published : 03 Jan 2025, 12:13 PM
শীত তাড়াতে সকাল বেলাতেও মিরপুরের কালশী ফ্লাইওভারের নিচে বসে আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিচ্ছিলেন ছিন্নমূল রনি। রাতেও তার বসবাস এই উড়ালসড়কের নিচেই। রনির প্রয়োজন একটি মোটা কাপড়ের।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তরুণ বলেন, “আগুনের কারণে ঠাণ্ডা একটু কম লাগতেছে। একটা পাতলা সোয়েটারে তো হয় না। রাতে বেশি কষ্ট হয়, কাঁপতে থাকি, ঘুম হয় না। শীতের মোটা কাপড় পাইলে তো ভালোই হইত, কেউ তো দেয় না।”
শুক্রবারও আগেরদিনের মত ঘন কুয়াশার দাপট রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মত ঢাকায়ও বেড়েছে শীত। বেলা বাড়লেও সূর্যের দেখা মেলেনি রাজধানীতে।
দেশের ১৩ জেলার উপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শুক্রবার আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ এবং কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
এদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
আর ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পুরো জানুয়ারি মাস জুড়েই শীতের এমন তীব্রতা থাকবে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জানুয়ারি শীতের মাস, ঠাণ্ডা কমার সুযোগ নাই। সামনে আরও বাড়তে পারে। কখনো সূর্য উঠলে ঠাণ্ডা কম লাগবে, তারপর রোদ চলে গেলে আবার বাড়বে এমনই চলতে থাকবে।”
মিরপুর ১২ নম্বর এলাকায় ঠাণ্ডায় জবুথবু হয়ে রিকশায় বসে ছিলেন জাকির হোসেন।
এই রিকশাচালক বলেন, “চালাইতে গেলেই যে বাতাসটা আইয়ে শরীর কাঁপতে থাকে। একটা পাতলা শীতের কাপড় পরছি ভেতরে, এর বেশি তো আর নাইও।”
শীতের কারণে ক্রেতা সংকটের কথা জানিয়েছেন ভ্যান গাড়ির সবজি বিক্রেতা সবুজ। শীত বাড়ার কারণে ভ্যান নিয়ে একটু দেরিতে বসছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
“মানুষ আসে না। বিক্রি অনেক কম। ঠাণ্ডার কারণে আমিও ৮টার জায়গায় ৯টায় আসছি। এখন ১০টা বেজে যায় বাজার জমতে।”
সকাল সোয়া ৮টায় মিরপুরের সাড়ে এগারোর বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাফিজ আহমেদ, তার গন্তব্য কারওয়ান বাজার।
তিনি বলছিলেন, সকাল ৯টায় তার অফিস হলেও শীতের কারণে সময়মত তিনি ঘর থেকে বের হতে পারেননি।
“মনে হয় লেপের নিচে আরেকটু থাকি। সকাল সকাল উঠতে ইচ্ছা করে না, সোয়েটারে শীত মানছে না। কষ্ট হয়ে যায় আসলে, এমন শীতে ঘরে থাকলে ভালো হত; কিন্তু উপায় তো নেই- যেতেই হবে। অফিসে যেতে লেট হয়ে যাবে।“
তবে এই শীতে বেশি বিপত্তিতে পরার কথা বলছেন বাইক চালকরা। তারা বলছেন, তীব্র ঠাণ্ডা আর বাতাস আটকাতে পরনের জ্যাকেট হার মেনে যাচ্ছে।
নিয়মিত রাইড শেয়ারে বাইক চালান ইসমাইল হোসেন। পল্লবীতে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
ইসমাইল বলেন, আগে তিনি একটি শীতের কাপড় পরে বাইরে বের হলেও এখন তিনি দুটো জ্যাকেট পরছেন।
“বাইক চালাতে গেলে ঠাণ্ডা বাতাসে হাত অবশ হয়ে আসে; নড়াতে পারি না। সকালে বাইক চালানোর মতো পরিস্থিতি আর নাই। ঘর সংসার নিয়ে চলতে হয়, তাই বের হয়েছি।”
ব্যবসায়ী ওয়ালিউর রহমান বলেন, “জামার ওপর জ্যাকেট পরি, তার ওপর উইন্ডব্রেকার। হাতে মোজা, গলায় মাফলার থাকে, তারপরও শীত মানে না। গত দুইদিনেই হালকা সর্দি লেগে গেছে। বাইক ছাড়া উপায়ও নাই, বাসে বেশি সময় লাগে, সময়মত পাওয়া যায় না।”
আবহাওয়ার জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে এক থেকে দুটি মাঝারি থেকে তীব্র এবং দেশের অন্যান্য এলাকায় দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়; ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।