সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন গত ছয় মাস ধরে চিকিৎসাধীন এই আহতরা।
Published : 03 Feb 2025, 09:47 AM
দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে গভীর রাতে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে থেকে সরে গেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতরা।
পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মধ্যরাতে রাজধানীর মিন্টো রোডে যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে রাত ২টার দিকে তারা হাসপাতালে ফিরে যান।
সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন গত ছয় মাস ধরে চিকিৎসাধীন এই আহতরা।
তাদের মধ্যে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোর এবং সাভারের সিআরপিসহ বিভিন্ন সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহত ব্যক্তিরা আছেন।
জুলাই আন্দোলনের আহতদের জন্য সরকারি আবাসনের ব্যবস্থা করা, তাদের পরিচয়পত্র দেওয়া ও রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা; যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা; নারী যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা; বিনামূল্যে বিমান, রেল ও বাসে চলাচলের ব্যবস্থা করা, যানবাহন কেনায় শুল্ক-কর মওকুফ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক রাষ্ট্রীয় অতিথিশালাগুলো ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার কথাও রয়েছে তাদের দাবির মধ্যে।
হাসনাত আবদুল্লাহ তাদের কয়েকটি দাবি এক সপ্তাহের মধ্যে পূরণের আশ্বাস দেন এবং বাকিগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে রোববার রাত ১২টার দিকে সেখানে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি বিক্ষোভকারীদের সুচিকিৎসার জন্য আশ্বাস দিলেও হট্টগোল আর চিৎকারের কারণে ভালোভাবে কথাও বলতে পারেননি।
গত শনিবার রাজধানীর শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালের সড়কে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের এই বিক্ষোভ শুরু হয়। রোববার বেলা ১১টায় তারা সেখান থেকে সরে শ্যামলীর শিশুমেলার মোড়ে সড়কে বসে পড়েন। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা রওনা হন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে।
যাওয়ার পথে রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এরপর সেখানে বসেই বিক্ষোভ শুরু করেন শতাধিক আন্দোলনকারীরা। রাত পৌনে ১২টার দিকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে তারা যমুনার দিকে এগিয়ে যান।
তারা যমুনার সামনে পৌঁছালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহসহ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হন।
হাসনাত বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসা দেয়া হয়নি, এটা সরকারের ব্যর্থতা।
“এজন্য সরকারের আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি দায়ী। সচিবরা দায়ী, আমলারা দায়ী। যারা আহত হয়েছেন, তাদের আমরা সুচিকিৎসা দিতে পারিনি। এজন্য আমি নিজে ব্যথিত।”
এ সময় বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, “হয় স্বীকৃতি দিন, না হয় আমাদের গুলি করে মেরে ফেলুন। আমাদের স্বীকৃতি না দিলে আমরা আত্মহত্যা করব।”
সরকার আহতদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করবে– এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাসনাত বলেন, “অবিলম্বে যারা আহত তাদের সুচিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে করবে। আপনাদের এ দাবি আমি সরকারের কাছে জানাচ্ছি।”
হাসনাত আব্দুল্লাহ বোঝানোর সময়ই আহতরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।রাত দেড়টার পরও আহত বিক্ষোভকারীদের অনেককে যমুনার ঠিক সামনেই রাস্তায় অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের কেউ কেউ রাস্তায় শুয়ে ছিলেন। কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা।
পরে হাসনাত আবদুল্লাহর আশ্বাসে রাত ২টার দিকে যমুনার সামনের এলাকা ছেড়ে হাসপাতালে ফিরে যেতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।