আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে ইসির কঠোর বার্তা

গাইবান্ধা উপ নির্বাচন ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন’ নিয়ে সিইসির কাছে অভিযোগ করেছে জাতীয় পর্টি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2022, 06:50 PM
Updated : 6 Oct 2022, 06:50 PM

জেলা পরিষদ নির্বাচন ও সংসদীয় আসনের উপ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ‘হিড়িকের’ মধ্যে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানানোর পর ইসির এই হুঁশিয়ারি এল।

জাতীয় পার্টির অভিযোগ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়ে হুইপ, সংসদ সদস্যসহ সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন’।

আর নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, আচরণবিধি অনুসরণে ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীলদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে আচরণবিধি প্রতিপালনে সংসদ সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আগামী ১২ অক্টোবর হবে গাইবান্ধা-৫ উপ নির্বাচন; আর ৬১ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদের ভোট রয়েছে আগামী ১৭ অক্টোবর ।

এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরাই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী; জাতীয় পার্টিও অংশ নিচ্ছে। জেলা পরিষদের নির্দলীয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৭ জন এবং সদস্য পদে ৭৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে ৬১ জেলার মধ্যে দুটি জেলায় সব পদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং দুটি জেলা আদালতের আদেশে স্থগিত হয়েছে। সে কারণে ভোট হবে ৫৭ জেলায়।

এর মধ্যেই জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অভিযোগ জানাতে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে যায়। 

সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে চুন্নু বলেন, জেলা পরিষদ ও উপ নির্বাচনে ইসির কোনো ‘নজরদারি নেই’। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখতে তারা ভোটে অংশ নিচ্ছেন, তবে তারা ইভিএমের পক্ষে নন।

“এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সরাসরি নজরদারি দেখছি না…। নির্বাচন কমিশন থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপ আমরা দেখছি না।” 

সেই সঙ্গে উপ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের পাশাপাশি জেলা পরিষদের ভোটেও কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রাখার প্রস্তাব করেছে জাতীয় পার্টি।

চুন্নু বলেন, “আমরা দেখলাম মাননীয় হুইপ সেই গাইবান্ধা গিয়ে তাদের পক্ষে নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সেখানে নির্বাচন করছেন। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করেছে, অপমান অপদস্ত করেছেন; সঙ্গে যারা ছিল, তাদেরকেও আহত করেছে।”

Also Read: জেলা পরিষদ: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের ২৭ প্রার্থী

থানায় মামলা দিতে গেলে তা জিডি আকার গ্রহণ করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “মামলা নেয়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষের জনপ্রতিনিধিরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সরকার দেওয়া গাড়ি নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। জাপার প্রার্থীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে- জোর করে ভোট নিয়ে নেবেন; যারা এজেন্ট হবে তাদেরকে এলাকায় থাকতে দিবে না বলেও হুমকি দিয়েছে।

“এসব নিরসন করার জন্য এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনে সকল কেন্দ্রে যাতে সিসিটিভি ব্যবস্থা করাসহ এ সমস্ত বিষয়গুলি লিখিতভাবে আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দিয়েছি। “

অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টি প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে জানান মুজিবুল হক চুন্নু।

তিনি বলেন, “ইসির কাছে জাতির আশা রয়েছে। তারা বলেছেন, ভয় ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে, সৎ থেকে- ভালো নির্বাচন দেওয়ার মতন মানসিকতা আছে। ইচ্ছা আছে। সেই ইচ্ছার প্রতিফলনটা জেলা পরিষদ নির্বাচন এবং গাইবান্ধা ভোটে দেখতে চাই।”

Also Read: ফজলে রাব্বীর আসনে উপ-নির্বাচন ১২ অক্টোবর

ইভিএম নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, “আমরা ইভিএমের পক্ষে না। গাইবান্ধা-৫ উপ নির্বাচনটা ইভিএমে হবে। কিন্তু নির্বাচন বর্জন করাকে আমরা মনে করি, গণতন্ত্রকে ব্যাহত করবে।”

তার ভাষায়, ইভিএম ‘ফল উল্টে দেওয়ার মত’ একটা মেশিন বলে ‘পাবলিক পারসেপশন’ রয়েছে।

“কাজেই ইভিএমে নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সবসময়ই আপত্তি। আমরা ইভিএমে নির্বাচন চাই না।”

জাপার অভিযোগের পরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, “আমরা কড়া নির্দেশ দিয়েছি। যদি কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করে তাদেরকে বলতে হবে- আপনারা অতিসত্বর এলাকা ত্যাগ করবেন। … (যারা) দল পরিচালনা করে তাদের কাছেও বার্তা দেওয়া হয়ে গেছে যে, আপনাদের দলের কোনো সদস্য যাতে আচরণবিধি না ভাঙ্গে, সেজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।”

জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদেরও এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

“সে ব্যাপারে আমাদের কড়া নির্দেশ আমরা লিখিতভাবে দিয়েছি। শনিবার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বৈঠকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে একেবারে সামনাসামনি।”

এই কমিশনার জানান, যদি দেখা যায় যে কোনো কর্মকর্তা কোনো নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালনে গাফলতি করছে বা অবহেলা করছেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিকালে নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোথাও কোথাও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে এবং এ সংক্রান্ত খবর ইসির নজরে এসেছে।

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ কোথাও কোথাও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন, রঙিন পোস্টার মুদ্রণ করে প্রচার করছে এবং পোস্টারে নেতা-নেত্রীর ছবিও ছাপানো হচ্ছে। এছাড়াও রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিভিন্ন জনসভায় নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। 

“নির্বাচন কমিশন এসব আচরণ বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের আচরণ বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”