আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মানুষের জীবনমান উন্নত করতেও কাজ করছে সরকার, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
Published : 18 Dec 2022, 07:40 PM
পঁচাত্তরের ট্রাজেডিতে বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে হারানোর পর বিচারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরূপ এই অভিজ্ঞতায় যেন দেশে আর কাউকে পড়তে না হয়।
রোববার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি একথা বলেন।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি চাই, আমাদের মতো কেউ যেন আর বিচারহীনতায় কষ্ট না পায়। বাবা-মা, ভাই-বোন মারা গেল আর আমরা বিচার চাইতে পারবো না। আবার তাদেরকেই গণতন্ত্রের ধারক-বাহক বলা হয়।
“এটা সত্যিই জাতির জন্য, দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। এই রকম অবস্থায় যেন বাংলাদেশ আর কোনোদিন না পড়ে।”
আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আইনজীবীদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, তারা যেন তাদের মেধা, প্রতিভা, সততা, আন্তরিকতা দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করেন।”
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “আমাদের সব সময় প্রচেষ্টা ছিল যে সর্বোচ্চ আদালত স্বাধীনভাবে চলবে। তাই যার আর্থিক ব্যবস্থাপনা আগে ছিল সরকার প্রধানের হাতে, সেটা কিন্তু সম্পূর্ণভাবে আমরা সুপ্রিম কোর্টের হাতে দিয়ে দিই।
“আলাদা বাজেট বরাদ্দ দেই। সেই সাথে সাথে আমাদের বিচার বিভাগকে পৃথিকীকরণ সেটাও আমরা কার্যকর করে নীতিমালা প্রণয়ণের ব্যবস্থা করি। স্থায়ী আইন কমিশন গঠন করি।”
একটা আইন বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেন, “একটা আইন বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব অনেকে দিয়েছেন। আমার মনে হয় সেটাও আমরা করে দেব। এটা একান্তভাবে সবার জন্য দরকার।”
দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মানুষকে উন্নত জীবনমান দিতে কাজ করে যাওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বাবা-মা, ভাই-বোন সব হারিয়েছি। সেই হারানোর বেদনাকে সম্বল করেই কিন্তু এদেশে এসেছি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য। এখানে দুর্নীতি করে পয়সা বানাব, নিজের জীবনমান নিয়ে থাকব, এটার জন্য তো আসিনি।”
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ এবং পরবর্তীকালে তা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি বাংলাদেশের মানুষের মাথা নিচু হোক, মুখ ছোট হোক, বাংলাদেশ কোথাও লজ্জায় পড়ুক, অন্তত আমি বা আমার পরিবার, আমরা কেউ এ ধরনের কাজ করিনি, করবও না। এদেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি।”
তিনি বলেন, “ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। ফেডারেল কোর্ট কানাডা, রায় দিয়েছে, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। বিশ্ব ব্যাংকের সমস্ত অভিযোগ ভুয়া এবং মিথ্যা।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দেওয়া। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, দেশের আইনের শাসন হবে, মানুষ ন্যায় বিচার পাবে, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে। বাংলাদেশের মানুষ মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।”
এই আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মুকেশ কুমার রাসিক ভাই শাহ, বাংলাদেশে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক, আপিল বিভাগের বিচারক ওবায়দুল হাসান।
অনুষ্ঠানে ছয়টি শাখায় বিভাগীয় কর্মকর্তা তথা নিম্ন আদালতের বিচারকদের ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পদকপ্রাপ্তরা স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।
ব্যক্তিগত পদক পাওয়া বিচারকরা হলেন- জেলা ও দায়রা জজ শাখায়- চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছা, অতিরিক্ত জেলা জজ শাখায়- টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাউদ হাসান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ শাখায়- নওগাঁর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. খোরশেদ আলম, জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ শাখায়- চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ মোসা. রেশমা খাতুন ও সহকারী জজ শাখায়- রংপুরের সহকারী জজ মো. হাসিনুর রহমান মিলন।
দলগতভাবে পদক পাওয়া জেলা হলো- ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ। এই জেলার পক্ষে জেলা ও দায়রা জজ হেলাল উদ্দিন পদক নেন।
ব্যক্তিগতভাবে পদক পাওয়া প্রত্যেককে ২২ ক্যারেট মানের ১৬ গ্রাম স্বর্ণের পদক এবং ২ লাখ টাকার চেক এবং ময়মনসিংহ জেলাকে ২২ ক্যারেট মানের ১৬ গ্রাম স্বর্ণের পদক এবং ৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের ওপর একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ৫০টাকার একটি স্মারক নোট অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।