“সঠিকভাবে বলতে পারছি না। শুনেছি উপরে বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে বিস্তারিত জানি না.” বলেন তিনি।
Published : 22 Aug 2024, 05:50 PM
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলায় হঠাৎ ভয়াবহ বন্যার কারণ হিসেবে ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ করছে বাংলাদেশ সরকার।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের এক বৈঠক শেষে ত্রাণ ও দুর্যোগ উপদেষ্টা ফারুকী আজম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অবিরাম বৃষ্টিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনী কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৫০ উপজেলার ৩৫৭টি ইউনিয়ন। আট জেলার চার লাখ ৪০ হাজার ৮৪০ টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা।
উজানে ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বর্ষা মওসুমের শেষে ভাদ্র মাসে দেশে হঠাৎ ভয়াবহ বন্যা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েক নেতা ত্রিপুরায় গোমতী নদীর উজানে ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়াকে বন্যার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে।
বিষয়টি ভারত সরকারের নজরে এলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়াকে বাংলাদেশে বন্যার কারণ বলা হলেও বিষয়টি তথ্যগতভাবে সঠিক নয়।”
আরও পড়ুন-
বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে বন্যার কথা 'সঠিক নয়': ভারত
ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়া কিংবা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণেই বাংলাদেশে বন্যা কি না, বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে জানতে চাওয়া হয় ত্রাণ ও দুর্যোগ উপদেষ্টা ফারুকী আজমের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, “এটার বিষয়ে যোগাযোগ হচ্ছে। সঠিকভাবে এ বিষয়ে এখন বলতে পারছি না এবং এটা শুনেছি উপরে বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে বিস্তারিত জানি না।
“বাধ খোলা হয়েছে এটা পত্র-পত্রিকায় লিখেছে, বিভিন্ন মাধ্যমে আসছে। সরকারিভাবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হচ্ছে।”
বন্যার আগে বাংলাদেশ কোনো পূর্বাভাস পেয়েছিল কি না, সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা পেয়েছিলেন কি না সংশ্লিষ্টরা জানবেন। আমি তো ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের, আমার পক্ষে জানা সম্ভব না। আর এটা নিয়ে আজকে (উপদেষ্টাদের বৈঠকে) আলোচনাও হয়নি।
“বন্যা পুরাই আকস্মিক আকস্মিক। কেউ কেউ বলছে, আমাদের উপরে, উজান থেকে পানি আসছে, উজান থেকে মানে ভারতীয় অঞ্চল থেকেও পানি নেমে আসছে। এটা বন্যা যেরকম প্রাকৃতিকভাবে হয়, এটা দ্রুতই হয়েছে। পরিস্থিতি আমরা যেরকম পেয়েছি, গতকাল (বুধবার) সকাল থেকে বিকাল থেকে যেভাবে পানি বেড়ে যাচ্ছে, অনেক জায়গায় যাওয়া যাচ্ছে না। বাড়িতেও যাওয়া যাচ্ছে না।”
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের এক বৈঠক হয়। সেখানে চলমান বন্যা পরিস্থিতিসহ অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ফারুকী আজম।
“প্রথমত মানুষের জীবন বাঁচানো। এখনকার পরিস্থিতি হচ্ছে, সবার আগে মানুষের জীবন রক্ষা করা। সেখানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যাদের বন্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় অভিজ্ঞতা আছে, তারা কাজ করছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে তাদেরকে নিয়োজিত করা হয়েছে।
“সংস্কার আন্দোলনে যে সমস্ত ছাত্ররা ছিলেন, তারাও কাজ করছেন। স্বাভাবিকভাবে সরকার কাজ করছে, যাতে মানুষের জানমাল, গবাদিপশু ইত্যাদি রক্ষা করা যায়। এখানে ক্যাশ (অর্থ) এবং খাদ্যদ্রব্য পর্যাপ্ত আছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।”
বৃষ্টিপাত কমে পরিস্থিতি খানিকটা ঠিক হলে পুনর্বাসন কাজ শুরু করা হবে জানান ত্রাণ ও দুর্যোগ উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন-