দাবি মেনে নিতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল জাস্টিস ফর বিডিআর।
Published : 31 Jan 2025, 10:57 PM
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় কারাবন্দি বিডিআর সদস্যদের মুক্তি, হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করাসহ ছয় দফা দাবি তুলে ধরে জাস্টি ফার বিডিআর নামের একটি প্ল্যাটফর্ম বলেছে, দাবি মেনে না নিলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের আয়োজিত সামনে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত প্রায় ১৬ বছর ধরে ‘অন্যায়ভাবে’ ওই বিডিআর সদস্যদের আটকে রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহীন সরকার।
তিনি বলেন, “যেহেতু আমাদের ছয়টি দাবি যৌক্তিক সেহেতু দাবিগুলো অতিদ্রুত মেনে নেওয়া হোক। যারা কারাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হোক। শুধু তাই না, শহীদ, আহত ও কারাবন্দিদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
এ সময় দাবি মেনে না নেওয়া হলে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ বিডিআর পরিবারকে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলেছেন মাহিন।
বিডিআর পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমরা কোনো প্রকার ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে আসিনি। অন্যায় বিচারকে আমরা প্রশ্ন করতে এসেছি। আপনাদের সাথে করা অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।
“আপনাদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তাছাড়া, আপনাদের আবেগ নিয়ে যেন কেউ বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সেদিকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে।”
এর আগে ১৯ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর সদস্যদের দ্রুত মুক্তির দাবিসহ ছয় দফা দাবি জানান তারা।
সেদিন তারা দাবিগুলো মেনে নেওয়ার জন্য ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন।
তবে সবগুলো দাবি মেনে না নেওয়ায় এদিন তারা নতুন করে ৬ দফা দাবি জানাল।
সংবাদ সম্মেলনে জাস্টিস ফর বিডিআর এর নেতৃবৃন্দ এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ক্ষমতার পালাবদলের পর পিলখানা হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জোরালো দাবির মধ্যে ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর সাত সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনকে প্রতিবেদন দিতে তিন মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে যায় ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
২৩ জানুয়ারির ১৬৮ জন জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
দাবিগুলো হল-
>> ইতোমধ্যে হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত এবং সাজা শেষ হওয়া কারাবন্দি বিডিআর সদস্যদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসনের’ বিস্ফোরক মামলা বাতিল করতে হবে।
>> পিলখানার ভেতরে ও বাইরে ১৮টি বিশেষ আদালত ও অধিনায়কের সামারি কোর্ট গঠন করে যেসকল বিডিআর সদস্যদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের সকলকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
>> পিলখানা হত্যাকাণ্ড তদন্তে গঠিত কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত ‘ব্যতীত’ শব্দ এবং কার্যপরিধি ২ এর (ঙ) নম্বর ধারা বাদ দিতে হবে। একইসাথে স্বাধীন তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে অন্যায়ভাবে দণ্ডিত সর্বপ্রকার নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারণ উদঘাটন, মূল ষড়যন্ত্রকারী, হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
>> পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ‘শহীদ’ হওয়া ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, ১০ জন বিডিআর সদস্যসহ সর্বমোট ৭৪ জনের হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে কারাগারে মারা যাওয়া প্রত্যেক বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর সঠিক কারণ উন্মোচন করতে হবে। অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকলে দায়ী সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
>> স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারণকারী বিডিআর নাম ফিরিয়ে আনতে হবে।
>> পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সকল ‘শহীদের’ স্মরণে জাতীয় দিবস ঘোষণা করতে হবে এবং ‘শহীদ’ পরিবারের সর্বপ্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।