“সম্পর্ক বাড়ানো ছাড়া দ্বিতীয় কোনো চিন্তা নেই। আমরা এটাকে উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হিসেবে দেখি।”
Published : 09 Dec 2024, 11:47 PM
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এবং দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে ‘সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা’য় আগ্রহী।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আলোচনার বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে উদ্ধৃত করে সেখানে বলা হয়, “সম্পর্ক বাড়ানো ছাড়া দ্বিতীয় কোনো চিন্তা নেই। আমরা এটাকে উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হিসেবে দেখি।”
পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে আলোচনায় বিক্রম মিশ্রি বলেন, “আমরা যেখানে ছিলাম, সেখান থেকেই আবার শুরু করতে চাই।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নানা বিষয় নিয়ে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে সোমবার ঢাকায় আসেন বিক্রম মিশ্রি।
ওই বৈঠকের পর বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলেছে, প্রায় ৪০ মিনিটের ওই বৈঠকে সংখ্যালঘু প্রসঙ্গ, ‘অপতথ্য’ প্রচার, ক্ষমতাচ্যুত ‘স্বৈরশাসক’ শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং জুলাই-অআস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ককে ‘খুবই দৃঢ়’ ও ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে কিছু ‘মেঘ জমে ছায়া’ তৈরি করেছে। এই ‘কালো মেঘ’ মুছে ফেলতে ভারতের সাহায্য চান মুহাম্মদ ইউনূস।
আলোচনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গও উঠে আসে, যিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন।
প্রধান উপদেষ্টা গত ১৫ বছরের ‘নির্মম ও দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসনের’ বর্ণনা দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে বলেন, “আমাদের লোকজন উদ্বিগ্ন, কারণ তিনি সেখান (ভারত) থেকে অনেক বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।”
বিক্রম মিশ্রি বলেন, জুলাই-অগাস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রায় প্রতি ঘণ্টায় বাংলাদেশের ঘটনাবলী তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও জনতা কীভাবে এক হয়ে শেখ হাসিনার ‘দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের’ অবসান ঘটিয়েছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবকে দেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আমাদের কাজ হল তরুণদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা। এটি একটি নতুন বাংলাদেশ।”
অন্তর্বর্তী সরকার যেসব ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত রূপরেখাও বৈঠকে তুলে ধরেন ইউনূস।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব বিদেশি নেতা তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন সামনের সারিতে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে গণমাধ্যমের ‘বয়ান’ এবং ভারত সরকারের ধারণা ‘ভিন্ন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা আপনার সাফল্য কামনা করি।”
বিক্রম মিশ্রির ভাষায়, বাংলাদেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রয়েছে– এমন ধারণা ‘ভুল’।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট দলের জন্য নয়, বরং ‘সকলের’ জন্য।
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বন্যা এবং পানি ব্যবস্থাপনায় ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এবং সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে তার উদ্যোগে ভারতকে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সবার জন্য একটি সমৃদ্ধ নতুন ভবিষ্যত গড়তে চাই।”
বিক্রম মিশ্রি বলেন, ভারত সার্কের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেছে, ‘যদিও কিছু বাধা’ রয়েছে।
সংখ্যালঘু অধিকার প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের অধিকার রক্ষায় ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
তিনি বলেন, “আমরা একটি পরিবার। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব দাবি করেন, ভারত গত মাসে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসার সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে এবং আগামীতে এই সংখ্যা আরও বাড়াবে।
“আমরা আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই,” বলেন তিনি।