ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আগের মতই নির্ধারিত ফরম পূরণ করে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন হবে।
Published : 20 Dec 2022, 08:02 PM
আগামী বছর জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড পর্যায়ে ‘জন্ম ও মৃত্যু’ নিবন্ধন সেবা শুরুর আশা করছেন কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার উত্তর সিটি এবং ‘জন্ম ও মৃত্যু’ নিবন্ধকের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের পর এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে দুই পক্ষ।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কিছু বিষয় জানার ছিল। সেগুলো নিয়ে আমাদের কর্মকর্তারা ডিএনসিসির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম ওয়ার্ড পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া) আমাদের সায় আছে।”
উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘শিগগিরই’ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছে নিবন্ধনের এই কাজ হস্তান্তর করা হবে।
“তারা আমাদের গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন। বলেছেন ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ডসহ অন্যান্য বিষয় বুঝিয়ে দেবেন।”
তিনি বলেন, জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড সচিব দুজনের স্বাক্ষর লাগে। তবে ডিএনসিসি এলাকায় নতুন যুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডে এখনও সচিব নিয়োগ হয়নি। এটি প্রক্রিয়াধীন।
“আইন অনুযায়ী নিবন্ধন কার্যক্রমে নিবন্ধক এবং সহকারী নিবন্ধকের স্বাক্ষর লাগে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিবন্ধক এবং সচিব সহকারী নিবন্ধক। নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে সচিব না থাকায় সবগুলো ওয়ার্ডে শুরু করা যাচ্ছে না। ওয়ার্ড সচিব নির্বাচন ইতোমধ্যে হয়েছে। তাদের নিয়োগ দিলেই তাদের নামে ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড আসবে।”
এরপরই উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডে একসঙ্গে এ কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে জানান মো. জোবায়দুর।
তিনি বলেন, “জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে। জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই আমরা এটা সবগুলো ওয়ার্ডে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে দিব।”
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পেতে নাগরিকদের ভোগান্তির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ওয়ার্ড পর্যায়ে এই সেবা দেওয়া গেলে দুর্ভোগ কমবে জানিয়ে দীর্ঘদিন থেকে এ কার্যক্রমটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন কাউন্সিলররা। গত ২৭ অক্টোবর উত্তর সিটির ১৭তম বোর্ড সভায় বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পরে ২৯ নভেম্বর জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠায় উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন স্থানান্তরের জন্য ওয়ার্ডে কর্মরত ওয়ার্ড সচিবের অনুকূলে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় সেখানে।
মেয়র আতিকুল ইসলাম এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত সেবা নিতে নাগরিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হত। এ কারণে কাউন্সিলররা সেবাটি কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে দিতে চাইছিলেন।
“এ বিষয়ে ডিএনসিসির বোর্ড মিটিংয়ে অনুমোদন পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। ডিএনসিসিতে ১০টি অঞ্চল, কিন্তু আমরা সব জায়গায় এই সেবা দিতে পারছি না। ৬টি অঞ্চল থেকে দিতে পারছি। আমার কথা হচ্ছে অঞ্চলগুলো ছাড়া যদি ৫৪টি ওয়ার্ডেই আমরা সেবা দিতে পারি, তাহলে সেবার মান বাড়বে।”
মেয়র বলেন, “বাড্ডা, সাঁতারকুল থেকে মহাখালী আসতে হচ্ছে। বছিলায় যিনি থাকেন, তাকে কারওয়ানবাজারে আসতে হচ্ছে জন্মনিবন্ধন নিতে। কই বছিলা আর কই কারওয়ানবাজার! এতে সময় নষ্ট হচ্ছে, শহরে ট্রাফিক জ্যাম বেড়ে যাচ্ছে। ডিসেন্ট্রালাইজ করতে পারলে চাপ কমে যাবে।”
ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নিয়ম আগের মতই থাকবে জানিয়ে সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান বলেন, “নির্ধারিত ফরম পূরণ করবেন আবেদনকারী। আগে সেখানে স্বাক্ষর করতেন আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা, এখন ওয়ার্ড কাউন্সিলর করবেন।
“আগে অঞ্চল পর্যায়ে করা হত, এখন নাগরিকরা ওয়ার্ড থেকেই জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পাবেন। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ফিও আগের মতোই থাকছে।”
বর্তমানে জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনে কোনো টাকা দিতে হয় না। জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত নিবন্ধনে ২৫ টাকা, ৫ বছরের বেশি হলে ৫০ টাকা দিতে হয়।
এছাড়া জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য ১০০ টাকা, জন্ম তারিখ ছাড়া বাবা-মায়ের নাম, ঠিকানাসহ অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য ৫০ টাকা, বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মূল সনদ না তথ্য সংশোধনের পর সনদের কপি বিনামূল্যে, বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সনদের নকল সরবরাহের জন্য ৫০ টাকা ফি দিতে হয়।
জন্ম বা মৃত্যু সনদ পেতে ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ আছে নাগরিকদের। জনপ্রতিনিধির কার্যালয়ে নিবন্ধনে এ ধরনের অভিযোগ থাকবে কি না- সে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নানের কাছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আঞ্চলিক কার্যালয়ে জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে কোনো জনপ্রতিনিধি থাকেন না। বিভিন্ন মাধ্যম ধরে কাজটি করার ফলে দায়বদ্ধতার জায়গা থাকে না।
“আপনিও জানেন ঢাকায় জন্মনিবন্ধন করতে কত টাকা খরচ হয়। ওয়ার্ডে এলে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। কারণ জনপ্রতিনিধিরা জনগণের ভোটের আশা করেন। তাকে আবার নির্বাচন করতে হবে, এজন্য দায়বদ্ধতা থাকে।”
আরও পড়ুন