ডিএনসিসি: জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সেবা যাচ্ছে দোরগোড়ায়

উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, নিবন্ধনের কাজটি ওয়ার্ড পর্যায়ে গেলে মানুষের ভোগান্তি কমবে।

ওবায়দুর মাসুমজ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2022, 07:21 PM
Updated : 19 Dec 2022, 07:21 PM

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সেবা যাতে ওয়ার্ড পর্যায়ে মেলে, সেই উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

সেই লক্ষ্যে ওয়ার্ড সচিবের অনুকূলে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড চেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ। তাতে সায় আছে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়েরও।

মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে সংস্থা দুটি বৈঠক করবে, সব প্রস্তুতি সারা হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

এখন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়। উত্তর সিটির নতুন চারটি আঞ্চলিক কার্যালয় ৭, ৮, ৯ ও ১০-এ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম নেই।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পেতে নাগরিকদের ভোগান্তির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ওয়ার্ড পর্যায়ে এই সেবা দেওয়া গেলে দুর্ভোগ কমবে জানিয়ে দীর্ঘদিন থেকে এ কার্যক্রমটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন কাউন্সিলররা। গত ২৭ অক্টোবর উত্তর সিটির ১৭তম বোর্ড সভায় বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে গত ২৯ নভেম্বর জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ।

এ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পাঠানো ওই চিঠিতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম ওয়ার্ড পর্যায়ে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন স্থানান্তরের জন্য ওয়ার্ডে কর্মরত ওয়ার্ড সচিবের অনুকূলে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মেয়র আতিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত সেবা নিতে নাগরিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হত। এ কারণে কাউন্সিলররা সেবাটি কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে দিতে চাইছিলেন।

“এ বিষয়ে ডিএনসিসির বোর্ড মিটিংয়ে অনুমোদন পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। ডিএনসিসিতে ১০টি অঞ্চল, কিন্তু আমরা সব জায়গায় এই সেবা দিতে পারছি না। ৬টি অঞ্চল থেকে দিতে পারছি। আমার কথা হচ্ছে অঞ্চলগুলো ছাড়া যদি ৫৪টি ওয়ার্ডেই আমরা সেবা দিতে পারি, তাহলে সেবার মান বাড়বে।”

মেয়র বলেন, “বাড্ডা, সাঁতারকুল থেকে মহাখালী আসতে হচ্ছে। বছিলায় যিনি থাকেন, তাকে কারওয়ানবাজারে আসতে হচ্ছে জন্মনিবন্ধন নিতে। কই বছিলা আর কই কারওয়ানবাজার! এতে সময় নষ্ট হচ্ছে, শহরে ট্রাফিক জ্যাম বেড়ে যাচ্ছে। ডিসেন্ট্রালাইজ করতে পারলে চাপ কমে যাবে।”

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে এই কার্যক্রম শুরুর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি তারা নিয়ে রেখেছেন।

“রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে আমরা মিটিং করব। তারা আমাদের সঙ্গে কিছু বিষয় আলোচনা করতে চান। আলোচনার পর তারা একটা ডিসিশন হয়ত দিয়ে দেবেন। যেদিন অনুমোদন পাব, তার পরদিন থেকেই ওয়ার্ড পর্যায়ে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করতে পারব।”

ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নিয়ম আগের মতই থাকবে জানিয়ে জোবায়দুর রহমান বলেন, “নির্ধারিত ফরম পূরণ করবেন আবেদনকারী। আগে সেখানে স্বাক্ষর করতেন আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা, এখন ওয়ার্ড কাউন্সিলর করবেন।

“আগে অঞ্চল পর্যায়ে করা হত, এখন নাগরিকরা ওয়ার্ড থেকেই জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পাবেন। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ফিও আগের মতোই থাকছে।”

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) মো. রাশেদুল হাসান সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠক আছে, সেখানে আলোচনা হবে।

“বিষয়টি নিয়ে (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে দেওয়া) আমরা একমত হয়েছি। কাজটি কীভাবে হবে তা ঠিক হবে ২০ তারিখের মিটিংয়ে। এরপর তা ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।”

বর্তমানে জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনে কোনো টাকা দিতে হয় না। জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত নিবন্ধনে ২৫ টাকা, ৫ বছরের বেশি হলে ৫০ টাকা দিতে হয়।

এছাড়া জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য ১০০ টাকা, জন্ম তারিখ ছাড়া বাবা-মায়ের নাম, ঠিকানাসহ অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য ৫০ টাকা, বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মূল সনদ না তথ্য সংশোধনের পর সনদের কপি বিনামূল্যে, বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সনদের নকল সরবরাহের জন্য ৫০ টাকা ফি দিতে হয়।

জন্ম বা মৃত্যু সনদ পেতে ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ আছে নাগরিকদের। জনপ্রতিনিধির কার্যালয়ে নিবন্ধনে এ ধরনের অভিযোগ থাকবে কি না- সে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নানের কাছে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আঞ্চলিক কার্যালয়ে জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে কোনো জনপ্রতিনিধি থাকেন না। বিভিন্ন মাধ্যম ধরে কাজটি করার ফলে দায়বদ্ধতার জায়গা থাকে না।

“আপনিও জানেন ঢাকায় জন্মনিবন্ধন করতে কত টাকা খরচ হয়। ওয়ার্ডে এলে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। কারণ জনপ্রতিনিধিরা জনগণের ভোটের আশা করেন। তাকে আবার নির্বাচন করতে হবে, এজন্য দায়বদ্ধতা থাকে।”

সংশোধনের এখতিয়ারও চায় নগর সংস্থা

উত্তর সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্য সংশোধনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যেতে হয়। যে কোনো ধরনের সংশোধন যেন ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা করতে পারেন, সে বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।

তবে সংশোধনের এখতিয়ার এখনই সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয় পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) রাশেদুল হাসান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এটা পরে, এখন দেওয়া হচ্ছে না। এগুলো আস্তে আস্তে হবে।”