“৫২ সালের পর থেকে অনেক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনে এ রকম হত্যাযজ্ঞ কেউ করেনি”, বলেন তিনি।
Published : 02 Aug 2024, 08:12 PM
কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে প্রাণহানির দায় নিয়ে সরকারকে ‘ক্ষমা চেয়ে’ পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছেন অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘শিক্ষার্থী-জনতার দ্রোহযাত্রা’ কর্মসূচিতে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এই দাবি জানান।
আনু মুহাম্মদ বলেন, “যারা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল তাদের বিচার করতে হবে। এ হত্যাকাণ্ডের দায় শিকার করে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আমাদের প্রধান আলোচ্য বিষয়, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।”
‘গণগ্রেপ্তার’ বন্ধ, হত্যাকাণ্ডের বিচার, আটক শিক্ষার্থী-জনতার মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে এই কর্মসূচির ডাক আসে আগের দিন।
দ্রোহযাত্রা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে আনু মোহাম্মদ বলেন, “৫২ সালের পর থেকে অনেক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনে এ রকম হত্যাযজ্ঞ কেউ করেনি।
“সরকার ভেবেছিল এরকম নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালালে আন্দোলন দমে যাবে। কিন্তু প্রতিবাদ আরও বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের পাশে শিক্ষক, অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ দাঁড়িয়েছে।”
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই থেকে চার দিনে দেশে সহিংসতায় সরকারি হিসাবেই দেড়শ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে কারফিউ আরোপ করে সরকার। তবে কারফিউয়ের মধ্যেও সংঘাত চলে দুই দিন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, “আমরা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। এ রকম নারকীয় আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো দেখিনি।“
বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের যে পরিমাণ ‘ক্ষতি করেছে’, আর কোনো সরকার এত ক্ষতি করেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধকে জনগণের হাতে ফেরত নিয়ে আসতে হবে।”
দেশকে এ সরকারের কাছ থেকে ‘মুক্ত করতে’ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষ একত্রিত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আর কাউকে ‘ব্যবসা’ করতে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে জনতার হাতে আনতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রকৃত জায়গায় ফিরিয়ে নিতে হবে।”
বাংলাদেশের মানুষ এখন ‘মুক্ত বাংলাদেশের জন্য’ লড়াই করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী বিকাল পৌনে চারটায় জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে রওনা হয়।
মিছিলকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর প্রবেশমুখে পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলে। সেখানে শ খানেক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদেরকে বাধা দিতে দেখা যায়নি।
সবাই বৃষ্টির মধ্যেই প্রায় আড়াই ঘণ্টা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে ‘শহিদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই', 'শেখ হাসিনার গদিতে, আগুন জ্বালাও একসাথে', 'রক্তের দাগ দিচ্ছে ডাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক' - বলে স্লোগান চলে।
বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিক্ষোভকারীরা শহীদ মিনারে ত্যাগ করেন।
এর আগে প্রেস ক্লাব এলাকায় পুলিশের দাঁড়িয়ে থাকা এক সাঁজোয়া যানে উঠে দুই শিক্ষার্থী গ্লাসে লাল রং মাখিয়ে দেয়।
আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ সাঁজোয়া যান ঘেরাও করে। তখন পুলিশদেরকে আন্দোলনকারীদের সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে দেখা যায়।