তদন্ত ছাড়া চিকিৎসক গ্রেপ্তার, বিএমডিসির পদক্ষেপ চায় বিএমএ

অভিযোগের তদন্ত ছাড়া গ্রেপ্তার ও হয়রানিতে চিকিৎসকরা সংক্ষুদ্ধ ও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2023, 01:16 PM
Updated : 20 June 2023, 01:16 PM

কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়া চিকিৎসকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ মেডিকেল আন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।

ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে এক প্রসূতির চিকিৎসায় অবহেলার কারণে মৃত্যুর অভিযোগে দুই চিকিৎসক গ্রেপ্তার হওয়ার পরই এমন পেশাজীবী চিকিৎসকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এমন চিঠি এল।

অভিযোগের তদন্ত ছাড়া গ্রেপ্তার ও হয়রানিতে চিকিৎসকরা সংক্ষুদ্ধ ও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে বলে এতে বলা হয়েছে।

সংগঠনটি কোনো চিকিৎসকের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগেই চিকিৎসকদের হয়রানি না করতে দেশে চিকিৎসক ও চিকিৎসা পেশার তদারকি সংস্থা বিএমডিসিকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে।

ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে গত রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কুমিল্লার তরুণী মাহবুবা আক্তার আঁখি। যিনি স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে ৯ জুন ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে এসেছিলেন। এ ঘটনায় করা মামলায় বৃহস্পতিবার ডা. সংযুক্তা সাহার দুই সহযোগী ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেপ্তার করে ধানমণ্ডি থানা পুলিশ। ওইদিনই তাদের কারাগারে পাঠায় আদালত।

এ ঘটনার পর সোমবার বিএমএর সহ সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলমের স্বাক্ষরে বিএমডিসিতে ওই চিঠি পাঠানো হয়। এতে বিনা তদন্তে শুধু রোগীর স্বজনদের অভিযোগ এবং গণমাধ্যমের অপপ্রচারের ভিত্তিতে চিকিৎসকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “রোগীর স্বজনদের অভিযোগ ও গণমাধ্যমের অপপ্রচারের ভিত্তিতে চিকিৎসকদের প্রায়ই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সম্প্রতি সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুইজন চিকিৎসকসহ সারাদেশে আরও কয়েকজন চিকিৎসককে এভাবে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করেছে প্রশাসন।”

চিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চা সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ গোপনীয় পেশা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, “চিকিৎসা পেশাজীবীদের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে বিএমডিসি। রোগী বা স্বজনদের কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে চিকিৎসকদের অপরাধ আছে কি না তা বের করার দায়িত্ব বিএমডিসির। কিন্তু কোনো প্রকার তদন্তের আগেই বিষয়টি মিডিয়ায় এমনভাবে প্রচারিত হয় যাতে জনমনে চিকিৎসকদের প্রতি ঘৃণা ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

“এমন অভিযোগের ভিত্তিতে চিকিৎসকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করায় সারা দেশের চিকিৎসকরা সংক্ষুদ্ধ ও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে। মানুষের জীবন মৃত্যু ও বেঁচে থাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত পেশাজীবীরা যদি নিজেরাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং ভয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে অন্যত্র রেফার্ড করতে থাকে তাহলে চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরপুরি ভেঙ্গে পড়বে।”

বিএমএ বলছে, চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধান করার সাংবিধানিক দায়িত্ব বিএমডিসির যা প্রতিষ্ঠানটি কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারে না। এই দায়িত্ব অস্বীকারের মাধ্যমে বিনা তদন্তে চিকিৎসকদের জেল হাজতে পাঠানো অব্যাহত থাকলে বিএমডিসির কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হবে, প্রতিষ্ঠানটি সার্বভৌমত্ব হারবে।

চিঠির প্রসঙ্গে ডা. শেখ বাহারুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৮৮ ধারায় চিকিৎসাজনিত দুর্ঘটনায় চিকিৎসকদের দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তারপরও অবহেলার অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করে চিকিৎসকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

“কোনো সার্জারি করার সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কোনো চিকিৎসক রোগীকে মেরে ফেলার জন্য চিকিৎসা দেয় না। দেখতে হবে চিকিৎসক যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল কি না। এজন্য তদন্ত করতে হবে। কিন্তু তদন্ত করে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত চিকিৎসককে দায়মুক্তি দিতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই তাকে গ্রেপ্তার চিকিৎসকের প্রতি অমানবিক আচরণের সামিল। বিএমডিসি যেন সবপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সেজন্য আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি।”

বিএমডিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. লিয়াকত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চিঠিটি এখনও আমি পাইনি। তবে পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে বিএমএ চিকিৎসকদের প্রটেকশন নিয়ে কথা বলবেই। এটা স্বাভাবিক।”

এদিকে গাইনি চিকিৎসকদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান হয়।

বিবৃতিতে প্রসূতি ও নবজাতকের অপ্রত্যাশিত ও অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বলা হয়, “একইসাথে সেন্ট্রাল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করায় নিন্দা  জানাচ্ছে। ওজিএসবি অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত চিকিৎসকদের মুক্তির দাবি  জানাচ্ছে।”

আরও পড়ুন

Also Read: সেন্ট্রাল হাসপাতালে সন্তান হারানো আঁখিও চলে গেলেন

Also Read: ‌‘ভালো’ চিকিৎসা নিতে এসে হারালেন সন্তান, নিজেও সিসিইউতে

Also Read: নবজাতকের মৃত্যু: সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক কারাগারে

Also Read: সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব অস্ত্রোপচার বন্ধ

Also Read: সোশাল মিডিয়ায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রচারে মানা

Also Read: পসার বাড়াতে সোশাল মিডিয়ায় প্রচারে চিকিৎসকরা, কতটা নীতিসিদ্ধ?