ইসরায়েলের সব সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।
Published : 07 Apr 2025, 10:12 PM
গাজায় ইসলায়েলি দখলদার বাহিনীর নৃশংস বোমা হামলার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের জোরালো প্রতিবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও।
সোমবার এক বিবৃতিতে নির্বিচার হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র প্রতিবাদ করার পাশাপাশি অবিলম্বে হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর অব্যাহত গণহত্যা এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
“গত মাসে একতরফা যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘনের পর থেকে চলমান ইসরায়েলের সামরিক হামলা অনেক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা ঢোকার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় মানবিক দুর্যোগ তৈরি হয়েছে।”
সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইসরায়েলি হামলার নিন্দায় বাংলাদেশ সরকার বলছে, “এটা সুস্পষ্ট যে, অব্যাহত আন্তর্জাতিক আহ্বানের কোনো তোয়াক্কা করছে না ইসরায়েল এবং উল্টো ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।
“ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের প্রকাশ্য অভিপ্রায় নিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর নির্বিচার বোমাবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে বাংলাদেশ।”
বছর দেড়েক আগে হামাসের হামলার বদলা নিতে ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবরের পর থেকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূ-খণ্ড গাজায় একের পর এক হামলা অব্যাহত রেখেছে তারা। যেখানে দিনে দিনে কেবল দীর্ঘ হয়েছে লাশের সারি। বেড়েছে আহতদের আর্তনাদ, উঁচু হয়েছে ইমারতের ধ্বংসস্তূপ।
এ হামলার বিরুদ্ধে বছরখানেক ধরে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধবিরোধী মিছিল হয়েছে, নানা প্রান্তের মানুষ যে যার শহরে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এক কাতারে দাঁড়িয়েছে, হয়েছে যুদ্ধবিরতিও। কিন্তু সেই বিরতি ভেস্তে গিয়ে আবারও রক্তাক্ত হয়েছে গাজা।
নির্বিচার এই হামলার মধ্যে ইসরায়েলি বর্বতার দুই মর্মান্তিক দৃশ্য চোখের সামনে দেখেছে বিশ্ববাসী। এর একটিতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বোমার উড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের সঙ্গে পাখির মত উড়ে যেতে দেখা গেছে মানুষকে।
আরেকটি ঘটনায়, পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরও রেডক্রসের ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ভুল স্বীকার করে তারা।
হামাসের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতি একতরফাভাবে লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের এই হামলায় প্রতিবাদমুখর হয়েছে বিশ্বের মানুষ; সোমবার বাংলাদেশেও বিক্ষোভ, প্রতিবাদ আর কর্মবিরতির মত নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
এর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েলের সব সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ, সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক মানবিকতা আইন মেনে চলার দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ।”
বিবৃতিতে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে এবং সব ধরনের সংঘাত বন্ধে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে নৈতিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা প্রতিপালনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষে এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানার আলোকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের গঠনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির প্রয়োজনে সংলাপের প্ল্যাটফর্ম পুনরায় চালুর প্রয়োজনীয়তা বিবৃতিতে তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য এখানকার স্থায়ী শান্তি জরুরি।
“ফিলিস্তিনি জনগণের উপর সহিংসতা ও দুর্ভোগ থামাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে কূটনীতি ও সংলাপের পথে আহ্বানও বাংলাদেশ জানাচ্ছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাব এবং শান্তি, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের বিষয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষার আলোকে দুই রাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বানের ক্ষেত্রেও আগের মত অবিচল ও দ্ব্যর্থহীন অবস্থানে বাংলাদেশ রয়েছে।”