সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রীকে গত ২৪ অগাস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার কারখানার যন্ত্রপাতি পর্যন্ত লুট করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গাজী টায়ারস।
Published : 27 Oct 2024, 10:48 PM
গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর রাজধানীর বাসায় ঢুকে ভাঙচুর ও বেশ কিছু মালামাল নিয়ে আসার অভিযোগ উঠেছে গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে।
শনিবার রাত ২টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ১০ থেকে ১৫ জন ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর ওই বাসায় গ্রিল কেটে ঢুকে ও কক্ষের তালা ভেঙে সবকিছু ‘তছনছ’ করে বলে অভিযোগ করেন বাসার নিরাপত্তাকর্মী আবুল হোসেন।
গভীর রাতে ‘জোর করে পুলিশ প্রবেশের’ বিষয়ে সন্দেহ করলে তখনই রমনা থানা পুলিশের কাছে যান গাজী গ্রুপের এক কর্মকর্তা। তার ভাষ্য, তখন রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক বলেছেন, ডিবি পুলিশ অভিযানে গেছে।
নিরাপত্তাকর্মী আবুল হোসেন বলেন, “রাত ২টার দিকে পুলিশের পোশাক পরা দুইজনসহ ১০-১৫ জনের একটি টিম এসে গ্রিল কেটে ঢুকে। তারা বাসার প্রত্যেকটি রুমের তালা ভেঙে ঢুকে বাসার সবকিছু তছনছ করে ও ২-৩ টি ব্যাগ ভরে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায়।”
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) একজন কর্মকর্তা এমন অভিযান চালানোর তথ্য দেন। তবে আরেকজন দাবি করেছেন, তারা কিছু জানেন না।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “থানার পুলিশ ওই বাসায় যায়নি, গেলে আমি জানতাম।”
তবে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, “এটা ডিবি পুলিশের নিয়মিত অভিযান ছিল।”
তবে কেন এই ‘নিয়মিত অভিযান’ আর কী কী মালামাল আনা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি এই কর্মকর্তা।
তালা ভেঙে প্রবেশ বা বিভিন্ন মালামাল লুটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়গুলো আমার জানা নেই।”
আবার সিদ্ধেশ্বরী এলাকাটি ডিবি রমনা বিভাগের আওতাধীন হলেও এ ধরনের কোনো অভিযান চালানোর কথা অস্বীকার করেছেন ডিবি রমনা বিভাগের উপকমিশনার খন্দকার মো. শামীম হোসেন।
তিনি বলেন, “আমার টিম এমন কোনো অভিযানে যায়নি। আমার টিম অভিযানে গেলে আমি জানতাম।”
ঘটনার বিবরণে নিরাপত্তাকর্মী আবুল হোসেন বলেন, “রাত দুইটার দিকে বাড়ির দক্ষিণ পাশের গেইটে প্রথমে ৪-৫ জন এসে বলে, ‘থানার লোক, গেট খোলেন’।
“বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় আমি সাথের আরেকজনের সঙ্গে বিষয়টি আলাপ করি। সে বলে পুলিশ পরিচয়ে চুরি-ডাকাতি হয়, যেন গেট না খুলি।”
পরে গেট তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে দেয়াল টপকে তারা দুই জন পাশের বাড়িতে চলে যান। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখেন, পুলিশ পরিচয়ে আসা একজন দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে পড়েছেন। এরপর গেটের তালা ভেঙে আরও ১০-১২ জন ভেতরে ঢুকেন। এরপর গ্রিল কেটে দোতলায় উঠে যান তারা।
আবুল হোসেন বলেন, “উপরের ৫ টি রুমের সবগুলো তালা ভাঙছে, তারপর রুমের ভেতরে এমন কোনো জিনিস নাই যে তারা হাত দেয় নাই। সবকিছু তছনছ করে রেখে গেছে। নিচের ৫ টি রুমে তালা ছিল না, সেই রুমগুলোতে ঢুকেও সবকিছু এলোমেলো করে রেখে গেছে।”
পরে ভোর ৫ টার দিকে তারা ২-৩ টি ব্যাগে ভরে মালামালসহ বেরিয়ে একটি কালো গাড়িতে করে চলে যায় বলে জানান তিনি।
সকালে আবুল হোসেন বাসায় এসে সবকিছু এলোমেলো দেখতে পান জানিয়ে বলেন, “জিনিসপত্র অগোছালো অবস্থায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে খাট ও মেঝেতে পড়ে আছে। প্রতিটি কক্ষের আলমারি ভাঙচুর করা হয়েছে। স্বর্ণালংকার রাখার বাক্সগুলো খালি পড়ে আছে। এখন সবকিছু এভাবেই পড়ে আছে। মালিকপক্ষের কেউ আসে নাই, পুলিশেরও কেউ পরে আর আসে নাই।”
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেন, “আমি ঢাকার বাইরে আছি, বিষয়টি আমি অবগত নই।”
এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
গত ২৪ অগাস্ট রাতে আওয়ামী লীগ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী, গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাব পাওয়া এই রাজনীতিক নবম থেকে শুরু করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রিত্ব পাননি।
গোলাম দস্তগীর দেশের অন্যতম শিল্প উদ্যোগ গাজী গ্রুপেরও কর্ণধার। গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী এলাকায় গাজী গ্রুপের টায়ারস কারখানায় একাধিক লুটপাট চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়।
লুটপাট করতে গিয়ে নিখোঁজ আছেন ১৮২ জন। তারা আগুনে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাদের কেনো দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি।
গাজীর দুই ছেলেই দেশের বাইরে আছেন। তার স্ত্রী আত্মগোপনে আছেন।
পরে রাত পৌনে ১১ টার দিকে এ ঘটনায় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
এতে তিনি বলেন, “ডিবির নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে একটি টিম আইন ও বিধি অনুসরণ পূর্বক গোলাম দস্তগীরের বাসায় তল্লাশি চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে উক্ত বাসার দারোয়ান পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তায় উক্ত বাসা তল্লাশি অভিযান সমাপ্ত করে ডিবির টিম ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।”
সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এজাহারনামীয় আসামি গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অংশ হিসেবে এ অভিযান পরিচালনার কথা উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, “ডিবির উক্ত তল্লাশি অভিযান সম্পর্কে কোনো রকম বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। ভবিষ্যতে ডিবির যে কোনো অভিযানের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অধিকতর বস্তুনিষ্ঠতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি।”
আরও পড়ুন
গাজী টায়ার্সে আগুন: লুটপাটে নেমে পড়ে বাসের যাত্রীরাও
গাজী টায়ারস: ২১ ঘণ্টায়ও নেভেনি আগুন, লুটপাট চলছেই
গাজী টায়ারসে আবার লুটপাটের পর আগুন
গাজী টায়ারসে আগুন: প্রতিবেদনেও নিখোঁজ ১৮২, 'ধামাচাপার' অভিযোগ