স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা; স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন এবং আদালত অঙ্গন দলীয় প্রভাবমুক্ত করার মত সুপারিশও কমিশন করেছে।
Published : 09 Feb 2025, 12:53 AM
কয়েকটি ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ প্রস্তাবসহ বিচার বিভাগ সংস্কারে একগুচ্ছ সুপারিশ পেশ করেছে এ বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশন।
‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ সুপারিশের মধ্যে আছে আদালতে চূড়ান্তভাবে দণ্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি বা নির্বাহী বিভাগের ক্ষমা করার একচ্ছত্র
ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ; প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারকদের নিয়োগ এবং নিয়োগের যোগ্যতা পরিবর্তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংবিধানের বিধানগুলো সংশোধন; স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা; বিভাগীয় শহরে হাই কোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ গঠন।
আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হল স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, জেলা আদালতের সম্প্রসারণ, আইন শিক্ষার সংস্কার, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ ও আদালত অঙ্গন দলীয় প্রভাবমুক্ত করা।
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান নেতৃত্বাধীন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনটি ৩৬৩ পৃষ্ঠার। প্রস্তাবের সারসংক্ষেপসহ মোট ৩২ অধ্যায়ে কমিশনের সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা
বর্তমানে দণ্ড মার্জনা, দণ্ড মওকুফ, দণ্ড হ্রাস, দণ্ড স্থগিত এবং দণ্ড বিলম্বের বিষয়গুলো সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ এবং ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১, ৪০২ ও ৪০২ক ধারা অনুসারে পরিচালিত হয়।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার অপব্যবহার করছে তা সর্বজনবিদিত। রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচার কাজ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়েছে, একই অপরাধীকে দুবার ক্ষমা প্রদর্শনের ঘটনাও ঘটেছে।”
ক্ষমা প্রদর্শনের এই ঘটনাগুলো দেশে আইনের শাসনের ধারণাকে ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে’ বলে মনে করছে কমিশন। তাই রাষ্ট্রপতির এ ক্ষমতাতে সীমিত করতে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সেখানে ‘ক্ষমা প্রদর্শন আইন’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করা এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ অন্যান্য সব নির্বাহী ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা এই আইনের মাধ্যমে প্রয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। ক্ষমা প্রদর্শন আইনের মাধ্যমে একটি ক্ষমা প্রদর্শন বোর্ড গঠন করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকার গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে গঠিত ক্ষমা প্রদর্শন বোর্ডের সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করবে। এ বোর্ড বছরে ন্যূনতম দুইবার, জানুয়ারি ও জুলাই মাসে, সভায় মিলিত হবে। আগ্রহী দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি নির্ধারিত ফরমে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর ক্ষমা প্রদর্শনের আবেদন করবেন।
সকল আবেদন যাচাই-বাছাই করে অ্যাটর্নি জেনারেল ক্ষমা প্রদর্শন বোর্ডের সভা ডাকবেন। ক্ষমা প্রাপ্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণে বোর্ড একমত না হতে পারলে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
গৃহীত সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতি বা সংশ্লিষ্ট নির্বাহী দপ্তরকে অবহিত করা হবে। বোর্ডের গৃহীত সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি বা সংশ্লিষ্ট নির্বাহী বিভাগ ক্ষমা প্রদর্শন করবে।
অ্যাটার্নি জেনারেলের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বোর্ড গঠিত হবে, যার অন্য সদস্যরা হবেন জাতীয় সংসদ কর্তৃক মনোনীত একজন করে সরকার ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য, কারা মহাপরিদর্শক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মনোনীত একজন সিভিল সার্জন ও এ মন্ত্রণালয় মনোনীয় একজন মনোবিদ।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ ও শৃঙ্খলা
সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের প্রাধান্য এবং আপিল বিভাগের কাজে প্রবীণতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান প্রণয়ন; যথাসম্ভব স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের জন্য প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ কমিশন’ গঠনের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আনুষ্ঠানিকভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, সাবেক বিচারক এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য প্রযোজ্য পদ্ধতি ছাড়া অপসারণযোগ্য নন এমন পদে আসীন ব্যক্তিদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রকাশ; রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুরোধ ছাড়াও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত পরিচালনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার ক্ষমতা কাউন্সিলকে দিতে বলা হয় প্রতিবেদনে।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ ও চাকরির শর্ত
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (পে-কমিশন) বিধিমালায় পে-কমিশন গঠন এবং বিচারকদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত নতুন সুপারিশ প্রণয়ন, বিচারকদের জন্য আচরণবিধি ও বদলি নীতিমালা প্রণয়ন এবং বিচারকদের মর্যাদা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে নির্বাহী কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে এসবের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনতে সুপারিশ করা হয়েছে।
আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ
সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনীর মাধ্যমে রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগীয় সদরে হাই কোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
উপজেলা সদরের ভৌগলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, জেলা-সদর থেকে দূরত্ব ও যাতায়াত ব্যবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিন্যাস এবং মামলার চাপ বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন উপজেলায় জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ ও প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত স্থাপন করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
স্থায়ী সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস
প্রতিবেদনে স্থায়ী সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন করতে বলা হয়েছে, যেখানে এই সার্ভিসের জন্য সুনির্দিষ্ট কাঠামো, নিয়োগ পদ্ধতি, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা, বেতন কাঠামোসহ আর্থিক সুবিধা এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে যথাযথ বিধান প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থায়ী স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস
আইন দ্বারা বর্তমানে বিভিন্ন তদন্ত ইউনিটে নিয়োজিত জনবলের সমন্বয়ে একটি পৃথক তদন্ত সার্ভিস গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংবিধান-সংশোধন
সংবিধানের বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮(ক), ৫৫(২), ৯৪ ও ৯৫ অনুচ্ছেদ সংশোধন এবং নতুন বিধান ৯৫ক অনুচ্ছেদ সংযোজন করতে বলা হয়।
অধস্তন আদালতের সাংগঠনিক কাঠামো
মামলা ও জনসংখ্যার আলোকে অধস্তন আদালতের বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা; একই ধরনের আদালতের জনবল কাঠামো এবং যানবাহন ও অফিস সরঞ্জমাদির ধরনে অভিন্নতা আনা এবং বিচারকদের পদ
সৃষ্টিতে পদ্ধতিগত জটিলতা দূর করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে।
এছাড়া একই গ্রেডভুক্ত সহায়ক কর্মচারীদের জন্য একই ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে একই পদ্ধতিতে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের বাজেট নির্ধারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের একটি কমিটি থাকবে এবং সেই কমিটিতে নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধিরা সদস্য হিসেবে থাকবেন।
বরাদ্দ বাজেট স্বাধীনভাবে খরচ করা এবং তা উপযোজন এবং পুনঃউপযোজনের পরিপূর্ণ ক্ষমতাসহ সুপ্রিম কোর্টের জন্য উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিচার কার্যক্রমে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
এ বিষয়ে প্রথম পর্যায়ে বিচার কার্যক্রমে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন; ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়ন; দেওয়ানি আদালতে ই-ফাইলিংয়ের কার্যক্রম শুরু; ই-ফাইলিংয়ের মামলাগুলোকে কোর্ট-ফি হ্রাস/ছাড় ও ফাস্ট ট্র্যাকের মাধ্যমে দ্রুত শুনানি ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া সকল আদালতে বর্তমান ব্যবস্থার পাশাপাশি ই-পেমেন্টের মাধ্যমে ই-ফাইলিংসহ সকল কোর্ট-ফি, খরচ, জরিমানা ও অন্যান্য ফি পরিশোধের ব্যবস্থা চালু করা; শতভাগ মামলার তথ্য ই-কজলিস্ট মডিউলের মাধ্যমে প্রদর্শনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অধস্তন আদালতের ভৌত অবকাঠামো
ভবন নির্মিত হয়নি এমন ৩৭টি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ভবন নির্মাণের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নিতে বলেছে সংস্কার কমিশন।
বাংলাদেশের ৬৪ জেলা সদরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় যে ২৩টি জেলায় এখনও ভবন নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়নি সেগুলো নির্মাণে কার্যক্রম নিতে বলা হয়েছে।
দেশের ২০টি জেলার আওতাধীন ৩৪টি উপজেলায় ৫১টি চৌকি আদালতের জন্য পৃথক ভবন নির্মাণ; জেলা জজ আদালতের আওতাধীন ৬৬টি এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আওতাধীন
৬৪টি আদালতের জন্য জরুরি ভিত্তিতে এজলাস নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।
আদালত ব্যবস্থাপনা
এ অধ্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের জন্য নয়টি এবং অধস্তন আদালতের জন্য চারটি সুপারিশ করা হয়েছে।
বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি লাঘব
বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি লাঘবের জন্য বিচারকদের ছুটি, বিভিন্ন দিবস উদযাপন, আদালতে প্রকাশ্যে পরবর্তী তারিখ ঘোষণা না করা, আইনজীবীর মৃত্যুতে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রাখা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বিচারপ্রার্থীরা যে হয়রানির শিকার হন, তার প্রতিকার বিধানের সুপারিশ করা হয়েছে।
বিচার বিভাগে দুর্নীতি প্রতিরোধ
বিচার বিভাগে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য সাতটি সুপারিশ করেছে কমিশন।
আইনগত সহায়তা কার্যক্রম
আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ রহিত করে আইনগত সহায়তার পাশাপাশি মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতার বিধান সম্বলিত একটি সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করছে।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি
মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা ও মামলা পরবর্তী মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে পরিচালনার কার্যপ্রণালীসহ অন্যান্য পদ্ধতিগত বিষয় নির্ধারণের জন্য বিধিমালা প্রণয়ন করা; মধ্যস্থতাকারীদের ফি পরিশোধের বিধান ও নিয়মাবলি সম্বলিত নীতিমালা প্রণয়ন করাসহ চারটি সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মামলাজট হ্রাসকরণ
অধিক সংখ্যক ফৌজদারি আপিল, ফৌজদারি রিভিশন, দেওয়ানি আপিল ও দেওয়ানি রিভিশন নিষ্পন্নাধীন আছে এমন জেলাগুলোতে অবসরপ্রাপ্ত সৎ, দক্ষ এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জেলা জজদের ২/৩ বছর মেয়াদে
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গ্রাম আদালতের সমস্যা দূরী করার উদ্যোগ
গ্রাম আদালত গঠনের ক্ষেত্রে সমস্যা দূরীকরণ এবং গ্রাম আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম বিচারিক মান রক্ষার জন্য করণীয় নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
আইনের সংস্কার
ফৌজদারি আইনে বিদ্যমান জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি এবং জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেটদের শাস্তি প্রদান ও জরিমানা করার এখতিয়ার বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়েছে।
মোবাইল কোর্ট
আপিল বিভাগের বিচারাধীন মামলার সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে মোবাইল কোর্টের দণ্ড প্রদানের ক্ষমতা সংশোধন করে শুধু জরিমানা প্রদানের বিধান করা এবং বিভিন্ন আইনে বর্ণিত ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মোবাইল
কোর্ট পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিচারক ও সহায়ক জনবলের প্রশিক্ষণ
বিচারক ও সহায়ক জনবলের প্রশিক্ষণের জন্য একটি জাতীয় জুডিশিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠা; আঞ্চলিক পর্যায়ে জুডিশিয়াল ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন; বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন এবং বিচারকদের জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণ/কর্মশালা/অভিজ্ঞতা বিনিময় কর্মসূচি গ্রহণের সুপারিশ করে কমিশন।
আইন পেশার সংস্কার
আইনজীবীদের সনদপ্রাপ্তির পরীক্ষার সিলেবাসে নতুন আইন সংযোজন; পেশাগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে একটি স্থায়ী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন; পেশাগত বিধিমালা যুগোপযোগী করার সুপারিশ করা হয়েছে।
পাশাপাশি আইনজীবী সমিতিগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার কথা বলেছে কমিশন, যাতে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর ‘উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহৃত না হয়।
আইন শিক্ষার সংস্কার
এ সংক্রান্ত সুপারিশে রয়েছে, আইন শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন দেখভালের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্থায়ী ও স্বতন্ত্র আইন শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা। ওই বোর্ড আইন শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে।
মাধ্যমিক শ্রেণিতে আইন ও মানবাধিকার বিষয়ে নিবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করা এবং উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে আইনকে একটি বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করারও সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ
মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ বিষয়ে একটি বাস্তবানুগ আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে নিবিড় ও ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রে এমন অনেক অপরাধ সংঘটিত হয় যার বিচার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপেক্ষিত থাকে। এসব অপরাধের প্রতিকার না হওয়ায় অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকে এবং আইন মানার প্রতি সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের কোনো দায়িত্ববোধ জন্মায় না।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং পরবর্তীতে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করে।
বিচারাঙ্গনকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করা
বিচারাঙ্গনকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী বা অন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের সব ধরনের সভা-সমাবেশ বা মিছিল নিষিদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন এবং বিচারাঙ্গনে আইনজীবীদের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকে নিরুৎসাহিত করা এবং বার সমিতি নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন
কমিশন বলছে, অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনতে সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন ঘটানো প্রয়োজন; এই উদ্দেশ্যে পরিবার, স্কুল, কলেজ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নত নৈতিকতার চর্চা ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
পুরনো খবর