“অনেক যাত্রী স্টেশনে আটকা পড়েছেন। তারা আমাদের কাছে জানতে চাইছেন কখন ট্রেন ছাড়ব। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব ঝামেলায় আছি।”
Published : 03 Feb 2025, 10:21 PM
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধের কারণে কমলাপুর স্টেশনে আটকে পড়া যাত্রীরা স্টেশন ম্যানেজার মো. শাহাদাত হোসেনকে অবরুদ্ধ করেছেন।
কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সোমবার রাত ৯টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আটকেপড়া যাত্রীরা ট্রেন ছাড়ার জন্য তাকে চাপ দিচ্ছেন।
“মহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করার পর রাত সোয়া নয়টা পর্যন্ত কমলাপুর থেকে ১৬টা ট্রেন যেতে পারেনি। অনেক যাত্রী স্টেশনে আটকা পড়েছেন। তারা আমাদের কাছে জানতে চাইছেন কখন ট্রেন ছাড়ব। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব ঝামেলায় আছি।”
কমলাপুরে যাত্রীদের হাঙ্গামার সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিতুমীর শিক্ষার্থীদের আলোচনা চলছিল। পরে মন্ত্রণালয়ের একগুচ্ছ আশ্বাসে রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন ৭ দিনের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন।
পরে কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার জানান, রাত ১০টা থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
এর আগে বিকাল ৪টার দিকে তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধে টঙ্গী জংশন হয়ে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
রেলপথ অবরোধের কারণে কমলাপুরসহ বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি ট্রেন আটকে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মহাখালীতে রেললাইন অবরোধের পর বিকাল পৌনে ছয়টা পর্যন্ত ছয়টি ট্রেন আটকে থাকে।
“সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, কালনী, জামালপুর কমিউটার, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসসহ ছয়টি ট্রেন এখন পর্যন্ত ছাড়া যায়নি। একইভাবে ঢাকায় প্রবেশ করবে এসব ট্রেনও বিভিন্ন স্টেশনে আটকে আছে।”
ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। রাতে কমলাপুর স্টেশনে হাজারও যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন।
সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের যাত্রী মকবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ট্রেন ছাড়ার কথা পৌনে তিনটায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ট্রেন ছাড়ছে না। বলতেও পারছে না কখন ট্রেন ছাড়বে। ভাই কি ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি।”
বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকাগামী ট্রেন আটকা পড়ে বিভিন্ন স্টেশনে।
কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে থামিয়ে দেওয়া হয় রাত নয়টার দিকে।
ওই ট্রেনের যাত্রী আহমেদ আলী ইমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত নয়টায় ট্রেনটি নরসিংদী স্টেশনে এসে আটকে যায়। বলেছে বিলম্ব হবে। যারা নামতে চায় তারা নেমে অন্যকোনোভাবে ঢাকায় চলে যেতে পারেন। ঢাকার বাইরের কোনো ট্রেন ঢাকায় প্রবেশ করতে পারছে না।”
রেল লাইন অবরোধ করার আগে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা কলেজের মূল ফটকের সামনে বাঁশ ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। সেখান থেকে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাখালী রেল ক্রসিংয়ে যান। অনশনরত শিক্ষার্থীরা এই মিছিলের সামনে হুইল চেয়ারে করে অংশ নেন।
শিক্ষার্থীরা মহাখালী রেলক্রসিংয়ে রেললাইনের ওপর বসে পড়লে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি নাখালপাড়ার দিকে আটকা পড়ে। পরে সেটিকে পিছিয়ে তেজগাঁও রেলস্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঢাকা থেকে প্রতিদিন ৪৩ জোড়া আন্তঃনগর এবং ২৫ জোড়া মেইল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনের সময়সূচী অনুযায়ী রোববার বিকালের পর থেকে রাত পর্যন্ত লালমনি এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, টিত্রা এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, চিলাহাটি এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেস, এগারো সিন্ধুর গোধুলী, হাওর এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম মেইল, সুরমা মেইল, তিতাস কমিউটার, ঈশাখাঁন এক্সপ্রেস, ভাওয়াল এক্সপ্রেস, তুরাগ কমিউটার ট্রেন ঢাকার কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা।
এর আগে ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি জয়নাল আবেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, মহাখালী এলাকায় রেললাইন অবরোধের কারণে বিকাল ৪টা থেকে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আন্দোলনকারীরা শুরুতে লেভেল ক্রসিংয়ের দুই পাশ আটকালেও কিছুক্ষণ পর পুলিশের অনুরোধে এক পাশ খুলে দেন। কিন্তু পরে আবার শিক্ষার্থীরা দুই অংশই আটকে দেন।
বনানী থানার ওসি রাসেল সারোয়ার বলেন, “তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা রেল ক্রসিংয়ে অবস্থান নেওয়ায় রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জাহাঙ্গীর গেইটগামী ও জাহাঙ্গীর গেইট থেকে বনানীর দিকে আসা গাড়িগুলো ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করছে।”
রেলগেইটের পূর্ব অংশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও বিজিবির সদস্য অবস্থান দেখা গেছে। অদূরেই দেখা গেছে জলকামান।