রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা ‘অত্যন্ত গর্হিত কাজ’: প্রধানমন্ত্রী

ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে সবাইকে হুঁশিয়ার করেছেন শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2023, 10:56 AM
Updated : 16 March 2023, 10:56 AM

রোজার মাসে ‘কালোবাজারি, মজুদদাররা’ যাতে বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি করতে না পরে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পণ্যের সংকট সৃষ্টির চেষ্টাকে ‘গর্হিত কাজ’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বরিশালের আগৈলঝাড়া, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তৃতীয় ধাপে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এক সপ্তাহ পর শুরু হতে যাওয়া রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে তিনি কথা বলেন বলে বাসস জানিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “রমজান মাসকে সামনে রেখে কিছু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে, যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। খাদ্যে ভেজাল দেওয়া, মজুদদারি বা কালোবাজারি এবং নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি, এটা যেন কেউ করতে না পারে, সেজন্য সকলকে আমি সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানুষ যাতে ভালভাবে তাদের ধর্মকর্ম এবং রোজা পালন করতে পারে সেদিকেই সবার দৃষ্টি দেয়া উচিত।.. দাম বাড়িয়ে মানুষকে বিপদে ফেলার কারও মানে হয় না।”

কালোবাজারির বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামদের বক্তব্য রাখতেও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “তাহলে মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত মুনাফা নেওয়ার প্রবণতা নিশ্চই কমবে।”

নিম্ন আয়ের মানুষের সুবিধার জন্য নিত্যপণ্য কেনাকাটায় সরকার ’পারিবারিক’ কার্ডের ব্যবস্থা করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা জানান, বেশি দাম চাল কিনে ৩০ টাকা দরে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। রোজাকে সামনে রেখে আরও ১ কোটি মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দামে চাল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া একেবারে কর্মক্ষমতাহীনদের বিনাপয়সায় ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।

‘ধর্ম নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না হয়’

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইসলাম নিয়ে নেওয়া উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদ দাওরায়ে হাদিস এর সনদকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়া দেওয়া, বায়তুল মোকাররমসহ গুরুত্বপূর্ণ মসজিদগুলোর আধুনিকায়ন, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন, মসজিদ পাঠাগার স্থাপনের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা জাতীয় শিক্ষা নীতিতে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা এবং মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমকে জাতীয় শিক্ষা নীতির অন্তর্ভুক্ত করেছি। শরীয়ত সম্মতভাবে যাকাত সংগ্রহ, বিতরণ, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার এ বছর ‘যাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের চাওয়া দেশে ইসলাম ধর্ম নিয়ে যেন ‘বাড়াবাড়ি’ না হয় এবং মানুষ প্রকৃত ইসলামিক শিক্ষা পায়, সে ব্যবস্থা করা।

“সবার মনে রাখতে হবে এই দেশে সব ধর্মের মানুষ যে যার ধর্ম পালন করে সমান রাষ্ট্রীয় অধিকার ভোগ করবে।”

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তের ওই অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও তথ্যচিত্র দেখানো হয়।

মডেল মসজিদ

সরকার নয় হাজার ৪৩৫ কোটি টাকায় দেশের নানা জায়গায় ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে।

এর আগে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালে; আর চলতি বছরে ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আরও ৫০টি উদ্বোধন করা হয়।

এই নিয়ে দেশে ১৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন শেখ হাসিনা।

বাকি মসজিদগুলোর নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের জুন মাস নগাদ শেষ হবে বলে আশা করছে সরকার।

৪০ থেকে ৪৩ শতাংশ জায়গার উপর তিনটি শ্রেণিতে মসজিদগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় চারতলা ৬৯টি মসজিদের প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার।

উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মসজিদের প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার।

উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদের প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার। দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য এর নিচতলা ফাঁকা থাকবে।

জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিটি মসজিদ নির্মাণে ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা, উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।