মহাসমাবেশ পণ্ডের মধ্যেই হরতাল ডাকে বিএনপি; পরে কয়েক স্থানে বাসে দেওয়া হয় আগুন।
Published : 28 Oct 2023, 09:27 PM
বিএনপির মহাসমাবেশে নেতাকর্মীদের জমায়েতের মধ্যেই নয়াপল্টনের অদূরে শুরু হওয়া সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েকস্থানে; পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়ায় কাকরাইলসহ পুরো এলাকা হয়ে পড়ে রণক্ষেত্রে।
সমাবেশ পণ্ডের মধ্যেই হরতাল ডাকে বিএনপি; পরে কয়েক স্থানে বাসে দেওয়া হয় আগুন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও হামলায় নিহত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্য; আহত হয়েছেন পুলিশ, বিএনপি নেতাকর্মীসহ সংবাদমাধ্যম কর্মীরা।
একই দিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ঘিরে উদ্বেগ-আলোচনার মধ্যে আগের রাতে ও সকালের ভাগে নয়াপল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় নেতাকর্মীদের সরব যে অবস্থান ছিল, তা সংর্ঘষের পর পাল্টে যায়; রূপ নেয় রণক্ষেত্রে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাকরাইল থেকে বিজয়নগর, সেগুন বাগিচা, সিদ্ধেশ্বরী, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, দৈনিক বাংলা, কাকরাইল মোড়ের আশপাশ, জাজেজ কোয়ার্টারস, রাজমনি মোড, আইডিবি ভবন, অডিট ভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে, শান্তিনগর, ডিসি রমনা ট্রাফিক অফিসের সামনেসহ মতিঝিল, পুরানা পল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের পর যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুরো এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে। সংঘর্ষের এ দিনে রাজধানীর বেশ কয়েক জায়গায় বাসে, অ্যাম্বুলেন্সে ও মোটরসাইকেলে আগুনও দেয় দুর্বৃত্তরা।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক জানান, কাকরাইল মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর রাজধানীর শাহজাহানপুর, শান্তিনগর, মালিবাগ, কমলাপুরসহ অন্তত ১৫টি জায়গায় বাস ও যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। তাদের টিম পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।
কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়ে একদল লোক কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। এসময় কাকরাইল মোড়ে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ও আইডিইবি ভবনে রাখা একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের সামনে ৬-৭টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাস দুটিতে আগুন দেওয়া হয়। রাজধানীর মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারে বলাকা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। কমলাপুরে বিআরটিসির একটি বাসেও আগুন দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের ৪১ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একজন নিহত হয়েছে। ওই পুলিশ সদস্য দৈনিক বাংলা মোড় এলাকায় দায়িত্বরত ছিলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাড়িসহ সরকারি স্থাপনায় হামলা করেছে। সরকারি স্থাপনায় হামলা ও গাড়িতে আগুনের ঘটনায় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাকরাইলে সংঘর্ষস্থলে গিয়ে তিনি জানান, শর্ত সাপেক্ষে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পর বিএনপির কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে করার কথা থাকলেও হঠাৎ করে বেলা ১২টার পর থেকে দেখা গেল তারা প্রধান বিচারপতির বাড়ির ফটকে ও জাজেস কোয়ার্টারের সামনে আক্রমণ করেছে। আইডিবি ভবনের সামনে দুটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
সংঘর্ষের সূত্রপাত
শনিবারের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আগের রাত থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় জমায়েত হতে শুরু করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে দলে তারা আসছিলেন। দুপুরের দিকে পায়ে হাঁটা মানুষের স্রোত যাচ্ছিল নয়াপল্টনের দিকে।
এরমধ্যে দুপুর ১টার দিকে গাজীপুর থেকে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে আসা দুটি বাস কাকরাইল মসজিদ মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ। নেতাকর্মীদের নেমে বাকি পথ হেঁটে সমাবেশে যেতে বলেন পুলিশ সদস্যরা। তবে নেতাকর্মীরা বাস নিয়েই বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের সমাবেশে যোগ দিতে চায়। এ নিয়ে বাদানুবাদ চলছিল।
এসময়ই সেদিক দিয়ে নয়াপল্টনের সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা বাস দুটির দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। লাঠিসোটা নিয়ে বাস দুটিতে হামলাও করে। এতে কিছুটা অপ্রস্তুত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যে যেদিকে পারে দৌড় দেয়। কয়েকজন ঢুকে পড়েন বিচারকদের আবাসিক এলাকায়। তাদের ধাওয়া করে সেখানে যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এক পর্যায়ে সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে। সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ পেয়ে নয়া পল্টন থেকে আরও কয়েকশ নেতাকর্মী এসে সংঘর্ষে যোগ দেয়। এসময় সংঘাতে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীরা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে আগুন দেয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় কাকরাইল মসজিদ মোড়ের ট্রাফিক পুলিশ বক্সটি। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গার্ড রুমের কাঁচও ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাকরাইল মসজিদ মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে সেখানে অবস্থান নেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে সার্কিট হাউজ রোড জুড়ে। ঘণ্টাখানেক সংঘর্ষের পর পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। এসময় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যও আহত হন।
বেলা সোয়া ২টার দিকে সেখানে সাত গাড়ি বিজিবি আসে। একটু পরেই মিন্টু রোড থেকে দল বেঁধে হেঁটে নয়াপল্টনের দিকে যেতে দেখা যায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের শতাধিক সদস্যকে। ততোক্ষণে সংঘর্ষে ছড়িয়েছে নয়াপল্টন এলাকায়। ওদিক থেকে বিস্ফোরণের শব্দ আসছিল।
বেলা পৌনে ৩টার দিকেই বিএনপির সমাবেশ থেকে নেতারা সরে যান, পণ্ড হয়ে যায় সমাবেশ। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে কাকরাইল, ফকিরাপুল, বিজয়নগর, সেগুন বাগিচা, সিদ্ধেশ্বরী, শান্তিনগর এলাকায়।