এছাড়া বেশিরভাগ কেন্দ্রে নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি।
Published : 07 Jan 2024, 01:34 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর প্রথম দুই ঘণ্টায় মিরপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা গার্লস হাই স্কুল কেন্দ্রে ভোট পড়ে ছয়টি। এ কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৮৮৭ জন। পাশের নন লোকাল কেন্দ্রে একই সময়ে ভোট পড়ে ৯টি। এই দুই কেন্দ্র মিলিয়ে ভোটার পাঁচ হাজারের বেশি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সকাল থেকে দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত ঢাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হলেও অধিকাংশ কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি ছিল কম।
বিএনপিসহ সমমনাদের ভোট বর্জনের মধ্যে রোববার সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। এর আগে ভোরে ৫টার দিকে ব্যালট পেপার বুঝে নেন কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা
অল্প কিছু কেন্দ্রে ভোটদানের সময় শুরুর আগে থেকেই ভোটাররা হাজির ছিলেন। তবে ঢাকা-১৭, ঢাকা-১৫, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১০, ঢাকা-৪ সহ বিভিন্ন আসনের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের লাইন বা কেন্দ্রে ঢোকা-বের হওয়ার ভিড় দেখা যায়নি।
ভোটাররা কেন্দ্রে ঢুকে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছেন। ভিড় না থাকায় কেন্দ্রগুলোতেও কাজের ব্যস্ততা ছিল না প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের। আবার অনেক জায়গায় কেন্দ্র খুঁজে পেতেও বিপাকে পড়েন ভোটররা।
বেশিরভাগ কেন্দ্রে নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি।
প্রথম দুই ঘণ্টায় ৬ ভোট
ঢাকা-১৬ আসনে মিরপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা গার্লস হাইস্কুল কেন্দ্রে আটটি কক্ষে ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল ৮টায় ভোট শুরুর প্রথম দুই ঘণ্টার মধ্যে ছয়জন ভোটার ভোট দেন।
কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার মিজানুর রহমান মনে করছেন, শীতের কারণেই এ অবস্থা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বেলা বাড়ার সাথে সাথে হয়ত ভোটার সংখ্যাও বাড়বে।”
কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেল নৌকার এজেন্ট ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর এজেন্ট নেই।
কক্ষে পড়ল না একটিও ভোট
পাশের নন লোকাল স্কুল কেন্দ্রের দুই নম্বর কক্ষে প্রথম দুই ঘণ্টায় পড়েনি একটিও ভোট। ওই কক্ষে গিয়ে দেখা যায় পোলিং অফিসার ও পোলিং এজেন্টরা বসে নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করছেন।
পোলিং অফিসার শেফালি বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের এখানে এখনো আসেনি কেউ। আসবে হয়ত পরে। শীতের দিন, সবাই ঘুমাচ্ছে।”
এই কেন্দ্রে প্রথম দুই ঘণ্টায় ৯টি ভোট পড়েছে জানিয়েছে প্রিজাইডিং অফিসার কাজী মো. সিকান্দার রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাস্টিং বোঝা যাচ্ছে না। আরো বাড়তেও পারে সময় বাড়ার সাথে সাথে।”
এই কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ১৭১ জন, যার সবাই নারী।
নন লোকাল কেন্দ্রে নৌকা, ঈগল, আম ও একতারা ছাড়া বাকি প্রতীকগুলোর এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
ঢাকা-১৬ আসনের প্রার্থীরা হলেন- মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ (নৌকা), মো. আমানত হোসেন (লাঙ্গল), মো. তরিকুল ইসলাম (আম), মো. তহিদুল ইসলাম (একতারা), মো. সজীব কায়সার (টেলিভিশন), সালাউদ্দিন রবিন (ঈগল)।
কেন্দ্রের খোঁজে ভোটাররা
ষাটোর্ধ্ব জাহানারা বেগমের স্লিপে লেখা তার কেন্দ্র পড়েছে মিরপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা গার্লস হাইস্কুলে। কিন্তু কেন্দ্রে এসে দেখেন স্লিপের তথ্য মিলছে না। ফলে ভোট না দিয়েই চলে যেতে হয় তাকে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জাহানারা বলেন, “দিতে তো আইছিলাম ভোট। আইয়া হুনি মিলে না আমার নম্বর। এখন কী আর করার, যাইগা।”
একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় নবীন ভোটার ফাহমিদা ইসলামেরও।
তিনি বলেন, “প্রথম ভোট দিতে আসছিলাম আনন্দ নিয়ে; তাই সকাল সকালই চলে এলাম। কিন্তু এসে আর ভোট দিতে পারলাম না। একটু তো খারাপ লাগবেই।”
ফেরদৌস হাসান নামের এক ভোটার জানালেন, তার প্রতিবেশি এক নারীর স্লিপে লেখা কেন্দ্রের নাম ‘নন লোকাল স্কুল’, একই তথ্য জানিয়েছে ইসির অ্যাপ ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি অ্যাপও’। কিন্ত ‘নন লোকাল স্কুলে ভোটার তালিকায় এই নারীর নাম নেই।
তিনি বলেন, “বৃদ্ধ মানুষের ভোগান্তি হল, আমিও খুঁজলাম কাজ হল না।”
ভোটারদের ভোগান্তির বিষয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা গার্লস হাইস্কুলের প্রিজাইডিং অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, “কার কোথায় ভোট কেন্দ্র পড়েছে সে সহায়তা করার কোন দিক নির্দেশনা আমরা পাইনি। তাই ভোটারদের আমরা কোন সহায়তা করতে পারছি না।”
পৌনে দুই হাজার ভোোরের বিপরীতে ভোট ৩০
ঢাকা-১৭ আসনে মিরপুরে সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে একটি মহিলা ভোটকেন্দ্রে ভোট শুরুর প্রথম ঘণ্টায় ব্যালট বাক্সে ভোট পড়ে ৩০টি। এই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮৭৩টি।
ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই আরকেটি একটি মহিলা কেন্দ্রের মোট ভোটার ১৮৫২টি এবং অপর দুটি পুরুষ ভোটকেন্দ্রের ভোটার যথাক্রমে যথাক্রমে ১৭৮৮ ও ১৮২০ জন।
হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে চারটি কেন্দ্রের একটি মাত্র প্রবেশ পথ থাকলেও সেখানে ভোটারের আসা যাওয়ার ভিড় দেখা যায়নি।
এখানকার একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কেন্দ্রে একতারা প্রতীক ও নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্ট এসেছেন। অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট আসেননি। তবে ভোটারদের ভোট দিতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।“
এই কলেজের একটি কেন্দ্রে গিয়ে বেলুন ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে পাওয়া যায়। সেখানে একতারা প্রতীকের কোনো এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন না।
আছে কেবল নৌকার এজেন্ট
সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা-১৫ আসনের পূর্ব শেওড়াপাড়ার হাজী আশরাফ আলী হাই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুরুষ মহিলা মিলিয়ে ভোটকেন্দ্র আছে সাতটি; এই সাত কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৬৪।
এই কেন্দ্রের প্রধান ফটকে প্রায় ১০ মিনিট সময় দাঁড়িয়ে পাঁচজন ভোটারকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
পরে ভেতরের বিভিন্ন কেন্দ্র ও বুথে গিয়ে দেখা যায়, ভোট গ্রহণ সংশ্লিষ্টরা সবাই সুশৃঙ্খলভাবে বসে আছেন। ভোটার না থাকায় তাদের মধ্যে কাজের কোনো ব্যস্ততা নেই।
সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা ১৫ আসনের মনিপুর বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েও নৌকার প্রার্থীর এজেন্ট ও সমর্থক ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে দিনের শুরুতে দুয়েকজন ভোটারকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
ভোট শুরুর আধা ঘণ্টায় নেই একজনও ভোটার
ঢাকা ঢাকা- ১৪ আসনের কামাল আহমেদ মজুমদার স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। কিছুক্ষণ পরপর একজন-দুইজন এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। এই স্কুল ও কলেজের দুটি ভবনে দুটি কেন্দ্র, ভোটার প্রায় ছয় হাজার। এই কেন্দ্রেও কেবল নৌকার এজেন্টই ছিলেন।
কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সুমিত কুমার বলেন, “ভোর ৫টার দিকে আমরা ব্যালট বুঝে পেয়েছি। এরপর সংশ্লিষ্ট জনবল নিয়ে ৮টায় ভোট কার্যক্রম শুরু করি। প্রথম আধা ঘন্টা পর্যন্ত ভোট একদমই পড়েনি।”
তবে ভোট কতটি পড়েছে সেটি তিনি জানাতে পারেননি।
সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিয়োজিত প্রিজাইডিং অফিসার ফায়জুস সালেহীন বলেন, মিরপুর বাংলা কলেজ থেকে রোববার রাত ৩টা থেকে ব্যালট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ভোর পৌনে ৫টার দিকে তারা কেন্দ্রের ব্যালট যথাযথভাবে বুঝে পেয়েছেন। সকাল ৮টা থেকে যথানিয়মে ভোট গ্রহণ শুরু করেছেন।
তবে সকালের প্রথম ঘণ্টায় ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল বলে জানান তিনি।
ঢাকা-১০ আসনের নৌকার টিকেটে ভোটের লড়াইয়ে নামা চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ ভোট দিয়েছেন ঢাকা-১৭ আসনের ভাষানটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
ওই কেন্দ্রেও ভোটার উপস্থিতির কম থাকার কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের ফেরদৌস বলেন, “ভোটের পরিবেশ খুবই সুন্দর। বাড়াবাড়ি নেই, কোথাও কোনো ঝামেলা দেখিনি। লোকজন একটু স্লো আসছে। ৮টায় ভোট শুরু হয়েছে তো, সাধারণত যেটা দেখি ১০টার পর একটু ভিড় বাড়ে। ভোটার উপস্থিতিও ধীরে ধীরে বাড়ছে।“
বেলা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৩৬ ভোট
পুরান ঢাকার শ্যামপুরের ফরিদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, এ কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার ৩ হাজার ৩৯০ ও নারী ভোটার ৩ হাজার ৩২৪টি।
সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পুরুষ কেন্দ্রে ৫৫টি ভোট পড়েছে জানিয়েছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন।
এ স্কুলের নারী কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দেবব্রত মণ্ডল জানিয়েছেন বেলা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৩৬ জনের ভোট পড়েছে।
দুই ঘণ্টায় তিন কেন্দ্রে ভোট পড়ল ২৭৭টি
যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর ও সূত্রাপুরের আংশিক, ডেমরা এবং কদমতলী এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৪ আসনের গেন্ডারিয়া আইজিগেট এলাকায় তিন কেন্দ্রে প্রথম দুই ঘণ্টায় মোট ভোট পড়েছে ২৭৭টি। তিনটি কেন্দ্রে নারী পুরুষ মিলিয় ভোটার সাত হাজার ২৫৬ জন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, “ভোট হার তিন দশমিক ৮২ শতাংশ।”
কেন্দ্র-২ তে মোট দুই হাজার ৬৪৬ ভোটারের মধ্যে মধ্যে সকাল ১০টা পর্যন্ত ১১৫টি ভোট পড়েছে বলে জানান
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জয়ন্ত সেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার কেন্দ্রটি নারী ভোটারদের জন্য। বেলা ১০টা পর্যন্ত ভোটের হার পড়েছে চার দশমিক ৩৪ শতাংশ।’’
কেন্দ্র-৩ এর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নারী-পুরুষ মিলিয়ে চারটি বুথে ভোট সংখ্যা হচ্ছে এক হাজার ৭৭২। বেলা ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে বেলা ১০টা পর্যন্ত ৩৪টি। ভোটের হার এক দশমিক ৯২ শতাংশ।
এ কেন্দ্রে ভোটের উপস্থিতি কম হলেও বাইরের গেটে বিভিন্ন প্রার্থীর লোকজন ছিল চোখে পড়ার মত। তিন জায়গায় টেবিল বসিয়ে ভোটারদের তথ্য জানিয়ে দিচ্ছিলেন এই আসনের প্রার্থীরা কর্মীরা। বিভিন্ন স্থান থেকে ভোটারদের রিক্সায় করে আনতেও দেখা গিয়েছে বিভিন্ন প্রার্থীদের কর্মীদের।
মিরপুরের কাজীফরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা স্বাগত কুমার সাহা বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত তার কেন্দ্রে ২৭৭ ভোট পড়েছে।
নৌকা ছাড়াও এই কেন্দ্রে লাঙ্গল, দালান, নৌকা কেটলি এবং মশালসহ পাঁচ জন প্রার্থীর এজেন্ট দেখা গেল।
রোববার সকাল ৮টায় জাতীয় সংসদের ২৯৯ আসনে ৪২ হাজার কেন্দ্রে একযোগে শুরু হওয়া ভোট বিরতিহীনভাবে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এরপর শুরু হবে গণনা।