তিন তিনের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ করা না হলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ঢাকা ওয়াসাকে এক চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
Published : 09 Jul 2024, 10:59 PM
এক কর্মকর্তার সই জাল করে লালবাগের শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ সড়ক খনন করার ঘটনায় মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ক্ষোভ প্রকাশের পর ঢাকা ওয়াসাকে প্রায় ১৪ লাখ জরিমানা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
সরকারি একটি সংস্থার পক্ষ থেকে আরেকটি সংস্থাকে জরিমানার বিরল এই ঘটনাটির বিষয়টি মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি আকারে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বিনা অনুমতিতে সড়ক খনন ফির ৫ গুণ হিসেবে জরিমানা ঠিক হয়েছে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৫১৫ টাকা। ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেবে যোগ হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭৭ টাকা। সব মিলিয়ে জরিমানা ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৯২ টাকা।
নাছের জানান, সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী মিঠুন চন্দ্র শীল জরিমানা আরোপ সংক্রান্ত বিষয়ে সোমবার একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে। ঢাকা ওয়াসা সে চিঠি গ্রহণও করে।
চিঠিতে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে চালান পে-অর্ডারের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের খনন তহবিলে টাকা জমা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
নাছের বলেন, “অন্যথায় বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
রাজধানীতে পানি ও পয়নিষ্কাষণের জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত সংস্থাটির উপ জনতথ্য কর্মকর্তা মোস্তফা তারেকের কাছে প্রশ্ন রাখলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এ বিষয়টি আমার জানা নেই।"
বিজ্ঞপ্তি এসেছিল আগের দিনও
এই সড়ক খননের বিষয়টি নিয়ে আগের দিন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল।
সোমবার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুমতি না নিয়ে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সই জাল করে রাজধানীর লালবাগের শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ সংলগ্ন রাস্তা খনন করছিল ঢাকা ওয়াসা। বিষয়টি নজরে এলে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা খনন করা এলাকায় যান।
সেখানে খননকাজে নিয়োজিত লোকজনের কাছে রাস্তা খননের অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে তারা অনুমতিপত্রও দেখান। পরে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে খননকাজের অনুমতি সম্পর্কে জানানো হলে তিনি অনুমতিপত্র দেখতে চান। তখনই বেরিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটির জালিয়াতি!
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দেখেন যে, তার সই জাল করে ওয়াসার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভুয়া অনুমতিপত্র দেখিয়ে সেখানে রাস্তা খনন করছিলেন। ততক্ষণে অবস্থা বেগতিক দেখে সেখান থেকে সটকে পড়ে খননকাজে নিয়োজিত ঢাকা ওয়াসার কর্মী ও তদারকিতে থাকা লোকজন। পরে খননকাজে ব্যবহৃত মালামাল জব্দ করা হয়।
মেয়র তাপসের ক্ষোভ
এই বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসও।
তিনি বলেন, “একটি সংস্থা কীভাবে আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া কাগজ সৃষ্টির মাধ্যমে এ ধরনের কাজ করে? এটি খুবই ন্যাক্কারজনক, দুঃখজনক। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত কাজে যদি কোনও সংস্থা লিপ্ত হয় তাহলে সমন্বয়ের কোনও সুযোগ থাকে না।”
এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এরই মধ্যে যাত্রাবাড়ী সড়ক খননের জন্য ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ আমাদের চিঠি লিখে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সুতরাং লালবাগের ঘটনায়ও ওয়াসা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে (প্রতিষ্ঠানকে) কালো তালিকাভুক্ত করবে বলে আমি আশা করি।”
বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে জানাবেন উল্লেখ করে মেয়র বলেন, “আমরা আশা করব, মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অনুমতি নিয়ে কী হয়েছিল
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের আওতাধীন লালবাগ খেলার মাঠ (শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ) সংলগ্ন পানির মেইন লাইনে ইলেকট্রনিক প্রেসার রিডিউসিং ভালভ (ই-পিআরডি) স্থাপন কাজের জন্য কয়েক মাস আগে রাস্তা খননের অনুমতি চায় ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
করপোরেশনের ওয়ান স্টপ সেল থেকে এই খননকাজের অনুমতি দেওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে গত ২১ এপ্রিল করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীলের সই করা একটি অনুমতিপত্র ঢাকা ওয়াসার সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাকিম হোসেন বরাবর পাঠানো হয়।
অনুমতিপত্রে ২৪ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল তারিখের উল্লিখিত রাস্তা খনন করতে হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রাস্তা খননের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল তারিখে ২৩ মে পর্যন্ত খননকাজের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ঢাকা ওয়াসা আবেদন করে যা ৩০ এপ্রিল করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পাঠানো হয়।
পরে ঈদুল আজহাসহ নানা কারণে জনভোগান্তির কথা জানিয়ে অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মৌখিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপরও অনুমতি ছাড়া রাস্তা খননের জন্য ঢাকা ওয়াসা থেকে ২ বার উদ্যোগ নেওয়া হলে আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী ২০ মে সংশ্লিষ্ট রাস্তা খনন করা যাবে না বলে চিঠি দেন।
কিন্তু সোমবার দুপুরে নাগাদ করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে খবর আসে যে ওয়াসা সেখানে রাস্তা খনন করছে।
আরও পড়ুন:
ভুয়া অনুমতিপত্রে রাস্তা খনন, ওয়াসার মালামাল জব্দ করল ডিএসসিসি