Published : 19 Nov 2024, 12:53 AM
মামলা দিয়ে যাদের হয়রানি করা হচ্ছে তথ্যপ্রমাণ না থাকলে দ্রুত তাদের নাম বাদ দিতে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার কথা তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “কোন ভুক্তভোগী যদি মামলা দেয়। তাকে তো আমরা বলতে পারি না, আপনি মামলা দিয়েন না। তবে পুলিশকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দ্রুত তদন্ত করে মামলার নামে যাদের হয়রানি করা হচ্ছে তাদের বাদ দেওয়ার জন্য।
”যাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই, তাদের যেন দ্রুত বাদ দেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, “আমরা তো বলেছি ঢালাওভাবে মামলা যাতে না দেওয়া হয়। তবে যে কেউ মামলা দিতেই পারে। কিন্তু যার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই, সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে তাদের যেন বাদ দেওয়া হয়।“
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের অংশীজন। তাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত হবে ১৯৭২ সালের যে সংবিধান হয়েছে সেটি সংশোধন হবে নাকি কি হবে। সেটা ওনারা সিদ্ধান্ত নেবেন।”
সংবিধান সংস্কার নিয়ে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়সহ সবার মতামত নেওয়া হবে, বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে বিএনপি আশাহত- এমন প্রশ্নে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করা নির্বাচনি রোডম্যাপেরই অংশ।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, ”গণমাধ্যমের যে কাঠামোগত পরিবর্তন আমরা চাচ্ছি তার জন্য ভালো একটা প্রতিবেদন ওনারা তৈরি করতে পারবেন বলে আশা করি।”
জেনেভায় আইন উপদেষ্টার নিরাপত্তার গাফলতির বিষয়টি সরকার তদন্ত করছে বলে জানান অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
নতুন দায়িত্ব নেওয়া দুই উপদেষ্টার বিষয়ে অনেকের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “মানুষ তাদের মতামত দিচ্ছে, আমরা দেখছি।”
তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন: ‘আশু সমাধান হবে’
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, “অনেক সমস্যা আছে যেগুলো একদিনে শেষ হয় না। তিতুমীর কলেজের ভাই-বোনদের বলব আপনারা শান্ত হোন। আপনাদের সঙ্গে অবশ্যই কথা হবে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এটার আশু সমাধান হবে।”
দুই একটা কারখানা ছাড়া অন্য কোনো পোশাক কারখানায় অস্থিরতা নেই দাবি করে প্রেস সচিব বলেন, তার প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে। গত মাসে ২১ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘অনেকেই ভালোমত না শুনে একটা হেডলাইন দিয়ে দিচ্ছেন’
মেয়াদ নিয়ে আল জাজিরা টেলিভিশনকে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, “তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন সংবিধানের বিষয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে, সেখানে বলা হচ্ছে সংসদের মেয়াদ চার বছরে আনা হোক। এ প্রেক্ষিতে হচ্ছে, এটা কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে না। তখন ওনাকে জিজ্ঞেস করা হল আপনার ক্ষেত্রেও চার বছর কি না? তারপর বলেছেন চার বছরের কম। এখানে পরিষ্কার করা হয়েছে, চার বছরের কথা বলা হয়নি। আপনারা ভালোমত শোনেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেকেই ভালোমত না শুনে একটা হেডলাইন দিয়ে দিচ্ছেন।”
সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে টিআইবির দেওয়া প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, “দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালে রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। সরকারের উদ্যোগের কারণে ডিমের দাম কমেছে। অন্যান্য দ্রব্যের দামও নিম্নমুখী। গত বছর কাঁচা মরিচের দাম ১২শ টাকা পর্যন্ত হয়েছিল। আমাদের চেষ্টার অন্ত নেই। আমরা দেখলাম দুটো পত্রিকায় আলুর দাম চারশ টাকা। এমন একটা তথ্য দিচ্ছে মনে হচ্ছে মূল আলুর দামই চারশ টাকা। এটা খণ্ডিত চিত্র। মিসলিডিং প্রতিবেদন।”
সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়ে সরকার সচেতন জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “পুলিশের দেওয়া অপরাধ পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে আইনশৃঙ্খলার ভালো উন্নতি হয়েছে। গত বছরের মত। আমরা মনে করি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ভালোর দিকে যাচ্ছে।”
প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যাদেরকে আমরা যোগ্য মনে করছি, যারা কাজগুলো করতে পারবেন, প্রশাসনকে ডায়নামিজম আনতে পারবেন তাদের নেওয়া হচ্ছে। যাদের নেওয়া হচ্ছে তাদের ভালো ট্র্যাক রেকর্ড আছে।”
‘দলীয় পরিচয়ে অনেককে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে’
সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের কারণে নানান আলোচনা-সমালোচনা চলছে, এ নিয়ে সরকারের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ”পিআইডি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল হওয়ায় যেসব সাংবাদিক মনে করছেন তাদের প্রতি অবিচার হয়েছে, তাদের আবার আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। তারা যদি আবেদন করে এবং সরকার যদি মনে তাদের যৌক্তিকভাবে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া যেতে পারে, সেক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে।“
বিগত সরকারের বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৫ হাজার অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেখান থেকে ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। আমরা মনে করি না সংখ্যাটা খুব বেশি। গত সরকারের সময় অনেক দলীয় পরিচয়ে সাংবাদিক অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। তারা এ কার্ডের অপব্যবহার করে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তদবিরসহ নানান কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।”