একদল শিক্ষার্থী পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন; আরেক দল পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন দিচ্ছেন।
Published : 21 Aug 2024, 11:36 PM
একদল শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে স্থগিত হওয়া চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাগুলো বাতিলের সিদ্ধান্তে পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থানে ঢাকার নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা।
পরীক্ষা বাতিলে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে কলেজটির একদল শিক্ষার্থী ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। আর শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন দিচ্ছেন।
এবারের এইচএসসি পরীক্ষা ৩০ জুন শুরু হলেও মাঝে সিলেটে বন্যা এবং কোটা সংস্কার থেকে সরকারপতনের গণআন্দোলনের কারণে কয়েকটি পরীক্ষা কয়েক দফায় পেছানো হয়। স্থগিত পরীক্ষাগুলো আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেজন্য নতুন সূচিও প্রকাশ করেছিল কর্তৃপক্ষ; কিন্তু এর মধ্যে পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার আন্দোলনে নামে।
স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল চেয়ে একদল শিক্ষার্থী প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে। তাদের অনড় অবস্থানের কারণে পরে পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেয় সরকার।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে মঙ্গলবারই নটর ডেম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিচয়ে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। বুধবার এ কলেজের কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে সচিবালয়ের সামনে যান।
তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া, আন্দোলনে আহত পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া ও আহতদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ করার তিন দফা দাবি জানান।
তবে বুধবার বিকালে নটর ডেম কলেজ শিক্ষার্থীদের আরেকটি বিবৃতিতে বলা হয়, “পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত ও যে পদ্ধতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে পরীক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন। নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হলেও বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে প্রস্তুত।
“দেশব্যাপী দুর্যোগ এবং বিভিন্ন পক্ষের সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটানোর আশঙ্কায় পাল্টা কোনো কর্মসূচি দিতে আমরা আগ্রহী নই। বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা একেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের একাংশের মনে অসন্তোষের সৃষ্টি করলেও বৃহত্তর স্বার্থে আমরা আর কোনো পরিবর্তন চাই না। উচ্চতর শিক্ষায় মনোনিবেশ করাই এখন আমাদের লক্ষ্য।”
চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩০ জুন। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে ১৮ জুলাই থেকে পরীক্ষাগুলো স্থগিত হয়ে যায়।
সেই স্থগিত পরীক্ষাগুলো ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেজন্য নতুন সূচিও প্রকাশ করেছিল কর্তৃপক্ষ; কিন্তু এর মধ্যে পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে।
এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার কয়েকশ শিক্ষার্থী সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ দেখায়। তাদের দাবি ছিল, যে কয়টি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, তার ভিত্তিতে এবং স্থগিত বিষয়ের পরীক্ষা এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে ম্যাপিং করে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হোক।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা সিঁড়ি বেয়ে সচিবালয়ের ১৮ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উঠে অবস্থান নেন।
ওই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। বলা হয়, ফলাফল কীভাবে দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।
আরও পড়ুন-
এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষাগুলো আন্দোলনের মুখে বাতিল
এইচএসসির বাকি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে কয়েকশ শিক্ষার্থী
এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল অযৌক্তিক: সারজিস